নানা জটিলতার পর শুক্রবার (১২ মে) বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে বলিউডের সিনেমা ‘পাঠান’। শাহরুখ খান ও দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত এ সিনেমাকে ঘিরে সাজ-সজ্জায় চাঙা হয়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ সিনেমা হল মনিহার। দীর্ঘ আট বছর পর এ সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়েছে বলিউডের সিনেমা। জাঁকজমক প্রচারণা চালালেও প্রথম দিনে আশানুরূপ দর্শক টানতে পারেনি সিনেমাটি।
হল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সাধারণত প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের উপস্থিতি বেশি থাকে। কিন্তু এই দিনেও পাঠান সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে টানতে পারেনি দর্শকদের। ছবিটি মুক্তির পরপরই প্রদর্শনের অনুমতি দিলে দর্শককে টানতে পারত। এরপরেও আশাবাদী তাঁরা।
হলের ব্যবস্থাপক তোফাজ্জেল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভালো কোনো সিনেমা না থাকায় হল ব্যবসার নাজুক অবস্থা। হল বাঁচাতে দেশীয় ভালো সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। তা না হলে ভারতীয় সিনেমা আমদানি করতে হবে। হল কর্তৃপক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বছরে ১০টি বলিউডের সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছে। নানা জটিলতায় পাঠান সিনেমা দেরিতে মুক্তি পেল বাংলাদেশে। তবে যেমন আশা করেছিলাম দর্শকের উপস্থিতি সেটা হয়নি। বাংলা সিনেমার মতো গতানুগতিক।’
তোফাজ্জেল হোসেন আরও বলেন, ‘বলিউড সিনেমার পাইরেটেড কপি খুব সহজেই বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে। দেশের দর্শকেরা বলিউডের প্রায় সব জনপ্রিয় সিনেমা দেখছে। তাই ভারতে মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে এসব সিনেমা বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে দর্শক টানবে।’
টিকিট সংশ্লিষ্ট জানিয়েছেন, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা ও সাড়ে ৩টার শোতে দর্শকের ভিড় দেখা যায়নি। মনিহার সিনেমা হলে সামনে ও ভেতরে পাঠান সিনেমার পোস্টার। দর্শকদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। পাঁচটি শোর মধ্যে তিনটিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০০ থেকে ৬০০ দর্শক সিনেমাটি দেখেছেন। সন্ধ্যায় দর্শক বাড়বে এমন আশা করা হলেও সাড়ে ৫০০–এর মতো দর্শক পাওয়া গেছে।
শাহরুখ খানের সিনেমা দেখতে মনিরামপুর থেকে উৎসাহ নিয়ে হলে এসেছিল পাঁচ বন্ধু। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়া বন্ধু সবাইকে দেখা গেল মনিহারে বিভিন্ন সিনেমা পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে। তাঁদের মধ্যে সৈকত নামে একজন বলে, ‘গত ঈদে এসেছিলাম। তবে ভালো সিনেমা ছিল না। শুনলাম শাহরুখ খানের পাঠান চলবে আজ থেকে তাই পাঁচ বন্ধুরা এসেছি সিনেমা দেখতে। ভালোই লাগল সিনেমাটি।’
সেলিম হোসেন ও মুনতাহা মিম নামে নামে দুই দর্শক জানান, প্রথম বলিউড সিনেমা হলে দেখে তাঁদের ভালো লেগেছে।
মনিহার সিনেমা হলের টিকিট কাউন্টার শামীম আনোয়ার বলেন, ‘পাঠান বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে পুরোনো হয়ে গেছে। ছুটির দিন হওয়ার পরও দর্শক কম। আশা করছি দর্শক বাড়বে।’
মণিহার সিনেমা হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমা মুক্তি পেল, এটা হল মালিকদের জন্য ভালো খবর। হলের প্রাণ দর্শক। সেই দর্শক ফেরাতে ভালো সিনেমার দরকার; সেটি বর্তমানে বাংলাদেশে হচ্ছে না। দু-একটি সিনেমা নির্মাণ হলেও সেটা দিয়ে সারা বছরের খোরাক মিটবে না। অনুদান নির্ভর যেসব সিনেমা তৈরি হচ্ছ সেসব সিনেমা হলে চালানোর মতো না।’
জিয়াউল ইসলাম মিঠু আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্মাতারা দর্শকদের চাহিদা মেটাতে পারছে না। তাহলে তো ছবি আমদানি করতে হবেই। আবার যখন আমাদের সিনেমা ভালো দর্শক টানবে তখন বাইরের সিনেমা চালাব না।’
‘পাঠান সিনেমা বাংলাদেশে মুক্তি পেতে দেরি হয়েছে। আবার এর মধ্যে ইন্টারনেটে বা পাইরেটেড কপির মাধ্যমে এই সিনেমাটি দেখেছে। তাই দর্শকদের আগ্রহ কম। দু একদিন না গেলে বোঝা যাচ্ছে না। তার পরেও আমরা আশাবাদী দর্শক ফিরবে এবং পরবর্তী সিনেমাটি সঠিক সময়ে মুক্তি পাবে।’ বলেন হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মিঠু।
হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দেওয়া তথ্য মতে, মণিহারে সর্বশেষ সিনেমা চলেছে কলকাতার সুপারস্টার জিৎ অভিনীত বস-২। সেই সিনেমাটি হলে প্রচুর দর্শক টেনেছিল। এ ছাড়া সর্বশেষ বাংলাদেশের দর্শকপূর্ণ সিনেমা ছিল ‘হাওয়া’।
চলতি বছরের ১০ এপ্রিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই অনুমতিপত্রে জানানো হয়, সাফটাভুক্ত দেশ থেকে উপমহাদেশীয় ভাষায় নির্মিত ছবি বছরে ১০টি আমদানি করা যাবে। বিপরীতে সমান সংখ্যক বাংলাদেশি ছবি রপ্তানি করতে হবে। তবে সেটি আপাতত দুই বছরের জন্য পরীক্ষামূলক অনুমতি দেওয়া হলো।