৯ থানায় কী হচ্ছে, সরাসরি দেখছেন পুলিশ সুপার
বাংলাদেশ

৯ থানায় কী হচ্ছে, সরাসরি দেখছেন পুলিশ সুপার

থানায় অপরাধ ঠেকাতে ও সেবাপ্রত্যাশীদের হয়রানি বন্ধ করতে দারুণ পদক্ষেপ নিয়েছে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ। জেলার ৯ থানার ভেতরে কী হচ্ছে, সেবা নিতে আসা মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করছে পুলিশ, তা নিজ কার্যালয়ে বসে দেখছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইদুল ইসলাম। শুধু দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সেখানে কোন পুলিশ কী ধরনের কথাবার্তা বলছেন, তাও শুনতে পাচ্ছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেবা নিতে আসা ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন পুলিশ সুপার, দিচ্ছেন সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ।

পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার আট উপজেলায় ৯টি থানা রয়েছে। প্রত্যেক থানার ওসি, ডিউটি কর্মকর্তার কক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সবগুলো থানাকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় এনে পুলিশ সুপারের কক্ষের কম্পিউটার ও মোবাইলে সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে ২৪ ঘণ্টা থানাগুলোর কার্যক্রম সরাসরি দেখছেন পুলিশ সুপার। পুলিশের সেবা জনবান্ধব, থানায় হয়রানি বন্ধ, দুর্নীতিমুক্ত, পুলিশের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

শনিবার (২২ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ৯ থানাকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংযুক্ত করার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম, পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জি, পটুয়াখালী টিভি জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাজল বরন দাস ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

পুলিশ সুপার কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওসব থানার ভেতরে কী হচ্ছে, তা গত কয়েকদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছেন পুলিশ সুপার। সেইসঙ্গে সেবা নিতে আসা ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন, দিচ্ছেন সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ। থানা ছাড়াও পটুয়াখালী চৌরাস্তা ও পায়রা সেতু টোলসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এসব স্থানে পুলিশ ঠিকমতো ডিউটি করছে কিনা, তাও দেখছেন পুলিশ সুপার।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার জানান, অনেক সময় দেখা যায় থানাগুলোতে ওসি এবং ডিউটি অফিসারের কক্ষে সেবা নিতে যাওয়া মানুষের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়। এতে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের খারাপ ধারণা তৈরি হয়। এগুলো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর ফলে সেবা নিতে আসা মানুষের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা এখন থেকে অসদাচরণ করার সুযোগ পাবেন না। অসদাচরণ করলে সহজেই ধরা পড়বেন। কথাবার্তা শুনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গলাচিপা থানার ডিউটি অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের সেবা জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত, পুলিশের কার্যক্রম মনিটরিং ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর সুফল পাবেন সেবাপ্রত্যাশীরা। সেইসঙ্গে থানার ভেতরে অপরাধ কমবে।’

সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর ফলে এখন আর কেউ ডিউটিতে ফাঁকি দিতে পারবেন না বলে উল্লেখ করেছেন গলাচিপা থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েন। তিনি বলেন, ‘মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি। পুলিশ সুপারের তদারকির কারণে হয়রানি কমবে। মানুষ থানায় এসে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে।’

পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘জনবান্ধব সেবা, হয়রানি বন্ধ, দুর্নীতিমুক্ত, পুলিশের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের কাজে নজরদারির মাধ্যমে পেশাগত মানোন্নয়ন হবে। অপরাধ প্রবণতা কমবে। কোনও সমস্যা তৈরি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। একইসঙ্গে কোন সমস্যায় কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে, তা সম্পর্কে ওসিদের নির্দেশনা দেওয়া যাবে। কোনও অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটলে ফুটেজ দেখে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এখন স্বল্প পরিসরে হলেও পর্যায়ক্রমে পুরো থানা এলাকা ক্যামেরার আওতায় এনে নজরদারি করা হবে।’

কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেবা নিতে আসা ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন পুলিশ সুপার, দিচ্ছেন সমস্যার সমাধান ও পরামর্শ

পুলিশকে আধুনিক করতে এবং সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার উল্লেখ করে পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘সামনে পুলিশকে আরও বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। জনগণের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ মানুষ নয়, শুধু অপরাধীরা পুলিশকে ভয় পাবে এমনটি—তৈরি করতে চাই আমরা।’

বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘থানায় পুলিশ ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে কিনা, সেবা নিতে আসা মানুষের সমস্যা সমাধান করছে কিনা, কোনও ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে কিনা—এসব দেখতে মূলত এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ একসঙ্গে সবগুলো থানার কার্যক্রম পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বসে দেখা কিংবা মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। এতে নানা সময় নানা অভিযোগ ওঠে। প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন ২৪ ঘণ্টা ওই ৯ থানার কার্যক্রম দেখতে পারবেন পুলিশ সুপার। এতে অপরাধ কমবে, পুলিশের সেবা নিতে আগ্রহী হবেন সাধারণ মানুষজন। সেইসঙ্গে যেকোনো সমস্যার দ্রুত সমাধান পাবেন তারা।’

Source link

Related posts

বারবার কয়লা-সারবাহী নৌযানডুবি, হুমকিতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

News Desk

এবারও ডিজিটাল মাধ্যমে নববর্ষ পালন করবে ছায়ানট

News Desk

‘নৌকাতে এসেছে স্বাধীনতা, নৌকাই গড়বে স্মার্ট বাংলাদেশ’

News Desk

Leave a Comment