Image default
বাংলাদেশ

১১ জেব্রার মৃত্যুর পরও সতর্কতা নেই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের আফ্রিকান সাফারিতে ১১টি জেব্রার মৃত্যুর পরও প্রাণীদের খাদ্য পরিবেশনে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে না। এ প্রক্রিয়া বিশেষজ্ঞ প্রাণী চিকিৎসক বোর্ডের সদস্যদের দেওয়া বিধির বিপরীত। এ ছাড়া ফেন্সি ডাক গার্ডেনে কোনও হাঁস নেই। বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিন পার্কে এই দৃশ্য দেখা গেছে।

পার্কের জেব্রার মৃত্যুর পর প্রাণী বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা যে দশটি সুপারিশমালা দিয়েছিলেন তার মধ্যে খাবার পরিবেশনের বিষয়টি ছিল অন্যতম। প্রাণীর খাবার ধুয়ে পরিষ্কার ট্রের মধ্যে ঘাস পরিবেশন করার নির্দেশনা ছিল ওই টিমের সদস্যদের। এ ছাড়াও কৃমিনাশক ওষুধ প্রয়োগ, বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার সুপারিশও রয়েছে।

এসব বিষয়ে মেডিক্যাল টিমের সদস্য ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উকিল উদ্দিন বলেন, ‘ধুলা-ময়লাযুক্ত ও গাড়ির ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকা খাবার সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে। এ কারণেই ১০ দফা সুপারিশের মধ্যে সতর্কতামূলক পরিবেশ এবং পরিপূর্ণ খাবার পরিবেশনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খাবার পরিবেশনে সতর্কতা অবলম্বন না করলে ভবিষ্যতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়ে আরও পশুমৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।’

পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে ছড়ানো-ছিটানো রয়েছে ঘাসজাতীয় পশুখাদ্য। জেব্রা, হরিণ ও অন্য প্রাণীরা সেগুলো খাচ্ছে। ফেন্সি ডাক গার্ডেনের লেকে কোনও হাঁস নেই। ইঞ্জিনচালিত তিনটি ভাঙা নৌকা লেকের পানিতে অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্কে কর্মরত কয়েকজন জানান, করোনা সংক্রমণের আগেও নৌকাগুলো দিয়ে দর্শনার্থীদের লেকের জলাশয়ে ঘুরিয়ে দেশি-বিদেশি হাঁসসহ নানা ধরনের প্রাণী দেখানো হতো। কমপক্ষে দুইশ’ হাঁস কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দল বেঁধে লেকের পানিতে ঘুরে বেড়াতো। ওইসব হাঁসের মধ্যে ডজনখানেক ময়ূরকে বেষ্টনীর পাশে পাখিশালার জলাশয়ে দেখা গেছে। লেকের পানিতে ইঞ্জিনচালিত তিনটি নৌকায় মরিচা ধরেছে। পানির ওপর ঝুলন্ত সেতুটি অব্যবহৃত রয়েছে এবং তাতে মরিচা ধরেছে। পার্কে দর্শনার্থীর চাপ যেদিন বেশি থাকতো সেদিন কোর সাফারির নির্দিষ্ট পরিবহন ছাড়াও বাইরের কয়েকটি পরিবহনে দর্শনার্থীদের ঘুরিয়ে দেখানো হতো। অপরিচিত পরিবহন দেখে জেব্রাসহ অন্য প্রাণীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ছোটাছুটি করে আঘাত পেতো বলেও জানা গেছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সফরে না গেলেও কোর সাফারিতে প্রবেশে শিক্ষার্থী শ্রেণিতে প্রবেশ মূল্য রাখা হতো না। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক কোটায় প্রবেশমূল্য রাখা হতো।

ছড়ানো-ছিটানো খাবার খাচ্ছে হরিণ ক্যাঙ্গারু বেষ্টনীতে কোনও ক্যাঙ্গারু নেই। একটি ক্যাঙ্গারু পার্কেই জন্ম নিয়েছিল। তিনটি ক্যাঙ্গারু ছিল ওই বেষ্টনীতে। ২০১৮ সালে ক্যাঙ্গারুশূন্য হয়ে পড়ে পার্কটি। কিন্তু কী কারণে ক্যাঙ্গারু মারা গেলো তার কারণ জানাতে পারেনি পার্ক কর্তৃপক্ষ।

এসব বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে সেগুলোর বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারও দায়িত্বে অবহেলা পাওয়া গেলে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বুধবার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। পার্কে যেসব সমস্যা রয়েছে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সেগুলো চিহ্নিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে। সমস্যা ধরে ধরে সেগুলোর সমাধান দেওয়া হবে।’

অব্যবহৃত ঝুলন্ত সেতুতে মরিচা ধরেছে প্রসঙ্গত, গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে নয়টি জেব্রা মারা যায়। ওই ঘটনায় প্রাণী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ড ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং দেশের বিভিন্ন ল্যাবে নমুনা পাঠিয়ে প্রতিবেদন সংগ্রহ করে। পরীক্ষায় প্রাপ্ত ২৩টি প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল ২৫ জানুয়ারি পার্কের ঐরাবতী বিশ্রামগারে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিশেষজ্ঞ বিশেষ চিকিৎসক বোর্ড মারামারি করে চারটি এবং অন্য পাঁচটি জেব্রা ইনফেকশনাল ডিজিজে মারা গেছে বলে জানায়। পরে বোর্ডের সদস্যরা পরিষ্কার ট্রেতে প্রাণীদের ঘাস পরিবেশন করা, কৃমিনাশক ওষুধ প্রয়োগ, বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করাসহ ১০ দফা সুপারিশ করেন। এদিকে ৩০ জানুয়ারি অসুস্থ হয়ে আরও দুটি জেব্রা মারা যায়।

এদিকে জেব্রাগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন এবং করণীয় বিষয়ে মতামত দেওয়ার লক্ষ্যে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। পরে শনিবার আরও দুটি জেব্রা মারা যায়। ২৯ জানুয়ারি গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় পার্ক পরিদর্শনে গেলে একটি পুরুষ বাঘ মৃত্যুর তথ্য বেরিয়ে আসে। ১২ জানুয়ারি ওই বাঘটি মারা যায়। কিন্তু কী কারণে বাঘের মৃত্যু হয়েছে ল্যাব প্রতিবেদন না অসার কারণ জানিয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি পার্ক কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা জেব্রা নানা সময়ে বংশবিস্তারের পর পার্কটিতে এর সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়ে ৩১টিতে দাঁড়ায়। এর মধ্যে ১১টির মৃত্যুর পর পার্কে এখন জেব্রা রয়েছে ২০টি।

জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান এবং বন্যপ্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ জুলকার নাইনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সোমবার বন অধিদফতরের এক প্রশাসনিক নির্দেশে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্থলে ফরিদপুর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলাম এবং ডুলহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

Source link

Related posts

স্বপ্ন ও চ্যালেঞ্জের টানেল এখন বাস্তবতা, আপ্লুত প্রকল্প কর্মকর্তা

News Desk

ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি করায় দোকান ভাঙচুর, বসন্তবরণ অনুষ্ঠান স্থগিত

News Desk

২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক

News Desk

Leave a Comment