আগামী ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে এশিয়ার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ বুসান চলচ্চিত্র উৎসব। বরাবরের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরে বসবে ১০ দিনব্যাপী উৎসবটির ২৮তম আসর। এবার উৎসবে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের তিনটি সিনেমা। সিনেমা তিনটি হলো ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’, ‘বলী’ (দ্য রেসলার) ও ‘আগন্তুক’ (দ্য স্ট্র্যাঞ্জার)। তিনটি সিনেমারই প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হবে এ উৎসবে। এশিয়ার প্রতিষ্ঠিত নির্মাতাদের সিনেমা নিয়ে প্রতিযোগিতা বিভাগ ‘জিসুক’-এ লড়াই করবে সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি, অন্যদিকে সম্ভাবনাময় নতুন নির্মাতাদের সিনেমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে বলী ও আগন্তুক। এর আগে ২০২১ সালেও বাংলাদেশের তিনটি সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছিল বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে।
‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ নির্মাণ করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এতে নিজেদের জীবনের বেশকিছু অংশের গল্প সিনেমার আদলে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ফারুকী-তিশা। সিনেমার গল্প একজন খ্যাতিমান নির্মাতা ও জনপ্রিয় অভিনেত্রীর বিয়ে, সংসার, সন্তান নেওয়া এবং সন্তান নেওয়ার পরের স্ট্রাগলসহ নানা দিক নিয়ে। অটোবায়োগ্রাফি বলেই পরিচালনার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। যথারীতি ফারুকীর বিপরীতে আছেন তাঁর সহধর্মিণী অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। মা হওয়ার পর এই প্রথম কোনো সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ফারুকীর সঙ্গে যৌথভাবে সিনেমাটির চিত্রনাট্যও লিখেছেন তিশা।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘২৫ বছর ধরে কাজ করছি। নানা রকম গল্প বলার চেষ্টা করেছি। সেগুলোর একেকটা একেক রকমভাবে মানুষকে স্পর্শ করেছে। কোনোটা বেশি, কোনোটা হয়তো কম। অভিনয় কেমন হওয়া উচিত, কোন গল্প বলা জরুরি—এসব নিয়ে সারাক্ষণই নিরীক্ষা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যে কাজটা কখনোই করার চেষ্টা করিনি, সেটা হলো অভিনয়। সিনেমাটি লেখার সময় থেকেই আমি এবং তিশা দুজনই জানি এখানে আমাদের দুজনকেই অভিনয় করতে হবে। প্রথম দিকে এটা নিয়ে আমার মধ্যে ইতস্তত ভাব ছিল। তিশার কারণেই সহজ হয়েছে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নিতে।’
তিশা বলেন, ‘আমাদের সন্তান ইলহাম হওয়ার পর ক্যামেরার সামনে আমার প্রথম আসা। তাই সিনেমাটি অনেক স্পেশাল। আমার বিশ্বাস, দর্শকেরা সিনেমাটি দেখে হাসবে, কাঁদবে, কখনো রেগে যাবে, কখনো শান্ত হয়ে চিন্তা করবে এবং অনেক অনেক ভালোবাসা দেবে।’
বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ারের পর সিনেমাটি দর্শকের জন্য মুক্তি দেওয়া হবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে।
বুসান উৎসবে জায়গা পাওয়া সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘বলী’ সিনেমাটির পরিচালক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী। এ সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান। বলীতে তিনি থাকছেন সাগরপারের একজন খ্যাপাটে জেলের চরিত্রে। বলী খেলা তার শখ। যে কিনা অদম্য মনোবলে হার মানাতে চায় সাগরটাকেও। গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে বলীর শুটিং হয়েছে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায়। তারও আগে লম্বা সময় নিয়ে চলেছে অডিশন। চট্টগ্রাম ও ঢাকার মঞ্চের একদল নবীন শিল্পী কাজ করেছেন এই সিনেমায়। বুসানে প্রিমিয়ারের পর এ বছরই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্মাতা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এক হিন্দু পরিবারের গল্প নিয়ে ‘আগন্তুক’ নির্মাণ করেছেন বিপ্লব সরকার। সেই বাড়ির ৮০ বছর বয়সী নারী কাননবালা। তার চলাফেরা, কথা বলা, মেজাজ—সবকিছুতেই দোর্দণ্ড প্রতাপ। একসময় তার ছেলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভারতে চলে যায়। কিন্তু থেকে যায় কাননবালা। এরপর তার কী হয়—তা ফুটে উঠেছে গল্পে। আগন্তুকে অভিনয় করেছেন ফেরদৌসী মজুমদার, সাহানা রহমান সুমি, রতন দেব, মাহমুদ আলম এহান, রাফসান, হৃদয়, হাসিমুন্নেসা, নাঈমা তাসনিমসহ অনেকে।