এক মাস ধরে ডুবে আছে ঝুলন্ত সেতু, দুশ্চিন্তায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা
বাংলাদেশ

এক মাস ধরে ডুবে আছে ঝুলন্ত সেতু, দুশ্চিন্তায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা

রাঙামাটির পর্যটনশিল্পে মন্দা ভাব বিরাজ করছে। বর্ষা মৌসুমে দর্শনীয় স্থানগুলো এখন প্রায় পর্যটকশূন্য। এতে লোকসানের মুখে পড়ছে আবাসিক হোটেলগুলো। লোকসান গুনছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও।  

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলায় বেশ কিছু পর্যটনকেন্দ্র আছে। এর মধ্যে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ—ঝুলন্ত সেতু। কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়ায় এক মাস ধরে সেতুটি ডুবে রয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকদের উঠতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ কারণে পর্যটকরা এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। গত কয়েক বছর ধরে সংস্কার না করার কারণে ঝুলন্ত সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেতু ডুবে থাকায় স্থানটি এখন নিস্তব্ধ। এর কারণে জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রও প্রায় পর্যটকশূন্য। এ অবস্থায় হ্রদের বোটগুলো বেঁধে রাখা হয়েছে ঘাটে। আবাসিক হোটেলগুলোতে কমেছে বুকিং। অলস সময় কাটাচ্ছেন টেক্সটাইলকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা। সবমিলিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যটনশিল্প বাঁচাতে এর স্থায়ী সমাধান চান ব্যবসায়ীরা।

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণ করে। পরে এটি রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে গত ৩০ জুলাই সেতুটি ডুবে যায়। শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত পর্যন্ত এটি দুই ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধস ও দুর্যোগের ঘটনার পর থেকেই প্রতি বর্ষায় ঝুলন্ত সেতুটি পানিতে তলিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছিল। এর অন্যতম কারণ কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া। ফলে গত কয়েক বছর বর্ষা মৌসুমে প্রায় তিন মাস ডুবে থাকে সেতুটি। এ সময়ে এখানে আসার আগ্রহ হারাচ্ছেন পর্যটকরা।

কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্যমতে, ১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। তবে ১০৫ এমএসএল হলেও ডুবে যায় ঝুলন্ত সেতু। 

কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুম হওয়ায় পানির চাপ বেশি। ইতিমধ্যে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছিল। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় এসব গেট খুলে দেওয়া হয়।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমে ডুবে থাকে ঝুলন্ত সেতু। এটি ডুবে যাওয়ার আগে পর্যটক সমাগম থাকলেও গত এক মাসে অনেক কমেছে পর্যটক। ইতিমধ্যে যারা ঘুরতে এসেছেন তারা সেতুর এমন অবস্থা দেখে ফিরে গেছেন। পাশাপাশি খবর পেয়ে অন্য পর্যটকরাও আর আসেননি।

অনেকে আবার না জেনে এসে সেতুর এ অবস্থা দেখে হতাশ হচ্ছেন। এমন হতাশা ব্যক্ত করেছেন ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা মো. ফাহিম আহমেদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এখানে আসার আগ পর্যন্ত জানতাম না সেতু ডুবে আছে। জানলে তো আসতাম না। তেমন পর্যটকও নেই। এসে হতাশ হলাম।’

কুমিল্লা থেকে আসা আরমান হোসেন বলেন, ‘প্রবেশ ফি নিলেও এখানে দেখার কিছুই নেই। ডুবন্ত সেতু দেখতেও টাকা দিতে হচ্ছে। বোট দিয়ে ওপারে যেতে ভাড়া দিতে হয়। এগুলো ভোগান্তি ছাড়া কিছুই নয়।’

স্থানীয় পর্যটক সমীর চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে আমার কিছু বন্ধু ঘুরতে এসেছে। তাদের ঝুলন্ত সেতু দেখাতে নিয়ে এসে দেখি ডুবে আছে। তারা হতাশ হয়েছেন।’

রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একটা সময় শুধু শীত মৌসুমে এখানে পর্যটক আসতো। এখন শীত ছাড়াও বর্ষা মৌসুমে পর্যটক আসে। রাঙামাটিতে ঝরনাসহ প্রকৃতি দেখতে বারোমাস পর্যটক আসে। কিন্তু ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকায় পর্যটকরা আসছেন না। পর্যটনশিল্পকে বাঁচাতে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। না হয় যে কেউ এসে হতাশ হয়ে ফিরবে। আর যে হতাশ হয়ে ফিরবে, সে কখনও রাঙামাটিতে ঘুরতে আসবে না।’ পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ—ঝুলন্ত সেতু

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষায় সেতুটি ডুবে যায়। এটি থেকে প্রতি মাসে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা আয় হয়। এখন আর হয় না। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমরা এটিকে আরও ওপরে উঠানোর চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেবেন।’

এখনও সেতুতে প্রবেশ ফি নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেতু ডুবে থাকায় এখন ফি নেওয়া হয় না। যে ফি নেওয়া হচ্ছে তা ইকোপার্কের। কারণ ইকোপার্কের গেট না থাকায় সেতুর গেট থেকে টিকিট কাটতে হচ্ছে পর্যটকদের। ফলে তারা ভাবছেন সেতুর ফি নেওয়া হচ্ছে, আসলে তা ঠিক নয়।’

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দেখছি প্রতি বছর বর্ষায় সেতুটি ডুবে যায়। এটিকে কীভাবে আধুনিকভাবে নির্মাণ করা যায়, তার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কাজ চলছে। আশা করছি, প্রস্তাব অনুমোদন হলে নতুন আধুনিক ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ হবে।’

Source link

Related posts

পাথরঘাটায় খাল থেকে হাত,পা বাঁধা যুবকের লাশ উদ্ধার

News Desk

কেটে রেখে গেছে রেলের লাইন, ৭ বগি জমিতে পড়ে একজনের মৃত্যু

News Desk

কীভাবে করবেন স্ট্রবেরি চাষ, কোন চারায় বেশি লাভ?

News Desk

Leave a Comment