বইঃ অপেক্ষা
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনীঃ আফসার ব্রাদার্স
মুদ্রিত মূল্যঃ ৩০০
পার্সোনাল রেটিংঃ ৮.৫/ ১০

 হুমায়ূন আহমেদ
ছবি সংগৃহিত: dw.com

পৃথিবীতে কতশত মানুষ নিখোঁজ হয়। যাদের নিখোঁজ সংবাদে ছেয়ে আছে চারপাশ, তাদের জন্য তাদের পরিবার করে অপেক্ষা। অনন্তকাল তাদের অপেক্ষায় কেটে যায় জীবন ঠিক এমন এক পরিবার নিয়েই হুমায়ূন আহমেদ এর এই উপন্যাস ‘অপেক্ষা’। উপন্যাসের প্রথমেই যে চরিত্র নজরকাঁড়ে সে হচ্ছে সুরাইয়া। প্রাণবন্ত উৎফুল্ল চরিত্র। স্বামী সংসার নিয়ে যার সকল ধ্যান জ্ঞ্যান। যার সব গল্প জুড়ে থাকে হাসানুজ্জামান অর্থাৎ তার স্বামী এবং তার ছ’বছরের সন্তান ইমন, আর গল্প হতে চলছিলো আরেক নতুন সদস্যের। সেই নতুন সদস্যের সংবাদ সে আজ হাসানকে জানাবে যার জন্য সুরাইয়া তার স্বামীর অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু সেদিন অফিস থেকে আর ফিরে এলেন না হাসানুজ্জামান। থানা হাসপাতাল থেকে শুরু করে তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয় তাকে কিন্তু সে ফিরে আসে না। এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারেন না সুরাইয়া, তিনি অধীর অঅপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকে। বছর গড়িয়ে গেলেও খুঁজে ফিরে তার স্বামীকে। তার চিন্তা-ভাবনার সম্পূর্ণটা জুড়ে বিরাজ করে হাসানুজ্জামান। নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন সুরাইয়া, জগতের বাদবাকি সকল বিষয় নিয়ে জন্ম নেয় মাত্রাতিরিক্ত অনাগ্রহ, খিটখিটে স্বভাবের হয়ে উঠে দিনকেদিন।

দুই সন্তান ইমন আর সুপ্রভাকে নিয়ে সে তার ভাই জামিলুর রহমানের পরিবারে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানেই তার অপেক্ষা, আর ইমন আর সুপ্রভার বেড়ে ওঠা। উপন্যাস মূল প্রেক্ষাপট জুড়ে সুরাইয়ার হাসানুজ্জামান এর জন্যে অপেক্ষা হলেও সমান্তরাল গতিতে চলতে থাকে পারিপার্শ্বিক ঘটনা, তুলে ধরা হয় জামিলুর রহমানের পরিবারের গল্প। শুধুমাত্র কর্তার ব্যস্ততার দরুণ কতজনের জীবন এর গতিপথ এলোমেলো হতে পারে তা নিয়ে হয় বিষদ আলোচনা। এই অপেক্ষার মাঝেই চলতে থাকে ইমন মিতুর অব্যক্ত প্রেম কাহিনী। মিতুর পাঠানো উড়ো প্রেমের চিঠি এবং বিয়ে করার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জনিত সংলাপ গুলো করুণ জীবনযাত্রার এই উপন্যাসের মাঝে প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে। উপন্যাসে যেই চরিত্রের কথা হয়তোবা পাশ কাটিয়ে চলে গেলেও তেমন একটা সমস্যা হতো না কিন্তু সেই চরিত্রকেও উপন্যাস এর এক পর্যায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অন্য মহীমায়।

‘আকলিমা’ হাসানুজ্জামান এর মা এবং সুরাইয়ার শাশুড়ী। একসময় সুরাইয়ার তাকে ঠিক পছন্দ হতো না, তার বেশভূষা এবং ব্যবহারে সুরাইয়া থাকতো বিরক্ত। চক্রের ঘুরপাকে আকলিমা ঠিক যেখানে যেভাবে পা ছড়িয়ে বসতেন সুরাইয়াও ঠিক সেইখানে পা ছড়িয়ে বসে ভাবতে থাকে, ‘মানুষের জীবন কি চক্রের মত? চক্রের কোনো শুরু নেই, শেষ নেই। মানব জীবন ও কী তাই। রহস্যময় চক্রের ভেতর এই জীবন ঘুরপাক খেতে থাকে? শুরু নেই, শেষ নেই। চক্র ঘুরছে।’ তিনি তার শাশুড়ীর করুন জীবনদর্শন এর কথা চিন্তা করে ভাবতে থাকেন, তার শাশুড়ী ও কী ঠিক তার মত করে চোখের জল শাড়ির আচল দিয়ে মুছতে মুছতে জীবনের চক্রের কথা ভাবতেন ?

ইমন আর মিতুর বিয়ে হয় উপন্যাসের এই পর্যায়ে। তিনি যেখানে শেষ করেন মিতু সেখান থেকে করে শুরু। শুক্লপক্ষ বলে চাঁদের আলো পরেছে উঠোনে, রহস্যময় এই রাতে ইমনের বাবার ফিরে আসার অপেক্ষা করে চলেছে সে, গল্প সাজাচ্ছে তাকে শোনানোর জন্যে। আদৌ কী ফিরে আসবে হাসানুজ্জামান? এই চক্রের ভেতর ঘুরপাক খেতে খেতে অপেক্ষা করে কেউ কেউ। কিংবা সকলেই। কীসের অপেক্ষা?

তথ্য সূত্র: লাইব্রেরিয়ানভয়েস , এব্লগফরবুকরেভিউ |

Related posts

প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বই রিভিউ এবং PDF: আরিফ আজাদ

News Desk

একুশে বইমেলা ১৫-২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে

News Desk

ব্যবহারের অনুপযোগী জনসনের ৬ কোটি ডোজ টিকা

News Desk

Leave a Comment