সাগরে ফিরছেন জেলেরা, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
বাংলাদেশ

সাগরে ফিরছেন জেলেরা, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

বুধবার মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে সমুদ্রে মাছ ধরার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ কারণে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলেরা। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল থেকে আবারও সাগরে নামছেন টেকনাফ উপজেলার হাজারো জেলে।

ইলিশসহ ৪৭৩ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও ১৫ এপ্রিল থেকে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সরকার। তবে নাফনদ ছিল নিষেধাজ্ঞা বাইরে।

স্থানীয় জেলেরা বলছেন, মধ্যরাতে আবারও সাগরে মাছ শিকারের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জেলেরা। ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ বেচাকেনার বৃহৎ পাইকারি বাজার দ্বীপে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। আড়তগুলোতে জেলেসহ এ পেশা-সংশ্লিষ্ট মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। বরফ কলগুলোও ফিরেছে উৎপাদনে। ট্রলারমালিকরাও আবার ট্রলারের জাল-জ্বালানি-খাবারসহ বাজার, বরফ বোঝাই করে জেলেদের সাগরমুখী যাত্রার অপেক্ষায় রয়েছেন।

উপকূল ঘুরে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা শেষে স্বস্তি ফিরেছে জেলেদের মাঝে। বিগত দিনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন। আবারও জেলে, পাইকার, আড়তদারের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠবে টেকনাফ সৈকতের মাছ ঘাটগুলো। তাই জেলেপাড়ায় নতুন স্বপ্ন নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

শাহপরীর দ্বীপের আবদুর গফুর নামে এক জেলে বলেন, ‘১৫ বছর ধরে সাগরে যাই। এবারে সবাই মিলে আন্তরিকভাবে নিষেধাজ্ঞা পালন করেছেন। এখন ইলিশের আশায় সাগরে নামার প্রস্তুতি শেষ করেছি।’

টেকনাফ পৌরসভার খায়ুকখালী ঘাটে মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সৈয়দ আলম বলেন, ‘জেটি মেরামত, ধোয়ামোছা সব শেষ করেছেন জেলেরা। এখন সবাই বরফ নেওয়ার কাজ করছেন। ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক ফিশিং বোট এই ঘাট থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। একেকটি মাঝারি ট্রলারে তেল, বরফ, বাজার-সওদা মিলে কমপক্ষে ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা খরচ হচ্ছে এবারে সাগরযাত্রায়। বড় ট্রলারে কমপক্ষে দুই  লাখ টাকা লাগছে।’

এদিকে, ভারতের সঙ্গে মিল রেখে এবার সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় ঠিক করেছিল সরকার। ফলে এ বছর প্রচুর ইলিশ মিলবে বলে প্রত্যাশা জেলেদের। সাধারণত প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরা বন্ধ থাকে। তবে ভারতে প্রতিবছর মাছ ধরা বন্ধ থাকে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৬১ দিন। আর মিয়ানমারে নিষেধাজ্ঞার এই সময় ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ৯১ দিন। বাংলাদেশের জেলেরা যখন সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রাখেন, তখন প্রতিবেশী দেশের জেলেরা এ দেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরে থাকেন। এই কারণে মৎস্যজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে নিষেধাজ্ঞার সময় সমন্বয়ের দাবি করে আসছিলেন।

ট্রলারমালিক সভাপতি গফুর আলম বলেন, ‘৫৮ দিন অবরোধের কারণে কষ্টে জীবনযাপন করা জেলেদের মুখে এখন হাসি ফুটেছে। শাহপরীর দ্বীপ উপকূলের প্রায় ৫ শতাধিক ট্রলার সাগরে মাছ শিকারের জন্য যাত্রা শুরু করেছে। এলাকার মাছের আড়তগুলোয় নতুন করে ধোয়ামোছার কাজ চলছে। জেলেপল্লিগুলোও কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে।’

টেকনাফ উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাগরে নিষেধাজ্ঞার ফলে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ সুষ্ঠুভাবে প্রজনন করতে পেরেছে বলে আমরা আশা করছি। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেদের প্রণোদনার চাল সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এখানে ১০ হাজার ৭৭৩ জন জেলেকে ৫৮ কেজি করে ৬ লাখ ২৫ হাজার কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মূলত দুটি কারণে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রথমত, মাছ নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়তে পারে। দ্বিতীয়ত, ছোট মাছকে বড় হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। এবারের নিষেধাজ্ঞা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ বছর সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে বলে আশা করছি। তবে নাফনদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল না।’

Source link

Related posts

ইউএনও লাঞ্ছিতের ঘটনায় আ.লীগ ও যুবলীগের ৫ নেতা বহিষ্কার

News Desk

নারায়ণগঞ্জে পত্রিকা অফিসে হামলা, আরও ৩ আসামি রিমান্ডে

News Desk

ছয় ঘণ্টায় ৪.৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে সাতক্ষীরার একটি কেন্দ্রে

News Desk

Leave a Comment