এবারের অস্কারের রাতটি ছিল উইল স্মিথের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত। যেখানে ‘কিং রিচার্ড’ সিনেমায় ভেনাস ও সেরেনা উইলিয়ামসের বাবা রিচার্ড উইলিয়ামস চরিত্রে অনবদ্য অভিনেয়র জন্য উইল স্মিথ অস্কার পেয়েছেন। কিন্তু সে জন্য প্রশংসায় না ভেসে বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়েছেন চড় কাণ্ডে। স্ত্রী জ্যাডা পিঙ্কেট বিরল রোগে আক্রান্ত। আর এ নিয়ে কৌতুক করায় উপস্থাপক ক্রিস রককে অস্কারের মঞ্চে কষিয়ে দিলেন চড়। কিন্তু আমার প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ ভিন্ন।
যে রাতটি ছিল উইলিয়ামস পরিবারকে সম্মান জানানোর রাত। যে রাত ছিল সেরেনা ও ভেনাসকে গড়ে তোলার পেছনের কারিগর বাবা রিচার্ড উইলিয়ামসকে সবার সামনে টুপি খোলা অভিবাদন জানানোর রাত। সেখানেই অঘটন ঘটালেন স্মিথ। সবার মনে একই প্রশ্ন, কেন হঠাৎ স্মিথ এমনটা করলেন? এর আগেও বেশ কয়েকবার স্ত্রীকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরার শিকার হয়েছেন স্মিথ। প্রতিবারই নিজের ব্যক্তিগত ইমেজ রক্ষা করে গেছেন। কিন্তু আজ এত বড় মঞ্চে নিজের অন্যতম সেরা মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণ হারালেন!
বিস্ময়কর বিষয় হলো, স্মিথ পুরস্কারের মঞ্চে উঠে নিজের করা এ কাণ্ডের পক্ষে নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপক চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, রিচার্ড উইলিয়ামস ছিলেন তাঁর পরিবারের রক্ষাকর্তা। ঠিক তিনি যেমন স্ত্রীকে রক্ষা করেছেন চড় আর বাজে বাক্যালাপ দিয়ে। স্মিথ মানুষকে রক্ষার কথা বলেছেন, বলেছেন তাঁর সঙ্গে কাজ করা নারীদের রক্ষা করার বিষয়েও।
কাউকে রক্ষা করা মানে এই নয় যে, এ জন্য কাউকে চড় মেরে বসতে হবে। এই ধরনের উগ্রতাকে নৈতিকভাবে অনেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে বা পরিবারে অভ্যন্তরে কিংবা সম্পর্কেও কি তারা এমন উগ্রতাকে প্রশ্রয় দেয়। নিজের পক্ষে কোনো বিষয় গেলেই কেন মানুষ আর নৈতিকতার ধার ধারে না?
স্মিথ বলেন, ‘রিচার্ডের মতো আমিও একজন পাগলাটে পিতা। কিন্তু রিচার্ড উইলিয়ামস তাঁর দুই মেয়েকে টেনিস কোচিং করাতে গিয়ে যে সমস্যা, উপহাস ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তার জন্য তিনি কখনো জনসম্মুখে আসেননি। রিচার্ড নিজের মতো চেষ্টা করে গেছেন তাঁর দুই মেয়েকে টেনিসে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। রিচার্ডের নামের সঙ্গে নিজের নাম গুলিয়ে স্মিথ নিজের হঠকারী কাণ্ডকে কার্যত ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা খুবই ছোট মানসিকতার পরিচয় দেয়। স্মিথের অস্কার জয়ে রিচার্ডের অতিমানবীয় কার্য ও প্রবল আত্মবিশ্বাসের বিষয়টি ওঠে আসা উচিত ছিল, কিন্তু সেখানে উঠে এসেছে একজন মানুষের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করার অক্ষমতা।
আমি খুবই মর্মাহত। স্মিথ নিজের লালিত ব্যক্তিগত ইমেজটাকে মুহূর্তেই ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে কলঙ্কিত করেছেন উইলিয়ামস পরিবারের সম্মানটাও।
গার্ডিয়ানের সিনিয়র সম্পাদক জোসেফ হার্কারের লেখা থেকে আংশিক এ অনুবাদ করেছেন মোশারফ হোসেন।