‘তোমরা শুধু নারীদের নির্যাতন কর’—এক তরুণী তালেবান যোদ্ধাকে বলছিলেন কথাটা। জবাবে তিনি চিৎকার করে বললেন, ‘আমি তোমাকে কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম। এখানেই খুন করে ফেলব তোমাকে।’ সমান গলা উঁচিয়ে ওই নারীর জবাব, ‘ঠিক আছে, মেরে ফেলো! তোমরা স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছ। এর চেয়ে ভালো আমাকে মেরে ফেলো।’
একটি গাড়িতে ওই তরুণী ও যোদ্ধার মধ্যে এই বাগ্বিতণ্ডা গোপনে, কাঁপা হাতে একটি ফোন ক্যামেরায়া ধারণ করা হয়। এক বিক্ষোভের পর তাঁকে গ্রেপ্তার করে কাবুলের কোনো বন্দীশালায় নেওয়া হচ্ছিল।
আফগানিস্তান তালেবানের দখলে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরের পরিস্থিতি ফুটে ওঠা এই দৃশ্য ‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’ নামের প্রামাণ্যচিত্রের অংশ। হলিউড অভিনেত্রী জেনিফার লরেন্স ও তাঁর বন্ধু জাস্টিন সিয়ারোচির প্রতিষ্ঠান এক্সেলেন্ট ক্যাডাভার ডকুমেন্টারিটি প্রযোজনা করেছে।
২০২১ সালে তালেবানদের আফগানিস্তান দখলের সময় তিন নারীর লড়াইয়ের ওপর ভিত্তি করেই তথ্যচিত্রটি নির্মিত।
ওই তথ্যচিত্র নির্মাণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জেনিফার লরেন্স বলেন, ‘এই নারীদের তালেবানবিরোধিতা দেখে আমার হৃদয় খুব স্পন্দিত হচ্ছিল। নারীরা লড়াই করছে—এমনটা সচরাচর সংবাদে দেখা যায় না। এটি আমাদের চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটা নারীদের গল্প। এখন তাদের কোনো স্বাধীনতা নেই। কিন্তু তাদের আছে নিজস্ব গল্প, যা তাদের নিজস্ব উপায়ে এবং তাদের জন্য তুলে ধরাটা খুবই জরুরি।’
লরেন্স আরও বলেন, ‘আবেগ ও প্রয়োজন থেকেই এই তথ্যচিত্রের জন্ম।’
সিয়ারোচি বলেন, ‘লরেন্স ২০২১ সালে কাবুলের পতনের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। কারণ ওই পরিস্থিতি নারীদের জন্য খুবই ভয়াবহ ছিল। তাই আমরা একজন নারী হিসেবে জেনকে এগিয়ে দিয়েছি। তিনি একজন নারী হয়ে নারীদের গল্প বলছেন, নারীদের নিয়োগ দিচ্ছেন, সার্বিকভাবে নারীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন।’
জেনিফার যোগ করেন, ‘সেটার কারণ, আমি একজন নারী। আমি খুব ভাগ্যবান যে, নারীরা কাজের না—এমন পক্ষপাতদুষ্ট ধারণা আমার নেই।’
এমন নারীদের একজন এই ডকুমেন্টারি নির্মাতা সাহরা মানি, যিনি স্বাধীন কাবুল প্রযোজনা সংস্থা, আফগান ডক হাউসের সহপ্রতিষ্ঠাতা। বহুল আলোচিত ‘এ থাউজেন্ড গার্লস লাইক মি’ তথ্যচিত্র দেখেছিলেন লরেন্স ও সিয়ারোচি। ওই তথ্যচিত্রে দেখা যায়, ২৩ বছর বয়সী এক আফগান নারী বাবার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু প্রতিকার না পেয়ে তিনি টেলিভিশনের আশ্রয় নেন।
ওই তথ্যচিত্রের নির্মাতা মানি সিয়ারোচিকে জানান, তিনি আরেকটি নতুন প্রকল্প শুরু করেছেন, যেখানে তিন আফগান নারীকে তুলে ধরা হবে, যারা তালেবানের দখলের পরের মাসগুলোতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। কারণ সে সময় মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল থেকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মানি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে সেগুলোর দৃশ্য ধারণ করেন।
তখনই তা প্রযোজনা করার দায়িত্ব নেন জেনিফার ও তাঁর বন্ধু সিয়ারোচি। নির্মাতা মনি বলেন, ‘নারীরা যখন একত্রিত হয়, তখন সবকিছুই সম্ভব।’
ডকুমেন্টারিটি ইতিমধ্যে কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শুরু করে বিশ্বের আরও গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সিয়ারোচি ও লরেন্সের মতে, তাদের পরের চ্যালেঞ্জ হবে তথ্যচিত্রকে বৃহৎ পরিসরে দর্শকদের সামনে হাজির করা। চলমান সহিংস সংঘাতের গল্প বলা ততটা সহজ নয়।