Image default
বাংলাদেশ

রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৩৮.৩ ডিগ্রি, বৃষ্টির জন্য হাহাকার

একদিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে গরমের তীব্রতা কিছুটা কমেছে। শনিবার (১৬ এপ্রিল) রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা ৩টার দিকে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে বিকাল ৪টার পর থেকে ৩৮ ডিগ্রির নিচে নামতে থাকে তাপমাত্রার পারদ। তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও হচ্ছে না বৃষ্টি।

এর আগের দিন শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাজশাহীতে গত আট বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহীর আবহাওয়া অফিসের সহকারী কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন জানান, রাজশাহীর ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ। যা আগামী কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। এক দিনের ব্যবধানে শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। এ দিন রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মার্চের মধ্যভাগ থেকে এপ্রিলের মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে রাজশাহীর ওপর দিয়ে। এর মধ্যে ৪ এপ্রিল মাত্র শূন্য দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হলেও খরাপ্রবণ এলাকা রাজশাহীতে হয়নি। ফলে রাজশাহীর ওপর দিয়ে চলমান মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ২০১৪ সালের চৈত্রে রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এ ছাড়াও স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে রেকর্ড ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল।

থার্মোমিটারের পারদ চড়তে চড়তে তাপমাত্রা যদি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে, আবহাওয়াবিদরা এটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলেন। উষ্ণতা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ। আর তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়।

এদিকে, বৈশাখের প্রথম থেকে রাজশাহীতে কোনও বৃষ্টিপাত নেই। এতে করে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। নগরীর বাসার রোড এলাকার খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘তাপমাত্রা বাড়ার কারণে চোখ-মুখ জ্বলছে। আধাঘণ্টা পরপর চোখে-মুখে পানি দিতে হচ্ছে।’

নগরীর বহরমপুর এলাকার নিমু সরকার নামের এক গৃহিণী বলেন, ‘গরমের কারণে চুলার কাছে দাঁড়ানো কষ্টকর হয়ে যায়। তাই অনেক সময় রান্না ঘরে না গিয়ে বাইর থেকে খাবার কেনা হয়। আবার রাতে রোদের তাপ না থাকলেও ঘর গরম হয়ে থাকে। জানালা দিয়ে বাইর থেকে বাতাস না প্রবেশ করায় ঘরের বিছানাও গরম হয়ে যায়। এতে করে ঠিকভাবে ঘুমানো যায় না।

এদিকে, আবহাওয়া পরিবর্তনের এ সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ থাকে। তবে প্রকোপ এবার কিছুটা বেশি। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে এখন রমজান মাস চলছে। এ সময় বাইরের অস্বাস্থ্যকর ফাস্ট ফুড মানুষ বেশি খাচ্ছে। দোকানিরা খোলা জায়গায় ভালোভাবে ঢেকে না রেখেই খাবার বিক্রি করছেন। প্রচণ্ড গরম থেকে স্বস্তি পেতে আখের রসসহ যেসব শরবত রাস্তা-ঘাটে বিক্রি হচ্ছে সেগুলোও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে। শরবত তৈরিতে তারা কী পানি ব্যবহার করছেন এটা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এসব খাবার খেয়েই মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। 

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ডায়রিয়া ব্লকে ৬৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এতে করে বর্তমানে ২০৭ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি আছেন। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ডে ৬২ জন এবং মেডিসিনে ১৪৫ জন। পূর্বের রোগী সংখ্যা ছিল ১৬৯। গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩১ জন।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাহাবুবুর রহমান বাদশাহ বলেন, ‘হঠাৎ গরম ও আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে প্রতিদিন যে হারে বাড়ছে তা উদ্বেগজনক। ডায়রিয়ায় শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুও হচ্ছে। মূলত অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে ডায়রিয়া হচ্ছে। তাই বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার আমাদের পরিহার করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডায়রিয়া সংক্রামক রোগ। যদিও মৃত্যুঝুঁকি খুবই কম। তারপরও ডায়রিয়া হলে বাসায় অপেক্ষা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অন্যথায় কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।’

Source link

Related posts

সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢলে ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

News Desk

নভেম্বরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নতির আশা প্রতিমন্ত্রীর

News Desk

নাসির-অমিসহ পাঁচজনের ১০ দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশ

News Desk

Leave a Comment