বইয়ের নামঃ কবি
লেখকঃ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
ছবি: onushilon.org

“শুধু দস্তুরমত একটা বিস্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমত এক সংঘটন। চোর ডাকাত বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া গেল” একটা সময় ছিল যখন সমাজের নিচু বংশের কেও যদি ভাল কাজ করত তাহলে বাহবা না দিয়ে তার অর্জন নিয়ে হাসিঠাট্টা করা হত। ‘কবি’ উপন্যাসে লেখক ঠিক সেই সময়েরই এক হতভাগা কবিয়ালের জীবনের গল্প তুলে ধরেছেন যার জন্ম ডোমবংশে, নাম নিতাইচরণ। বংশের সবাই চোর ডাকাত হলেও নিতাইয়ের স্বপ্ন ছিল কবিগান। সেবারের মেলায় কবিয়ালের অনুপস্থিতিতে কবিগানের সুযোগ পেয়ে মুহূর্তেই নিতাই তাক লাগিয়ে দিল মেলার সবাইকে। সেই থেকে শুরু হল এক কবিয়ালের জীবনের গল্প। পরিবার আর সমাজ থেকে নিতাই পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিল বন্ধু রাজনের কাছে, শুরু করলো স্টেশনে কুলিগিরির কাজ। বেশিরভাগ সময় কুলির কাজ করে, আর বাকিসময় ঘরে বসে করে কবিগানের চর্চা। এসময় পরিচয় হয় রাজনের শালিকা ঠাকুরঝির সাথে। কালো বর্ণের মেয়েটার প্রতি নিতাইচরণের আকর্ষণ বাড়তে থাকে। নিতাই গান লিখে- “কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কাঁদ কেনে?” সম্পর্কটা ধীরে ধীরে প্রণয়ের দিকে যেতে থাকে। কিন্তু ঠাকুরঝি বিবাহিত, তাই নিতাইচরণের জন্য তার পরিবারে দেখা দেয় বাকবিতণ্ডা। তখন নিতাই চলে যায় দূরে, ঠাকুরঝিকে ফেলে অনেক দূরে।

তারপর উদ্দেশ্যহীন নিতাই যোগ দেয় ঝুমুরের দলে যাদের কাজ ছিল গান বাজনা, নাচ এবং বেশ্যাবৃত্তি। সেই দলে নিতাইয়ের সাথে পরিচয় হয় বসন্তের (বসন)। প্রথমে টুকটাক খুনসুটি, খুনসুটি থেকে প্রণয় আর প্রণয় থেকে বিয়ে। কিন্তু নিতাইয়ের মনে তো আগেই বাসা বেঁধে রেখেছে ঠাকুরঝি। তাহলে এক মনে দুজনকে ঠাই দেয় কি করে! তাই সে গান লিখে ফেলল-
“এই খেদ মোর মনে,
ভালোবেসে মিটল না আশ, কুলাল না এ জীবন
হায়! জীবন এত ছোট কেনে,
এ ভুবনে?”
নিতাই তার জীবনে হারিয়েছে বেশি, পেয়েছে খুব কম। পথে যেতে যেতে হারিয়েছে সবাইকে, এমনকি বসন্তকেও। এতো হারানোর মাঝেও নিতাইচরণ কি পেয়েছিল সফল কবিয়ালের খাতায় নিজের নাম লিখতে? নাকি বংশ, সমাজ, ভাগ্য সবকিছুর বেড়াজালে আটকে পথের মাঝেই হয়েছিল এক কবিয়াল জীবনের সমাপ্তি?

Related posts

ব্যবহারের অনুপযোগী জনসনের ৬ কোটি ডোজ টিকা

News Desk

‘বাধ্যতামূলক’ অবসরে পাঠানো সচিব মকবুল হোসেন যা বললেন

News Desk

দুনিয়া মাতানো সর্বকালের সেরা ১০ বই

News Desk

Leave a Comment