পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার আসামি আরাভ খানের দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের বিষয়টি এখন দেশের অন্যতম আলোচনার বিষয়। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাত ৮টায় জমকালো আয়োজনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আরাভ জুয়েলার্স উদ্বোধন করেন তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তিনি ছাড়াও বিনোদন জগতের একঝাঁক তারকা দুবাইয়ে সে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
আরাভের ফেসবুক ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাস, হিরো আলম, গায়ক নোবেল, রুবেল খন্দকার, বেলাল খান ও জাহেদ পারভেজ পাভেলসহ বিনোদন জগতের অনেকেই সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী আয়োজনটি উপস্থাপনা করেছেন দেবাশীষ বিশ্বাস। মঞ্চে এসে আরাভ খানকে প্রশংসায় ভাসান তিনি। তবে সাকিব আল হাসান মঞ্চে ওঠেননি।
দেবাশীষ বলেন, ‘আজকে আমি ডেকে নিচ্ছি, এই সেই লোককে (আরাভ খান), তাঁর পক্ষে অসম্ভব বলে কিছু নেই। এই এলাকায় এত বড় অনুষ্ঠান কখনো হয়েছে বলে মনে হয় না।’ এরপর মঞ্চে এসে দর্শকদের উদ্দেশে হাত নাড়াতে দেখা গেছে আরাভ খানকে। জুয়েলার্সের উদ্বোধনের পর উপস্থিত দর্শকদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন আয়োজকেরা। হিরো আলমসহ বেশ কয়েক তরুণ শিল্পী সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন।
চিত্রনায়িকা দীঘিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেটি দীঘি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন। বার্তায় দুবাইয়ে আরাভ খানের দোকানের ঠিকানা উল্লেখ করে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানান দীঘি। সেখানে ক্রিকেটার সাকিবের সঙ্গে তাঁকেও দেখা যাচ্ছে, এমন ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে দীঘি দাবি করেছেন, দুবাই গেলেও আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনে তিনি ছিলেন না। অন্য একটি স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনে ছিলেন তিনি।
এ ছাড়া ভিডিও বার্তায় আরাভ খানকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটার ও অন্য তারকারা। এর মধ্যে রয়েছেন—ইংলিশ ক্রিকেটার বেনি হাওয়েল, শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের পেসার উসুরু উদানা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের বাঁহাতি আগ্রাসী ওপেনার এভিন লুইস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রোহান মোস্তফা, আফগানিস্তানের ক্রিকেটার হজরতউল্লাহ জাজাই, পাকিস্তানের ক্রিকেটার মোহাম্মদ আমিরসহ আরও অনেকে।
ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন।
এদিকে দুবাইয়ের ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। কারণ এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির মালিক আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে সোহাগ মোল্লা পুলিশের বিশেষ (এসবি) শাখার পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুণ অর রশীদ।
২০১৮ সালের ৭ জুলাই রাজধানীর বনানীর একটি ফ্ল্যাটে খুন হন পুলিশ পরিদর্শক মামুন। তাঁকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম ভারতে পালিয়ে যান। এই মামলায় ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ রবিউলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়। পুলিশ হত্যার মামলায় রবিউলের ভাড়া করা এক ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করে ৯ মাস জেল খেটে বের হন।
২০২০ সালে রবিউল ভারতীয় পাসপোর্ট পান। সেখানে তাঁর নাম বদলে লেখা হয় ‘আরাভ খান’। সেখান থেকে চলে যান দুবাই। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আরব আমিরাত সরকার তাঁকে রেসিডেন্ট পারমিট দেয়। রবিউল এখন সেখানেই আছেন, জুয়েলারি ব্যবসা করছেন।