সৌদি আরবের অর্থনীতির পালে সিনেমার হাওয়া
বিনোদন

সৌদি আরবের অর্থনীতির পালে সিনেমার হাওয়া

মার্ভেল থেকে হলিউডের রোমান্টিক-কমেডি ও অস্কারজয়ী ব্লকবাস্টার সিনেমা—টানা পাঁচ বছর সৌদি দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছে রুপালি পর্দা। নাটক-সিনেমার ওপর থেকে সাড়ে তিন দশকের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর সিনেমা হলগুলোতে ক্রমাগত বাড়ছে মানুষের ঢল।

রক্ষণশীলতার ঘেরাটোপ থেকে সৌদি সমাজকে বের করে আনার চেষ্টায় আছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তাঁর নেওয়া ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনায় ২০১৮ সাল থেকে বিনোদন জগৎ থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। ওই বছর এপ্রিলে রাজধানী রিয়াদের ‘এএমসি’ সিনেমা হলে প্রদর্শন করা হয় মার্ভেল স্টুডিওর ‘ব্ল্যাক প্যানথার’। এর পর থেকে গত পাঁচ বছরে সিনেমা দেখিয়ে সৌদি আরবের আয় বেড়েছে ৭০ গুণের বেশি।

পুরুষের পাশাপশি নারী দর্শকের সংখ্যাও বাড়ছে। ছবি: এএফপি সৌদি আরবের জেনারেল কমিশন ফর অডিও ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার (জিসিএএম) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সিনেমা চালুর পর পাঁচ বছরে এই খাত থেকে সৌদি আরবের আয় হয়েছে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ডলারেরও বেশি; যা সৌদি আরবের মুদ্রায় ৫৩ কোটি ৫০ লাখ রিয়াল। প্রথম বছরে এই আয় ছিল ২০ লাখ ডলার।

জিসিএএম বলছে, সৌদি আরবের ২১টি বড় শহরে ৭টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে ৬৯টি সিনেমা হল চলছে। যার দর্শক ধারণক্ষমতা ৬৪ হাজারের বেশি। হলগুলোতে গত পাঁচ বছরে এক কোটির বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে।

সৌদি আরবের একটি সিনেমা হল। ছবি: সংগৃহীত সরকারি তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি আয় করেছে টম ক্রুজ অভিনীত অ্যাকশন ড্রামা ফিল্ম ‘টপ গান: ম্যাভেরিক’। ১২ লাখেরও বেশি টিকিট বিক্রি করে সিনেমাটি আয় করেছে ৮ কোটি ৪০ লাখ রিয়ালের বেশি।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে সিনেমা হলগুলো। ছবি: সংগৃহীত সৌদি আরবের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের সিনেমা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ শতাংশ। একই বছরে দেশে সিনেমা নির্মিত হয়েছে ১ হাজার ৭০০-এর বেশি; যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ৩০০-এর বেশি।

সৌদির ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সি স্ট্র্যাটেজিক গিয়ারস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘ভিশন-২০৩০’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সৌদি আরবের জেনারেল কমিশন ফর অডিও ভিজ্যুয়াল মিডিয়া (জিসিএএম) বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। সেগুলো হলো—

● আগে টিকিটপ্রতি ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হতো; ২০২১ সাল থেকে তা কমিয়ে এলাকা ভেদে ১৫, ১০ ও ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

● সৌদি আরবে শুটিং করা সব চলচ্চিত্রের জন্য ৪০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে।

● ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে লোহিত সাগর তহবিল নামে এক কোটি চার লাখ ডলারের একটি তহবিল গঠন করা হয়। ইতিমধ্যে এ তহবিল থেকে ১৪ জন নির্মাতাকে অনুদান দেওয়া হয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে দ্বিতীয় পর্বের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়েছে।

● ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ চলচ্চিত্র প্রযোজনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি সরকারের বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়।

হলিউডের জনপ্রিয় নির্মাতা মাইকেল বে মনে করেন, সৌদি আরবের চলচ্চিত্র শিল্পের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। তিনি বলেন, ‘সৌদির তরুণ নির্মাতাদের দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, পাশাপাশি এ দেশের সিনেমা শিল্পের অগ্রগতিতে আমি আনন্দিত। আমি এখানে প্রায় এক সপ্তাহ ছিলাম। আমাকে তাঁরা চলচ্চিত্র নির্মাণের নতুন নতুন প্রযুক্তি ও অবকাঠামো ঘুরে দেখিয়েছে, তাদের প্রচেষ্টা আমাকে মুগ্ধ করেছে।’

মাইকেল বে মনে করেন, সৌদি আরবের চলচ্চিত্র শিল্পের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো দেশটির জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশেরই বয়স ৩৫ বছরের নিচে।

চীনের পরিবর্তনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘চীনের পরিকল্পনাও ঠিক এমনই ছিল। তাদের ব্যবসাও বড় ছিল না। এখন চীনের বাজার বেশ বড় হয়েছে।’

গত পাঁচ বছরে এক কোটির বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে সিনেমা হলে। ছবি: সংগৃহীত এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিচ্ছে সৌদি আরব। আন্তর্জাতিক প্রযোজনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৌদি চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করার উদ্দেশ্যেই এসব  উৎসবে অংশ নিচ্ছে তারা।

আগামীকাল ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ‘৪৮তম টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’–এ অংশ নিচ্ছে সৌদি আরব। কমিশন আল-উলা ফিল্ম, এনইওএম, দ্য কিংসহ চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি সংস্থার সহযোগিতায় উৎসবটিতে থাকছে সৌদি প্যাভিলিয়ন।

গতকাল ৫ সেপ্টেম্বর থেকে নেদারল্যান্ডসে শুরু হওয়া রটারডাম আরব ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও আলজেরিয়া, মিশর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, মরক্কো, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব, সিরিয়া, তিউনিসিয়ার সঙ্গে অংশ নিচ্ছে সৌদি আরব।

রক্ষণশীল সৌদি রাজতন্ত্রজুড়ে এখন সিনেমা হল। ছবি: এএফপি উৎসবটিতে সৌদির ৩টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এগুলো হলো সৌদির বক্স অফিসের রেকর্ড গড়া কমেডি-ড্রামা ‘সাত্তার’, মোহাম্মদ হাম্মাদ পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ইয়াল্লাহ, ইয়াল্লাহ, বীনাহ’ এবং সৌদির প্রথম মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘ভ্যালি রোড’।

এ উৎসবে ইউরোপ ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করার পাশাপাশি আরবের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের উৎসাহিত করতে থাকছে নানা কর্মশালা।

বিদেশ অংশ নেওয়ার পাশাপাশি নিজ দেশেও উৎসবের আয়োজন করছে সৌদি আরব। ২০২০ সাল থেকে শুরু হয় ‘রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। করোনা মহামারি শেষে গত বছরের ১ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দরনগরী জেদ্দার রিটজ কার্লটন হোটেলে হয়ে গেল উৎসবের দ্বিতীয় আসর। এতে অংশ নিয়েছিল ৬১টি দেশের ১৬১টি সিনেমা। মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে লড়েছে সৌদির দুটি সিনেমা।

‘রেড সি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’– এ বলিউডের প্রায় সব তারাকে দেখা গেছে। ছবি: সংগৃহীত উৎসবটিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিশ্বের জনপ্রিয় তারকাদের। ভারতীয় তথা দক্ষিণ এশিয়ার দর্শকদের কথা বিবেচনায় রেখে সৌদি সরকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বলিউড তারকাদের। অংশ নিয়েছিলেন শাহরুখ খান, রণবীর কাপুর, হৃতিক রোশন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, সোনম কাপুর, কারিনা কাপুর, সাইফ আলী খান, প্রখ্যাত অভিনেত্রী শাবানা আজমি ও নির্মাতা শেখর কাপুর।

২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে সর্বসাধারণের জন্য সিনেমা প্রদর্শনীর অনুমতি দেওয়া হয়। রাজধানী রিয়াদের ‘এএমসি’ সিনেমা হলে প্রদর্শন করা হয় মার্ভেল স্টুডিওর সিনেমা ‘ব্ল্যাক প্যানথার’।

সৌদি আরবে সিনেমা প্রদর্শনীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চার বছর পূর্তির সময় দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছিল সিনেমাশিল্প দেশটির ৪ হাজার ৪০০ বেশি তরুণের চাকরির সুযোগ তৈরি করেছে।

Source link

Related posts

এবার ভারতজুড়ে বইবে বাংলাদেশের ‘হাওয়া’

News Desk

বাংলাদেশে এসে গরুর মাংস রান্না, বিপাকে পশ্চিমবঙ্গের সুদীপা চ্যাটার্জি

News Desk

শ্রীলেখা-শশাঙ্কের সাক্ষাৎ নিয়ে নেটমাধ্যমে ঝড়

News Desk

Leave a Comment