রুনা লায়লা (জন্ম: ১৭ নভেম্বর ১৯৫২) একজন খ্যাতনামা বাংলাদেশী কণ্ঠশিল্পী। তিনি বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সংগীতের জন্য বিখ্যাত। তবে বাংলাদেশের বাইরে গজল শিল্পী হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তার সুনাম আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই তিনি চলচ্চিত্রের গায়িকা হিসাবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় এবং পাকিস্তানি চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। রুনা লায়লা ছিলটি, বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, ফার্সি, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনীয়, ফরাসি, লাতিন ও ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন। পাকিস্তানে তার গান দমাদম মাস্ত কালান্দার অত্যন্ত জনপ্রিয়।

পুরো নাম: রুনা লায়লা
জন্ম তারিখ: ১৭ নভেম্বর, ১৯৫২
জন্মস্থান: চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
শিক্ষাঃ বুলবুল একাডেমি অফ ফাইন আর্টস
পেশা: গায়ক
সক্রিয় বছর: ১৯৬৯-বর্তমান
উচ্চতাঃ ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি
স্বামী/স্ত্রী: আলমগীর
ধর্মঃ ইসলাম
রাশিচক্র: বৃশ্চিক
প্রাথমিক জীবন
রুনা লায়লা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন সংগীত শিল্পী। তার মামা সুবীর সেন ভারতের বিখ্যাত সংগীত শিল্পী। তার যখন আড়াই বছর বয়স তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে যান। সে সূত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে,তার বাবার বাড়ী রাজশাহীতে।

কর্মজীবন
১৯৬৬ সালে লায়লা উর্দু ভাষার হাম দোনো চলচ্চিত্রে “উনকি নাজরোঁ সে মোহাব্বত কা জো পয়গম মিলা” গান দিয়ে সংগীতাঙ্গনে আলোচনায় আসেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি নিয়মিত পাকিস্তান টেলিভিশনে পরিবেশনা করতে থাকেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে তিনি জিয়া মহিউদ্দিন শো-তে গান পরিবেশন করতেন এবং ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেওয়া শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি কলকাতায় “সাধের লাউ” (সিলেটি গান) এর রেকর্ড করেন। একই বছর মুম্বাইয়ে তিনি প্রথমবারের মত কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এসময়ে দিল্লিতে তার পরিচালক জয়দেবের সাথে পরিচয় হয়, যিনি তাকে বলিউড চলচ্চিত্রে এবং দূরদর্শনের উদ্বোধনী আয়োজনে গান পরিবেশনের সুযোগ করে দেন। এক সে বাড়কার এক চলচ্চিত্রের শীর্ষ গানের মাধ্যমে তিনি সংগীত পরিচালক কল্যাণজি-আনন্দজির সাথে প্রথম কাজ করেন। এই গানের রেকর্ডিংয়ের সময় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মুঙ্গেশকর তাকে আশীর্বাদ করেন। তিনি “ও মেরা বাবু চেল চাবিলা” ও “দামা দম মাস্ত কালান্দার” গান দিয়ে ভারত জুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
রুনা লায়লা চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত শিল্পী নামক চলচ্চিত্রে চিত্রনায়ক আলমগীরের বিপরীতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শিল্পী চলচ্চিত্রটি ইংরেজি চলচ্চিত্র দ্য বডিগার্ড-এর ছায়া অবলম্বনে চিত্রিত হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন
রুনা লায়লা তিনবার বিয়ে করেন। প্রথমবার তিনি খাজা জাভেদ কায়সারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দ্বিতীয়বার তিনি সুইস নাগরিক রন ড্যানিয়েলকে বিয়ে করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি বাংলাদেশি অভিনেতা আলমগীরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার এক কন্যা – তানি লায়লা। তার দুই নাতি জাইন এবং অ্যারন।
ডিস্কোগ্রাফি
স্টুডিও অ্যালবাম
- আই লাভ টু সিং ফর ইউ
- সিনসিয়ারলি ইয়োরস রুনা লায়লা
- গীত/গজলস (১৯৭৬)
- রুনা ইন পাকিস্তান (গীত) (১৯৮০)
- রুনা ইন পাকিস্তান (গজল) (১৯৮০)
- রুনা গোজ ডিসকো (১৯৮২)
- রুনা সিংস শাহবাজ কালান্দার (১৯৮২)
- সুপার রুনা (১৯৮২)
- গঙ্গা আমার মা পদ্মা আমার মা
- দ্য লাভারস অব রুনা লায়লা
- বাজম-এ-লায়লা
- রুনা লায়লা-মুডস অ্যান্ড ইমোশনস (২০০৮)
- রুনা লায়লা-কালা শাহ কালা (২০১০)

একক সঙ্গীত
| বছর | গান | সঙ্গীত পরিচালক | গীতিকার | সহশিল্পী | মন্তব্য |
| ২০১৬ | “আই লাভ মাই বাংলাদেশ” | রাজা কাশেফ | দীপক কুমার দ্বীপ | রুবায়েত জাহান | স্বাধীনতা দিবসে গানটি বাজারে আসে |
চলচ্চিত্রের গান
| বছর | অনুষ্ঠান | ভূমিকা | চ্যানেল | দেশ |
| ১৯৯৯ | সারেগামাপা (হিন্দি) | বিচারক | জিটিভি | ভারত |
| সারেগামাপা বিশ্বসেরা | বিচারক | জি বাংলা | ভারত | |
| ২০১২ | সুরক্ষেত্র | বিচারক | দুবাই | |
| সেরাকণ্ঠ | বিচারক | চ্যানেল আই | বাংলাদেশ | |
|
২০১৩
|
পাওয়ার ভয়েস | বিচারক | চ্যানেল নাইন | বাংলাদেশ |
| মীরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জার ৭ | অতিথি | জি বাংলা | ভারত | |
| ২০১৪ | আমাদের কিংবদন্তি | অতিথি | বাংলাভিশন | বাংলাদেশ |
|
২০১৫
|
ক্ষুদে গানরাজ | অতিথি বিচারক | চ্যানেল আই | বাংলাদেশ |
| গ্রেট মিউজিক গুরুকুল | অতিথি বিচারক | কালারস বাংলা | ভারত | |
| ২০১৬ | দাদাগিরি | অতিথি | জি বাংলা | ভারত |
পুরস্কার ও সম্মাননা
বাংলাদেশ
- স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার
- জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী – দি রেইন (১৯৭৬)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী – যাদুর বাঁশি (১৯৭৭)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী – অ্যাক্সিডেন্ট (১৯৮৯)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী – অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী – তুমি আসবে বলে (২০১২)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী – দেবদাস (২০১৩)
- বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী – প্রিয়া তুমি সুখী হও (২০১৪)
- টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্রাব) পুরস্কার – আজীবন সম্মাননা।
- জয়া আলোকিত নারী সম্মাননা(২০১৬)
- দ্য ডেইলি স্টার-স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড জীবনের জয়গান – আজীবন সম্মাননা(২০১৮)

ভারত
- সায়গল পুরস্কার
- সংগীত মহাসম্মান পুরস্কার – ২০১৩
- তুমি অনন্যা সম্মাননা – ২০১৩
- দাদা সাহেব ফালকে সম্মাননা – ২০১৬
পাকিস্তান
- নিগার পুরস্কার (১৯৬৮, ১৯৭০)
- ক্রিটিক্স পুরস্কার
- গ্র্যাজুয়েট পুরস্কার (২ বার)
- জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক


