Image default
জীবনী

বাংলার নায়ক জসিমের জীবনী, শিক্ষা, ফ্যামিলি,চলচ্চিত্র, সিনেমা, এবং সম্পূর্ণ প্রোফাইল

আবুল খায়ের জসিম উদ্দিন (পেশাদার নাম জসিম নামেই অধিক পরিচিত; আগস্ট ১৪, ১৯৫০ – অক্টোবর ৮, ১৯৯৮) ছিলেন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক, ফাইট পরিচালক ও একজন মুক্তিযোদ্ধা। অনেকেই তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাকশনের পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে করেন। তিনি প্রখ্যাত অভিনেতা আজিমের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন। ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়।

 

জসিম প্রাথমিক জীবন

জসিম ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন। জসিম ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

 

জসিম চলচ্চিত্র জীবন

৯০ এর দশকে একটি ছবির শুটিং এর সময়ে জসিম
জসিম আশির দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। জসিম চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন দেবর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে। এই ছবিতে জসিম চলচ্চিত্র পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ১৯৭৩ সালে তিনি রংবাজ ছবিতে অ্যাকশন ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন তিনি। তিনি পরিচিতি পান দেওয়ান নজরুল পরিচালিত দোস্ত দুশমন চলচ্চিত্রে খলনায়কের অভিনয় করে। খলনায়ক চরিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করলেও পরবর্তীকালে নায়ক হিসেবেও তিনি সফলতা পেয়েছিলেন। দোস্ত দুশমন ছবিটি সাড়াজাগানো হিন্দি চলচ্চিত্র শোলের পুনর্নিমাণ। ছবিটিতে তিনি গাফফার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। খোদ শোলে ছবির নামকরা চরিত্র গব্বার সিং এর আদলে থাকা ভারতীয় খলনায়ক আমজাদ খান পর্যন্ত ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন জসিমের। তার খলনায়ক অভিনয়ের সমাপ্তি ঘটে ‘সবুজ সাথী’চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। সবুজ সাথী চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নায়ক হিসেবেই অভিনয় চালিয়ে যান।

আশির দশকের সকল জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন এই অ্যাকশন অভিনেতা। তবে শাবানা ও রোজিনার সাথে তার জুটিই সবচেয়ে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তাকে শোষণ-বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা যায়।

 

জসিম ব্যক্তিগত জীবন

জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ড্রিমগার্লখ্যাত নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক ছবির নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন । জসিমের তিন ছেলে রাতুল, রাহুল, সামি । যার মধ্যে রাতুল ও সামি ‘ওউনড’ ব্যান্ডের বেজিস্ট ও ড্রামার আর রাহুল ‘ট্রেইনরেক’ ব্যান্ডের গিটারিস্ট।

 

জসিম সম্পূর্ণ জীবনী তথ্য
পুরো নাম: বুল খায়ের জসিম উদ্দিন
ডাক নাম: জসিম
পেশা: অভিনেতা,প্রযোজক
জন্ম তারিখ: ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট
জন্মস্থান: নবাবগঞ্জ, ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান
বয়স: ৪৮
কি কারণে বিখ্যাত: ভালো অভিনয় করার কারণে
জাতীয়তা: বাংলাদেশী
ধর্ম: ইসলাম
লিঙ্গ: পুরুষ
রাশি: এন/এ
পিতা: এন/এ
মা: এন/এ
বৈবাহিক অবস্থা: বিবাহিত
স্ত্রী নাসরিন জসিম
মৃত্যুবার্ষিকী অক্টোবর ৮, ১৯৯৮
ছেলে: রাতুল, রাহুল, সামি,

 

জসিম চলচ্চিত্রের তালিকা
দেবর (১৯৭২) ন্যায় অন্যায় (১৯৯১)
রংবাজ (১৯৭৩) – জসিম লক্ষ্মীর সংসার (১৯৯২)
ভাইবোন (১৯৭৪) শান্তি অশান্তি (১৯৯২)
এপার ওপার (১৯৭৫) – আসলাম হিংসা (১৯৯৩)
প্রতিনিধি (১৯৭৬) নাগ নাগিনীর প্রেম (১৯৯৩)
এক মুঠো ভাত (১৯৭৬) আশিক প্রিয়া (১৯৯৩)
কাজল রেখা (১৯৭৬) কালিয়া (১৯৯৪) – কালিয়া
নিশান (১৯৭৭) বাংলার নায়ক (১৯৯৫) – ডন
দোস্ত দুশমন (১৯৭৭) – গাফফার খান ঘাত প্রতিঘাত (১৯৯৬)
রাজদুলারী (১৯৭৮) গরীবের সংসার (১৯৯৬)
আসামী হাজির (১৯৭৮) – ডাকু ধর্মা গরীবের ওস্তাদ (১৯৯৬)
তুফান (১৯৭৮) নিষ্ঠুর (১৯৯৬)
মহেশখালীর বাঁকে (১৯৭৮) স্বামী কেন অাসামী (১৯৯৭)
নাগ নাগিনী (১৯৭৯) ফাইভ রাইফেলস (১৯৯৭)
বিজয়িনী সোনাভান (১৯৭৯) টাইগার (১৯৯৭)
সুন্দরী (১৯৭৯) – ঈমান আলী মেয়েরাও মানুষ (১৯৯৮)
প্রতিজ্ঞা (১৯৮০) ভালবাসার ঘর (১৯৯৭)
কসাই (১৯৮০) দুই রংবাজ
নবাবজাদী (১৯৮১) জবাব
বাঁধনহারা (১৯৮১) বদলা
ওস্তাদ সাগরেদ (১৯৮১) যাদুনগর
সবুজ সাথী (১৯৮২) গর্জন
লাইলী মজনু (১৯৮৩) – ডাকু সর্দার মোহামম্দ আলি
ঘরের বউ (১৯৮৩) আখেরী মোকাবেলা
জনি (১৯৮৩) হিরো
নাজমা (১৯৮৩) – জাফর মির্জা বাইদা
অভিযান (১৯৮৪) – রউফ রাজা বাবু
জিদ্দি (১৯৮৫) গরিবের মাস্তান
আক্রোশ (১৯৮৬) স্বামীর আদেশ
অশান্তি (১৯৮৬) বিজয়
নিষ্পাপ (১৯৮৬) ওমর আকবর
রকি (১৯৮৬) পরিবার
লালৃু মাস্তান (১৯৮৭) – রাজু / লালু রক্তের বদলা
সারেন্ডার (১৯৮৭) – জসিম সাহস
মাস্তান (১৯৮৭) গর্জন
সুখ শান্তি (১৯৮৭) হাবিলদার
আদিল (১৯৮৮) শত্রুতা
ভাইজান (১৯৮৯) – লাট মান সম্মান
ছোট বউ (১৯৯০) প্রতিহিংসা
ধনরত্ন (১৯৯০) জিজ্ঞাসা
কাজের বেটি রহিমা (১৯৯১) রূপসী নাগিন

 

নায়ক জসিম সম্পর্কে অজানা তথ্য

ঢাকাই সিনেমার আশি দশকের দাপুটে চিত্রনায়ক জসিম। ভিলেন হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে অ্যাকশন হিরো হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন চিত্রনায়ক জসিম। জসিম ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিন উপলক্ষে পাঠকদের জন্য দশটি বিষয় তুলে ধরা হলো। যা হয়তো অনকেরই অজানা।

১. জসিমের আসল নাম আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন।

২. ১৯৭৩ সালে জসিম প্রয়াত জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ (বাংলাদেশের প্রথম অ্যাকশন দৃশ্য যুক্ত করা ছবি) ছবিতে খলনায়ক হিসেবে অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন।

৩. সুভাস দত্তের ‘সবুজ সাথী’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।

৪. মুক্তিযোদ্ধা জসিম ‘৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে দুই নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

৫. দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’ ছবির মাধ্যমে জসিম আলোড়ন তোলেন। ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিটি হিন্দি সাড়াজাগানো ফিল্ম ‘শোলে’ ছবির রিমেক। ছবিটিতে তিনি গব্বারের চরিত্র করেছিলেন। খোদ শোলে ফিল্মের নামকরা চরিত্র গব্বার সিং এর আদলে থাকা ভারতীয় খলনায়ক আমজাদ খান পর্যন্ত ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন জসিমের।

৬. জসিমের মৃত্যুর পর এফডিসিতে তার নামে একটি ফ্লোরের নামকরণ করা হয়।

৭. তিনিই একমাত্র নায়ক, যিনি শাবানার সাথে একই সাথে প্রেমিক এবং ভাইরূপে চরিত্রদান করেছিলেন এবং দুটি চরিত্রই দর্শকরা খুব সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, যে শাবানা ‘সারেন্ডার’ ছবিতে জসিমের প্রিয়তমা হিসেবে সফল হয়েছেন, সেই শাবানা ‘অবদান’, ‘মাস্তান রাজার’ মতো ছবিতে জসিমের বড় বোন হয়ে সফল হয়েছিলেন।

৮. জসিমই আবিষ্কার করেছিলেন আজকের নায়ক রিয়াজকে। ১৯৯৪ সালে রিয়াজ চাচাতো বোন ববিতার সাথে বিএফডিসিতে ঘুরতে এসে নায়ক জসিমের নজরে পড়েন। জসিম তখন তাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। ১৯৯৫ সালে জসিমের সাথে ‘বাংলার নায়ক’ নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেন রিয়াজ।

৯. জসিমের তিন ছেলে। রাতুল, রাহুল, সামি। যার মধ্যে রাতুল ও সামি ‘Owned’ ব্যান্ডের বেজিস্ট ও ড্রামার (এই ব্যান্ডদল বর্তমানে অনেক ট্রেন্ডিং ব্যান্ড)। রাহুল ‘Trainwreck’ ব্যান্ডের গিটারিস্ট (এই ব্যান্ডের ড্রামারই পরে অর্থহীন ব্যান্ডে যোগ দিয়েছেন) আর সামি ‘Porahor’ এর ড্রামার।

১০. জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ড্রিমগার্ল খ্যাত নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক ছবির নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন।

 

নায়ক জসিম মৃত্যু:

জসিম ১৯৯৮ সালের ৮ই অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে পরলোকগমন করেন । জসিমের মৃত্যুর পর এফডিসিতে তার নামে একটি ফ্লোরের নামকরণ করা হয়।

Related posts

আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী

News Desk

বাংলার ছেলে অরিজিৎ সিং এর বলিউডে সুপার স্টার হয়ে ওঠার গল্প

News Desk

শাহরিয়ার আহমেদ সাকিব থেকে সামস ভাই হয়ে ওঠার গল্প

News Desk

Leave a Comment