কখনো ব্যবসায়ী, কখনো মানবতাবাদী কখনো বা রাজনীতিবিদ কিংবা উপস্থাপিকা, আবার কখনো ইউটিউবে নানা বিষয়ের বিশ্লেষক-সমালোচক। বলছিলাম হেলেনা জাহাঙ্গীর এর কথা। বেশ কয়েক বছর ধরেই যে নামটি বহুল চর্চিত নামের মধ্যে একটি। ২০১৫ সালে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের আগে মনোনয়ন চেয়ে এবং ‘সিস্টার হেলেন’ নামে রাজধানী জুড়ে পোস্টার সাঁটিয়ে ছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। যদিও পরে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনের সময়ে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ না হয়ে স্বতন্ত্র রাজনীতি করার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তবে অনেকেই মনে করেন, আলোচনায় আসার জন্যেই এই কাজ টি করেছেন হেলেনা।

হেলেনা জাহাঙ্গীর জীবনী:

হেলেনা জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার তেজগাঁওয়ে। তার বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। সেই সূত্রে জন্ম কুমিল্লায় হলেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী, সদরঘাট এলাকায়। পড়াশোনা করেন স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে। চাকুরি সূত্রে তার বাবা প্রমোশনাল প্রস্তাব পেয়ে রাশিয়ায় চলে গেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি ফিরে যান হেলেনা।

সম্পূর্ণ প্রোফাইল
পুরো নাম: হেলেনা জাহাঙ্গীর
ডাক নাম: হেলেনা জাহাঙ্গীর
পেশা: রাজনীতিবিদ,উপস্থাপিকা,বিশ্লেষক-সমালোচক
জন্মস্থান: ২৯ আগস্ট ১৯৭৪
কি কারণে বিখ্যাত: রাজনীতিবিদ,উপস্থাপিকা,বিশ্লেষক-সমালোচক
জাতীয়তা: বাংলাদেশি
ধর্ম: ইসলাম
লিঙ্গ: মহিলা
বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ
স্কুল কৃষ্ণচূড়া স্কুল(চট্টগ্রাম)
কর্ম জীবন

১৯৯০ সালে, ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন হেলেনা। তখন তিনি ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী। স্বামীর সংসারেও পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন ও স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে হেলেনা জাহাঙ্গীর শুরুতে চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন। বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারভিউও দিলেও এক পর্যায়ে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর শুরু করেন তার উদ্যোক্তা জীবন। যদিও উইকি ফ্যাক্টসাইডার নামের একটি ওয়েবসাইটে তার পেশা হিসেবে অ্যাংকর বা উপস্থাপক উল্লেখ করা হয়েছে।১৯৯৬ সালে, রাজধানীর মিরপুর ১১ তে একটি ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে তিনি শুরু করেন প্রিন্টিং ও অ্যামব্রয়ডারি ব্যবসায়। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের পরিচালক হয়েছেন।

‘জয়যাত্রা’ নামে একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। পরবর্তীতে আইপিটিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পদ অলংকৃত করেছেন। জানা গেছে, হেলেনা জাহঙ্গীর প্রিন্টিং, অ্যামব্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার এবং ওভেন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। সব মিলিয়ে ১২ হাজারেও বেশি কর্মী আছে তার এসব প্রতিষ্ঠানে। জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে নানা সামাজিক কাজ-কর্ম করেন তিনি। গরীব অসহায়দের পাশে দাঁড়ান, বিতরণ করেন শীতবস্ত্র।রোটারি ক্লাবের একজন ডোনার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কৃতও হয়েছেন এই নারী। এছাড়াও শীর্ষ নারী উদ্যোক্তার পুরস্কারও পেয়েছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন

রাজনৈতিক অঙ্গনেও হেলেনার দাপুটে উত্থান ও পদচারণা রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। রাজনীতিতে যোগ দেয়ার কিছু দিনের মাথায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্যও মনোনিত হন এবং কুমিল্লা উত্তরের আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদও পান হেলেনা জাহাঙ্গীর।

সামাজিক ও জনকল্যাণমুলক সংগঠন

শুধু রাজনৈতিক কিংবা ব্যবসায়িক ভাবেই নয়, বিভিন্ন সামাজিক ও জনকল্যাণমুলক সংগঠনগুলোর সঙ্গেও হেলেনা জাহাঙ্গীরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। হেলেনা জাহাঙ্গীর গুলশান ক্লাব, গুলশান নর্থ ক্লাব, বারিধারা ক্লাব, কুমিল্লা ক্লাব, গলফ ক্লাব, গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাব, বোট ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, উত্তরা লেডিস ক্লাব, গুলশান ক্যাপিটাল ক্লাব, গুলশান সোসাইটি, বনানী সোসাইটি, গুলশান জগার্স সোসাইটি ও গুলশান হেলথ ক্লাবের নেতৃস্থানীয় দায়িত্বে রয়েছেন।

হেলেনা জাহাঙ্গীর ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)’ এর সদস্য ও নির্বাচিত পরিচালক। এ ছাড়া তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও সক্রিয় সদস্য তিনি।

আলোচনা সমালোচনা

সেই যে ‘সিস্টার হেলেন’ পোস্টার সাঁটিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন, তারপর বারবার আলোচনার এসেছেন এই নারী উদ্যোক্তা। রাজনীতিবিদ, সেলিব্রিটি, উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি সবার সঙ্গে যখনই সুযোগ পেয়েছেন সেলফি তুলে নেট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়ে সব সময় আলোচনায় থাকতে চেয়েছেন তিনি। এছাড়াও ইফতার মাহফিলে গান গেয়ে, মাহফুজুর রহমানের সাথে গান গেয়ে, পরী মনিকে নিয়ে লাইভ করে আলোচনায় থেকেছেন হেলেনা।

সম্প্রতি আবারও তিনি আলোচনায়। আলোচনার নাম “চাকরীজীবী লীগ”। নিজেকে চাকরীজীবী লীগ নামে আওয়ামী লীগ এর একটি সংগঠন এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বলে গুজব ছড়াচ্ছিলেন হেলেনা। অথচ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে এ ধরনের কোনো সংগঠন নেই। শুধু তাই নয়, ফেসবুকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেতা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তিনি রীতিমত বিস্মিত করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের। থেমে থাকেননি আওয়ামী লীগও। এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে হেলেনাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) আটক

গত ২৯ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত ১১ টার দিকে গুলশান ২ এর ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসা থেকে তাকে আটক করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। র‌্যাবের দাবি, অভিযানে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, বিদেশি মুদ্রা, চাকু আর হরিনের চামড়া পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরবর্তীতে তাকে র‌্যাবের হেডকোয়ার্টারে নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে ৩০ জুলাই শুক্রবার আদালতে তোলা হয়েছে তাকে। এসময় আদালতে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গুলশান থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের দুই পৃথক মামলায় ১০ দিন করে মোট ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এ মামলার রায় কি হয় সেটা এখন দেখার অপেক্ষা।

Related posts

আঁচলের জন্ম, ব্যক্তিগত জীবন ,দাম্পত্য সঙ্গী, সিনেমা এবং তথ্য প্রোফাইল

News Desk

চার মাসেই ইউনিকর্ন থেকে ডেকাকর্ন

News Desk

রবিন ঘোষ: পাকিস্তানে সম্মানিত, বাংলাদেশে অবহেলিত এক সুরের জাদুকর

News Desk

Leave a Comment