আবার সে এসেছে ফিরিয়া। ‘সে’ নয়, তারা। মনস্টার জগতের দুই মেগাস্টার- কং (kong) ও গডজিলা (Godzilla)। বহুদিন পরে কোনও ছবিকে ঘিরে উত্তাল বক্স অফিস। কোনও শাহরুখ-সলমন নয়, দুই দানোর লড়াই চাক্ষুষ করতে হলমুখী দর্শকরা। হিসেব বলছে এযাবৎ ভারতে মোটামুটি ৩৩ কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে ‘গডজিলা ভার্সেস কং’ (Godzilla vs. Kong)। এই সপ্তাহের শেষেই ব্যবসার অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলতে পারে ৪০ কোটির ঘরও। অন্তত এই করোনা কালে (Corona Virus) যা রীতিমতো স্বস্তি দিচ্ছে হল মালিকদের। একই সময়ে মুক্তি পাওয়া বাকি ছবিগুলি কেউই এর ধারেকাছে নেই। কেবল ভারত নয়, গোটা বিশ্বেই সাফল্যের গ্রাফটা একই রকম আকাশছোঁয়া।

বাংলা ডায়েরি
ছবি: সংগৃহীত

ছবির গল্প

ট্রেলার মুক্তি থেকেই পারদ চড়ছিল। তখন থেকেই সারা বিশ্বের কং ও গডজিলা-ভক্তদের মধ্যে তর্ক শুরু হয়েছিল কে জিতবে এই মহারণে? আসলে সেই কবে ১৯৬৩ সালে মুখোমুখি হয়েছিল তারা। ইশিরো হন্ডার সেই ছবির পরে পৃথিবী অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। তুমুল উন্নতি হয়েছে প্রযুক্তির। ভিএফএক্স-এর জাদুবলে এই ছবি যে রীতিমতো নয়নাভিরাম সুখ এনে দেবে, তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল ট্রেলারেই। সেই প্রত্যাশা মেটাতে পুরোপুরি সফল ‘গডজিলা ভার্সেস কং’। অন্ধকার হলঘরে পর্দাজুড়ে দুই অতিকায়ের দাপাদাপিতে চোখে ধাঁধা লাগতে বাধ্য। অবশ্য, কেবল দুই নয়। ছবিতে রয়েছে অন্য মনস্টাররাও। তাদের সম্মিলিত উপস্থিতি এই ছবির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। ‘লেজেন্ডারি এনটারটেনমেন্ট’-এর মনস্টার ইউনিভার্সের এটা চতুর্থ ছবি। আগের তিনটি ছবি ‘গডজিলা’, ‘কং: স্কাল আইল্যান্ড’ ও ‘গডজিলা: কিং অফ দ্য মনস্টার্স’ দেখা থাকলে এই ছবিকে প্রথম থেকে বুঝতে সুবিধা হবে। তবে দেখা না থাকলেও খুব বেশি সময় লাগে না ছবির সঙ্গে মিশে যেতে। ছবির শুরুতেই এন্ট্রি কংয়ের। গডজিলার দেখা মেলে সামান্য পরে। শেষ ছবিতে দেখা গিয়েছিল গডজিলা আর মানুষের ক্ষতি করতে চায় না। কিন্তু এই ছবিতে প্রথম থেকেই সে রেগে আগুন! কেন তার এই আচমকা মেজাজ বদল? এই প্রশ্নের উত্তরেই লুকিয়ে রয়েছে ছবির আসল ‘টুইস্ট’।

ছবির ক্লাইমেক্স

ছবির অন্যতম আকর্ষণ কিংকং ও অনাথ বালিকা জিয়ার সম্পর্কের রসায়ন। মূক ও বধির এই মেয়েটির সঙ্গে ‘অবমানব’ কং যেন এক আত্মিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। কংকে জাহাজে বেঁধে নিয়ে যাওয়ার সময়ও সে চুপ করে থাকে কেবল ওই বালিকার জন্যই। নাহলে জাহাজটাকে পাঁপড়ভাজার মতো গুঁড়িয়ে দেওয়াটা কংয়ের কাছে নেহাতই ছেলেখেলা। অন্ধকার সমুদ্রের বুকে ভেসে যেতে যেতে ‘বাড়ি’র জন্য মনখারাপ করে কংয়ের। তখনও ওই ছোট্ট বালিকাই তার মনের কথা বুঝতে পারে। এমনকী মূক ও বধিরদের ‘সাইন ল্যাঙ্গোয়েজ’ও বুঝে ফেলতে শিখেছে কং।

ছবি: সংগৃহীত

অভিনয়

তবে ছবির বাকি চরিত্ররা কেউই আলাদা প্রভাব ফেলতে পারে না। কিন্তু সব মিলিয়ে গল্পের গতি এমন মসৃণ যে কীভাবে সময় কেটে যায়, তা বোঝা যায় না। কং ও গডজিলার লড়াই এই ছবির প্রধান ইউএসপি হলেও সেটা যাতে একঘেয়ে না হয়ে যায়, সেজন্য গল্পে এমন সব ভাঁজ রয়েছে, যে পরে কী হতে চলেছে বোঝা যায় না। গল্প খুব বেশি বলে দিলে ‘স্পয়লার’ হয়ে যাবে। তবে এটুকু বলা যায়, ছবির আসল ভিলেন কিন্তু কং কিংবা গডডিলা কেউই নয়! আর এই অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তিতেই দর্শকদের ঝুলি পূর্ণ হয়ে ওঠে।

ছবিতে আলেকজান্ডার স্কারসগার্ড (“বিগ লিটল লাইস,” “দ্য লিটল ড্রামার গার্ল”), মিলি ববি ব্রাউন (“অচেনা জিনিস”), রেবেকা হল (“ক্রিস্টিন,” “প্রফেসর মার্সটন এবং ওয়ান্ডার উইমেন”), ব্রায়ান টাইরি হেনরি অভিনয় করেছেন। (“জোকার,” “স্পাইডার ম্যান: স্পাইডার-শ্লোকের ভিতরে”), শন ওগুরি, আইজা গঞ্জলেজ , জুলিয়ান ডেনিসন (“ডেডপুল 2”) ), কাইল চ্যান্ডলারের সাথে (“গডজিলা: দানবের রাজা”) এবং ডেমিয়েন বিচির (“দ্য নুন,” “হেটেফুল এইট”)। উইংগার্ড (“অতিথি,” “আপনি পরবর্তী”) এরিক পিয়ারসন (“থোর: রাগনারোক”) এবং ম্যাক্স বোরেনস্টাইন (“গডজিলা: দানদের রাজা,” “কং: স্কাল আইল্যান্ড”), গল্পের চিত্রনাট্য থেকে পরিচালিত টেরি রসির মালিকানাধীন এবং নির্মিত “গডজিলা” চরিত্রের উপর ভিত্তি করে টেরি রসিও (“পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান: ডেড মেন টেল নো টেলস”) এবং মাইকেল ডগের্টি অ্যান্ড জ্যাচ শিল্ডস (“গডজিলা: দ্য কিং অফ দানস”) । ছবিটি প্রযোজনা করেছেন মেরি প্যারেন্ট, অ্যালেক্স গার্সিয়া, এরিক ম্যাকলিড, জন জ্যাশনি, টমাস টুল এবং ব্রায়ান রজার্স, জে অ্যাসেনফেল্টার, হারবার্ট ডব্লু গেইনস, ড্যান লিন, রায় লি, যোশিমিতসু বান্নো এবং কেনজি ওকুহিরার নির্বাহী প্রযোজনা নিয়ে।

চোখধাঁধানো গ্রাফিক্স ও চমৎকার এডিটিং এই ছবির সবথেকে বড় সম্পদ। ছবির প্রথমার্ধে সমুদ্রে কং ও গডজিলার লড়াই ও ক্লাইম্যাক্সে হংকংয়ে দু’জনের সম্মুখ সমরে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক চমকে দেওয়া দৃশ্য। ফলে ছোটরা তো বটেই, তাদের হাত ধরে হলমুখী হওয়া বড়রাও হল থেকে বেরিয়ে নির্দ্বিধায় বলে উঠতে পারেন, ”পয়সা উশুল”।

Related posts

এ পৃথিবীতে কেউ শতবাগ নিরাপদ না–পড়শী

News Desk

অমিতাভ বচ্চনের বাংলোতেই হয়েছিল যেসব ছবির শুটিং

News Desk

বাজেটে বরাদ্দ বাড়লেও খুশি নন সংস্কৃতিকর্মীরা

News Desk

Leave a Comment