এ মাসেই শেষ হচ্ছে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার, ২ নভেম্বর চলবে ট্রেন
বাংলাদেশ

এ মাসেই শেষ হচ্ছে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার, ২ নভেম্বর চলবে ট্রেন

সংস্কার কাজ শেষে আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যেই ট্রেন চলাচলের উপযোগী হচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর অবস্থিত ৯২ বছরের পুরনো কালুরঘাট সেতু। আগামী ২ নভেম্বর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন নির্মিত রেলপথে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলবে। ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে এ রেললাইনটি উদ্বোধন করবেন। চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি কালুরঘাট সেতু হয়ে কক্সবাজার যাবে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী জানান, আগামী ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে। এতে রেলমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

গত ১৬ অক্টোবর সকালে চট্টগ্রাম কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এ সময় মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেতুটি শিগগিরই ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী হবে। আগামী ২ নভেম্বর এ সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবে। এটি দিয়ে ১৫ টনের মিটারগেজ ইঞ্জিন চলতে পারবে। সংস্কারের পর আগামী ২০ বছর এ সেতু দিয়ে ঝুঁকিমুক্তভাবে ট্রেন চলতে পারবে।’

এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি নতুন একটি সেতু নির্মাণ করা। আমরা আশা করছি সেটা আগামী বছর থেকে কাজ শুরু করতে পারবো।’

কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজের পরিচালক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল আমিন বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর ওপর দিয়েই কক্সবাজারে ট্রেন নিতে হবে। এই কারণে সেতুটির সংস্কার করা হচ্ছে। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে সেতুর ওপর রেললাইনটির কাজ আগে শেষ করা। পরের স্টেপে পথচারীদের জন্য সেতুর দুই পাশে দুটি ওয়াকওয়ে করা হবে। পরে যাতে এ সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলতে পারে এ জন্য রেললাইনের ওপর কার্পেটিং করা হবে। কাজের অগ্রগতি ভালো। আগামী ২ নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে এ সেতুর ওপর দিয়ে কক্সবাজার যাবে। এর আগেই আমরা ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত করতে পারবো বলে আশা করছি।’

গত ১ আগস্ট থেকে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয়। দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন যোগাযোগ চালুর আগেই সেতুটির শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কালুরঘাট সেতুটির সংস্কার করা হচ্ছে। বর্তমানে সেতু দিয়ে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। সেতুর নিচে ফেরি দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদেরকে।

৩১ অক্টোবরের মধ্যে সেতুর সংস্কার কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে এখন আরও কয়েকমাস বাড়তি সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা।

এ মাসেই শেষ হচ্ছে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার, ২ নভেম্বর চলবে ট্রেন

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির সংস্কার করা হচ্ছে। বুয়েটের পরামর্শক দলের সুপারিশ অনুযায়ী সেতুটি সংস্কার করা হচ্ছে। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে ১০ টন ভারী ইঞ্জিন চলাচল করতে পারে। সেতু পার হওয়ার সময় গতি থাকে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। তবে কক্সবাজারগামী ইঞ্জিনের ওজন হবে ১২ থেকে ১৫ টন। ট্রেনের গতি হবে সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। দোহাজারী-কক্সবাজার রেল যোগাযোগের সুফল পেতে সেতুটি সংস্কার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

উল্লেখ্য, ১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও পরে দোহাজারী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় এই রেললাইন। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে আরেক দফা সংস্কার করেছিল রেলওয়ে। কিছুদিন না যেতেই সেতুটির অবস্থা পুনরায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়িও চলাচল করতো।

Source link

Related posts

উত্তরের ৩০ কিমি সড়কে থেমে থেমে চলছে গাড়ি, দুর্ভোগ চরমে

News Desk

চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ জনের মৃত্যু

News Desk

প্রতি বছর বাড়ছে তাপমাত্রা: পরিবেশ ধ্বংসের বিরূপ প্রভাব বলছেন বিশেষজ্ঞরা

News Desk

Leave a Comment