সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৯ কিলোমিটার পদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর দেওয়া স্মারকলিপি রাজশাহী জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। রবিবার (১৪ জুলাই) দুপুর ২টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের হাতে এই স্মারকলিপি তুলে দেন।
রাজশাহী জেলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে দেওয়া লিখিত স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে পাঁচ শতাংশ কোটাকে ছাত্রসমাজ যৌক্তিক মনে করে। তাই আমাদের দাবি হচ্ছে- সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে (সর্বোচ্চ ৫%) এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।’
রাষ্ট্রপতিকে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষার্থীরা আরও বলেছেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবে। আমাদের কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হোক তা আমরা কখনও চাই না। আমরা দ্রুতই পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই। ছাত্রসমাজ আশা রাখে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে বাধিত করবেন। অন্যথায় ছাত্রসমাজ নিজেদের অধিকার রক্ষায়, বৈষম্যমুক্ত ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হবে।’
স্মারকলিপি গ্রহণের সময় রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘সরকারের কর্মচারী হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো আপনাদের স্মারকলিপিটি যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। কারণ আমি কোনও নীতি নির্ধারক নই। আমি শুধুমাত্র একজন সরকারের কর্মচারী। আমি আপনাদের দাবির বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে সরকারের কাছে তুলে ধরব।’ এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান।
এর আগে, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও আশেপাশের ছাত্রাবাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে যৌক্তিক কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে লেখা এক স্মারকলিপিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করেন তারা। এরপর বিক্ষোভ মিছিল সংবলিত এক পদযাত্রা নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে নগরীর কোর্ট চত্বরে অবস্থিত জেলা প্রশাসক কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী।
পদযাত্রায় শিক্ষার্থীরা, ‘আমার ভাই আহত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘১৮ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আবার’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর দুপুর দেড়টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পৌঁছেন। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন প্রতিনিধি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে প্রশাসক শামীম আহমেদের হাতে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। পরে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের অনুরোধে জেলা প্রশাসক সরাসরি সব শিক্ষার্থীদের সামনে তার একই বক্তব্য দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি বাসযোগে স্লোগান দিতে দিতে দুপুর ৩টা নাগাদ ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।