Image default
বাংলাদেশ

মৌলভীবাজারে টানা বৃষ্টিতে আমন ধান ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে শুক্রবার দিনভর বৃষ্টিতে মৌলভীবাজার জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলার কৃষিজমিতে পাকা ধান ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় আমন ধান নুইয়ে পড়েছে। তাছাড়া প্রভাব পড়েছে হাওর এবং চা জনগোষ্ঠী এলাকার মানুষের জনজীবনেও।

শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) ভোর থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাতে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শীতকালীন শাক সবজি ও বীজতলায়। 

শনিবার জেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় আমন ধান ও শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, শিম, ধনে পাতা ও টমেটোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জেলার আশ্রিদ্রোন এলাকার কৃষক শাকির মিয়া জানান, বৃষ্টির কারণ আর ভারী বাতাসে পাকা ধান তলিয়ে গেছে। কিছু জায়গায় নিচু জমিতে পাকা ধান ডুবে আছে। একইসঙ্গে শীতকালীন শাক সবজিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, ‘এবার মৌলভীবাজার জেলায় সবকটি উপজেলাতেই আমন ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে, কৃষকরাও খুশি ছিলেন। কিন্তু শুক্রবারের বৃষ্টিতে বেশ ক্ষতি হয়ে গেলো কৃষকদের।’

এবছর বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হলেও ধারাবাহিকতা থাকায় ধানে তেমন একটা রোগবালাই আসেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে সার, ডিজেল ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় ধান উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় অনেকটাই বেড়ে গেছে। এরমধ্যে শুক্রবারের টানা বৃষ্টিতে আমন ও শীতকালীন সবজি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে হাওর এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি একটু বেশি। আবার নতুন করে এই ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা। তাই তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে সরকারিভাবে ধান কেনার পরিমাণ বাড়ানোর দাবি করেন তিনি।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণে অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, এ বছর মৌলভীবাজারে ১ লাখ ২ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। ধান সম্পূর্ণ পাকতে আরও দুই সপ্তাহ লাগবে। তবে আগাম জাতের অনেক ধানকাটা হয়ে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, ‘এবার আমনের ফলন ভালো হয়েছে। জেলায় শীতকালীন সবজিও চাষ হয়েছে। বৃষ্টির কারণে আমনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাকা আমন ধান পড়ে গেছে, সেখানে পানি জমে আছে। এছাড়াও শীতকালীন সবজিরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

কত হেক্টর জমিতে আমন এবং শীতকালীন সবজি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি, দুয়েকদিনে মধ্যে তথ্য নিরূপণ করে বলতে পারবো ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ।

এদিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার হওয়ায় অফিস আদালত ও স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি না থাকলেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে চা অধ্যুষিত চা শ্রমিক ও হাওর এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষদের। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কারণে এদিন জেলা শহরেও তেমন দেখা মেলেনি রিকশা, টমটমসহ বিভিন্ন গণপরিবহনের। যে কয়েকজন বের হয়েছিলেন, তাদের অলস বসে থাকতে দেখা গেছে বিভিন্ন ছাউনির নিচে। ফলে জেলার উপজেলাগুলো থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। অনেককে আবার বৃষ্টিতে ভিজে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পৌঁছতে দেখা গেছে।

রুপসপুর এলাকার রিকশাচালক ওসমান মিয়া বলেন, ‘আমি দিনে যা আয় করি, তা দিয়ে পরিবার চালাই। বৃষ্টির মধ্যেও বের হতে পারিনি। বৃষ্টির কারণে রিকশা নিয়ে বের হলেও শহরে তেমন রোজগার হয়নি।’ একই কথা জানান ভ্যানচালক আলী মিয়া। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির মধ্যেও ভ্যান নিয়ে বের হয়েছিলাম। একবারে রোজগার হয়নি।’

Source link

Related posts

রমজানে বাজার তদারকিতে মাঠে জেলা প্রশাসনের টিম

News Desk

কক্সবাজারের শুঁটকি এখন পর্যটন পণ্য

News Desk

অটোরিকশাকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কা, প্রাণ গেলো শিশুর

News Desk

Leave a Comment