৮ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজার, সর্বনিম্ন ভাড়া ৬৯৫ টাকা
বাংলাদেশ

৮ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজার, সর্বনিম্ন ভাড়া ৬৯৫ টাকা

অবশেষে পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে ঢাকায় স্বপ্নের ট্রেন যাত্রা শুরু হচ্ছে। ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামের ট্রেনটি আগামী ১ ডিসেম্বর কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা বিলাসবহুল এই ট্রেনে ১৫টি বগি থাকবে। এসব বগিতে ৭৮০টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি এসি বগিতে ৩৩০টি এবং ৯টি নন-এসি বগিতে ৪৫০টি আসন। এর আগে গত ১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনটি চট্টগ্রামে যাত্রাবিরতি দেবে ২০ মিনিট। চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য আগে কোনও আসন বরাদ্দ রাখা না হলেও বুধবার সন্ধ্যায় জানানো হয়, চট্টগ্রাম থেকে টিকিট বিক্রি হবে। ফলে যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবেন। আর কোনও স্টেশনে দাঁড়াবে না ট্রেনটি। রাজধানী থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগবে আট ঘণ্টা ১০ মিনিট।

ট্রেন ছাড়ার সময়সূচি

পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের দেওয়া সময়সূচি অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে ছাড়বে ট্রেনটি। চট্টগ্রামে পৌঁছাবে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে। ২০ মিনিট যাত্রাবিরতি দিয়ে ছাড়বে বিকাল ৪টায়। রাত ৯টা ১০ মিনিটে পৌঁছাবে ঢাকায়। একইভাবে ঢাকা থেকে রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে। সেখানে ২০ মিনিট যাত্রাবিরতি দিয়ে রাত ৪টায় রওনা দিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছাবে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। তবে ঢাকা থেকে সোমবার এবং কক্সবাজার থেকে মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে ট্রেনটি। এই দুই দিন একমুখী গন্তব্যে চলাচল করতে পারবেন যাত্রীরা। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের নম্বর ৮১৩ ও কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনের নম্বর ৮১৪ নির্ধারণ করেছে রেলওয়ে।

কবে থেকে পাওয়া যাবে টিকিট?

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। টিকিট অনলাইন এবং কাউন্টারে পাওয়া যাবে। রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী যাত্রার ১০ দিন আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু ঢাকা-কক্সবাজার রুটের প্রথম ট্রেনের টিকিট গত মঙ্গলবার থেকে বিক্রির ঘোষণা দিলেও তা সম্ভব হয়নি। কারণ কয়েকদিন আগে টিকিটের দাম নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সেটি রেল ভবন থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগে এবং অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সহজকে আদেশ দিতে সময় লেগেছে। এরপর সহজ অনলাইনে টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টিকিট পাওয়া যাবে।

ট্রেনের ভাড়া

ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার। কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ভ্যাটসহ ৬৯৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া এক হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ভাড়া এক হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া দুই হাজার ৩৮০ টাকা। 

রেলের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) তারেক মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। প্রথম পর্যায়ে ট্রেনটিতে দুই ধরনের আসন থাকবে। এসি এবং নন-এসি। এর মধ্যে কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত যেতে এসি আসনের ভাড়া পড়বে ভ্যাটসহ এক হাজার ৩২৫ টাকা এবং নন-এসি আসনের ভাড়া পড়বে ৬৯৫ টাকা।’

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আরও সাত ট্রেন চালুর পরিকল্পনা

প্রথম ধাপে একটি ট্রেন আসা-যাওয়া করলেও আগামী বছরের শুরুতে এই বহরে সাতটি ট্রেন যুক্ত হবে বলে জানালেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আপাতত ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচল করবে কক্সবাজার এক্সপ্রেস। শুরুতে চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য কোনও আসন বরাদ্দ রাখা হয়নি। তবে বুধবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ট্রেনটি প্রতিদিন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবে, সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় যাবে। মাঝখানে চট্টগ্রাম ছাড়া কোনও স্টেশনে দাঁড়াবে না। চট্টগ্রামে ২০ মিনিট যাত্রাবিরতি দেবে। তবে ঢাকা থেকে সোমবার এবং কক্সবাজার থেকে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে ট্রেন চলাচল।’

কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে ট্রেন

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আন্তনগর এবং কমিউটার মিলে আরও সাতটি ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখ করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে দুটি, ঢাকা থেকে আরও একটি, রাজশাহী থেকে একটি, সিলেট থেকে একটি, চাঁদপুর থেকে একটি এবং চট্টগ্রাম থেকে একাধিক কমিউটার ট্রেন চালুর কথা ভাবছি আমরা। সবমিলিয়ে আরও সাতটি ট্রেন আগামী বছরের শুরুতে চালুর পরিকল্পনা আছে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। স্টেশনগুলোর কাজ সম্পন্ন না হওয়া এবং জনবল নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত বেশি ট্রেন চালানো যাবে না।’

রেললাইন পুরোপুরি প্রস্তুত

ট্রেন চলাচলের জন্য ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ কতটা প্রস্তুত জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘রেললাইন পুরোপুরি প্রস্তুত। এর আগে আমরা পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়ে দেখেছি। লাইনে কোনও ধরনের সমস্যা পাওয়া যায়নি।’

কাজ শতভাগ শেষ

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। কালুরঘাট ব্রিজ দিয়ে এখন ট্রেন নেওয়া যাবে। তবে প্রকল্পের অবকাঠামোগত কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি। এছাড়া রেললাইনের কাজ শতভাগ শেষ।’

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকায় চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। পরে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।

Source link

Related posts

বদি যদি আমাকে সন্তান হিসেবে মেনে নেন, তাহলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করবো

News Desk

হাঁড়িভাঙা বদলে দিলো ভাগ্য, ২০০ কোটি টাকা বিক্রির আশা

News Desk

কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল

News Desk

Leave a Comment