Image default
জীবনী

রোবের্তো কার্লোস : “ইতিহাসে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক বামপন্থী”

রবার্টো কার্লোস ড সিলভা রোচা (জন্ম 10 এপ্রিল 1973), সাধারণত রবার্টো কার্লোস নামে পরিচিত, ব্রাজিলের অবসরপ্রাপ্ত পেশাদার ফুটবলার। তিনি ব্রাজিলে একটি অগ্রগতি হিসাবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, কিন্তু তার বেশিরভাগ ক্যারিয়ার বামপন্থী হিসাবে কাটিয়েছিলেন এবং তাকে “ইতিহাসে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক বামপন্থী” হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।কার্লোসকে ইতিহাসে সর্বাধিক বাম ব্যাকগুলির মধ্যেও ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয়।

২০০৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টা র ফাইনাল চলছে, মুখোমুখি ব্রাজিল ও ফ্রান্স। ম্যাচের ৫৬ মিনিটের মাথায় ডি বক্সের ডানপাশ থেকে ফ্রী-কিক নিচ্ছেন জিনেদিন জিদান, ডি বক্সে থিয়েরি অঁরিঅঁ ’কে পাহাড়া দিচ্ছিলেন সময়ের সেরা লেফটব্যাক রবার্তো কার্লো সর্লো , জিদানের কিক’টি নেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেহূ ইর্তে কি যেনো ভেবে অঁরিঅঁ ’কে পাহাড়া দেওয়া কার্লো সর্লো গেলেন জুতো জু র ফিতে বাঁধবাঁ তে, বল আসলো অঁরিঅঁ তা রিসিভ করে অসাধারণ এক গোল’ও করে বসলেন, অথচ রবার্তো কার্লো সর্লো তখন’ও জুতো জু র ফিঁতে বাঁধবাঁছিলেন!

শুধুব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা কিংবা দর্শকর্শ রাই নন, বরং মাঠে থাকা খোদ ফরাসি খেলোয়াড়রাই হয়তো বিশ্বাস করতে পারেননি, রবার্তো কার্লো সর্লো ’ও এমন খামখেয়ালিপনা করতে পারেন! কার্লো সের্লো র এই অদ্ভুত ভুলের মাশুলবাবদ কোয়ার্টা র ফাইনাল থেকেই বাদ ব্রাজিল; চাপা ক্ষোভ, অভিমান কিংবা রাগ যাই পুঁষেপুঁ রাখেন না ক্যান,মানুষটার নাম যখন রবার্তো কার্লো সর্লো তখন একজন ফুটবলার নামক সুপারহিউম্যানের অবিশ্বাস্য সব কীর্তিতের্তি আপনি যতবার বুঁদবুঁ হয়েছেন তাতে সেই ক্ষোভ অভিমান কিংবা রাগ একরাশ মুগ্ধতার সুবাতাস বইয়ে দেয়, ভালোবাসার বৃষ্টিবৃ ঝড়িয়ে যায়!

তার পায়ের ছোঁয়া লাগতেই বুলেটের গতিতে ছুটে যেত ফুটবল

ক্লাব পর্যায়ে, তিনি রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন 1996 সালে, যেখানে তিনি 11 টি অত্যন্ত সফল ঋতু কাটিয়েছিলেন, সব প্রতিযোগিতায় 584 টি ম্যাচ খেলে এবং 71 গোল করেন। রিয়েল এ, তিনি চার লা লীগ শিরোপা এবং ইউইএফএ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ তিনবার জিতেছিলেন। ২013 সালের এপ্রিল মাসে, তিনি ম্যারাca দ্বারা “রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে সেরা বিদেশী 11” এর সদস্য হিসাবে নামকরণ করেছিলেন। আগস্ট ২01২ সালে, তিনি 39 বছর বয়সে ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দেন।

ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানের জার্সি গায়ে রবার্তো কার্লোস

মাদ্রিদে যখন যোগ দিলেন তখন প্রথম গ্যালাক্টিকো প্রজন্মের সূচনা হয়েছে মাত্র। ১৯৯৭ সালে লা লিগা ও সুপারকোপা জিতে ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন তিনি। এর সাথে যোগ হলো জাতীয় দলের হয়ে কোপা আমেরিকা এবং কনফেডারেশনস কাপ, সাথে ফ্রান্সের বিপক্ষে ফুটবল ইতিহাসের সেরা ব্যানানা শট তাকে নিয়ে গেল খ্যাতির চূড়ান্ত সীমানায়।

হলেন ফিফা কর্তৃক ঘোষিত ১৯৯৭ সালের বিশ্বের সেরা ২য় খেলোয়াড়। পরের বছরও ধরে রাখলেন পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা। ইউরোপের সর্বোচ্চ শিরোপা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জ্বলে উঠল তার হাতে। পরের বছরও আবারো তার হাতে দেখা গেল ব্রাজিলের হয়ে দুই বছর আগে জয় করা কোপা আমেরিকা।

বাম পায়ের অসাধারণ জোরালো ফ্রি কিকে গোল দেওয়ার পর উদযাপনরত কার্লোস

২০০২ সাল তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বর্ণিল বছর। এই বছর তিনি ছোঁয়া পেয়েছেন একই সাথে বিশ্বকাপ এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের। দুইটি শিরোপা জয়েই দলে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সেই বছরেই ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ ও উয়েফা সুপার কাপ জেতায় জায়গা পেয়েছিলেন উয়েফা টিম অফ দ্য ইয়ারে। উয়েফা ডিফেন্ডার অফ দ্য ইয়ার হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন কার্লোস।

একবিংশ শতাব্দীর প্রথম বছরেই গ্যালাক্টিকোসদের হয়ে ২য় বারের মতো জিতলেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। পাওলো মালদিনির সাথে তাকেও ইতিহাসের সেরা লেফট ব্যাক হিসেবে পরিগণিত করা হয়। আক্রমণভাগেও তার দুর্দান্ত ফর্ম তাকে পরিচিত করে ফুটবলের সবচেয়ে আক্রমন্মুখো ডিফেন্ডার হিসেবে। একজন ডিফেন্ডার হয়েও তার গোল সংখ্যা ১১৭। এছাড়াও তার বল কিক করার গতি অবিশ্বাস্য প্রতি ঘন্টায় ১৬৯ কি.মি.!

২০০২ বিশ্বকাপ জেতার পর উদযাপনরত কার্লোস

এরপর তুরস্কের ক্লাব ফেনেরবাখে কিছুদিন কাটানোর পর ১৫ বছর পর ফিরে আসেন দেশের মাটিতে। ২০১০ সালে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব করিন্থিয়ান্সে যোগ দেন তিনি। মাত্র ১ মৌসুম কাটিয়েই আবারো চলে যান ইউরোপে, রাশিয়ান ক্লাব আনঝি মাখাচকালার হয়ে খেলতে। আনঝিতে খেলার সময় কোচ পদত্যাগ করায় তিনি কিছুদিন কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করেন। ঐ মৌসুমে ২৮ ম্যাচে ৫ গোল করে অবশেষে ২২ বছরের দীর্ঘ প্রোফেশনাল ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন রবার্তো ‘দ্য বুলেটম্যান’ কার্লোস।

৩৭ বছর বয়সে এসেও পায়ের জোর খুব একটা কমেনি কার্লোসের

২০১৫ সালে অবসর ভেঙে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দিল্লী ডায়নামোস ক্লাবে যোগ দেন তিনি, একইসাথে হেড কোচ এবং খেলোয়াড় হিসেবে। কিন্তু মাত্র দুইটি ম্যাচে মাঠে নামেন ৪২ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান, বাকি ম্যাচগুলোতে ডাগআউটে থেকেই কোচের ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তী মৌসুমেও দিল্লীর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও তা আর হয়ে ওঠেনি। তার পর এখনো পর্যন্ত কোচিং ক্যারিয়ারে নতুন কিছু যুক্ত হয়নি।

বছর দল ম্যাচ (গোল)

১৯৯১–১৯৯৩ উনিয়াও ছাও যোয়াও ০ (০)

১৯৯২ → এথলেটিকো মিনেইরো (লোয়ান) ৩ (০)

১৯৯৩–১৯৯৫ পালমেইরাস ৪৪ (৩)

১৯৯৫–১৯৯৬ ইন্টার মিলান ৩০ (৫)

১৯৯৬–২০০৭ রিয়াল মাদ্রিদ ৩৭০ (৪৭)

২০০৭–২০০৯ ফেনারবাহচে ৬৫ (৬)

২০১০–২০১১ করিন্থিয়ান্স ৩৫ (১)

২০১১–২০১২ আনঝি মাখাচকালা 25 (৪)

২০১৫ দীল্লি ডায়নামো ৩ (০)

মোট ৫৭৫ (৬৬)

জাতীয় দল

১৯৯২–২০০৬[২] ব্রাজিল ১২৫ (১১)

পরিচালিত দল

২০১২ আনঝি মাখাচকালা (কোচ)
২০১৩–২০১৪ সিভাসস্পোর
২০১৫ আখিসার বেলেদিয়েস্পর
২০১৫ দীল্লি ডায়নামো

অর্জন ও সম্মাননা[দেখান]
* শুধুমাত্র ঘরোয়া লীগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে

 

Related posts

আনোয়ার হোসেন জীবনী, শিক্ষা ,ফ্যামিলি,চলচ্চিত্র, এবং সম্মাননা

News Desk

বলিউডের নারী মহাতারকা শ্রীদেবীর জীবনের গল্প

News Desk

আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী

News Desk

Leave a Comment