বিদেশি জাতের কুল চাষে নিজের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করছেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের খোর্দ্দদাদপুর গ্রামের কৃষক রাজু আহমেদ। ২০২০ সালে বিদেশি অস্ট্রেলিয়ান জাতের কুল চাষ শুরু করেন। ৬৫ হাজার টাকা খরচে বাগান শুরুর পরের বছরেই তিনি এক লাখ ৯০ হাজার টাকার কুল বিক্রি করেন। তবে এ বছর খরচ অনেক কম হয়েছে। কুল বিক্রি থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারবেন বলে ধারণা রাজুর। 

জানা যায়, ২০২০ সালে বল সুন্দরি ও কাশ্মিরি আপেল কুল জাতের চারা রোপণ করেন। রােপণের বছরই গাছগুলোতে ফল আসা শুরু। সেই বছর তার বাগানের বরই দেখে অনেক বেকার যুবক এখন কুল চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এ বছর তার বাগানের প্রতিটি গাছে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরি, আপেল কুল ছেয়ে গেছে। ফলের ভারে গাছের ডাল নিচের দিকে হেলে পড়েছে। রাজু তার এলাকায় কুল চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।ব্যতিক্রমী বিদেশি এ ফল চাষ করে তার পরিবারের লোকজন ও রাজু সাফল্যের মুখ দেখছেন।

কুল বাগানে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলতি শীত মৌসুমে তার বাগানের প্রতিটি গাছে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরি ও কাশ্মিরি কাঁচা-পাকা কুল থোকায় থোকায় ঝুলছে। বাগানের অধিকাংশ গাছই কুলের ভরে মাঠিতে হেলে পড়েছে। কুল বড়ই পাখি ও চোরের হাত থেকে রক্ষা করতে পুরো বাগানের চারপাশে জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছেন রাজু।

রাজু আহমেদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ৬০ শতাংশ জমিতে ২০২০ সালের বৈশাখ মাসে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, কাশেম নার্সারি থেকে বিদেশি অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরি ও কাশ্মিরি জাতের কুল গাছের চারা এনে রোপণ করি। অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরিচর্যায় মাত্র ৬ মাসের মাথায় বাগানের সব গাছেই বরই ধরেছে। প্রথম বছর ৬৫ হাজার টাকা খরচ করে এক লাখ ৯০ হাজার টাকার বরই বিক্রি করি। গত বছরের চেয়ে এ বছর ভালো ফলন হয়েছে এমনকি খরচও কম হয়েছে। তিনি আশা করছেন এ বছর দুই লাখ ২০ হাজার টাকার মতো বড়ই বিক্রি করবেন। 

তিনি আরও জানান, এ বছর ২০ শতাংশ জমিতে নতুন ভারত সুন্দরির চারা রোপণ করবেন। তবে অন্য ফসল চাষের চেয়ে বরই চাষ অনেক বেশি লাভজনক বলে মন্তব্য করেন রাজু।

রাজু আহমেদ আরও বলেন, আমি দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। ফরিদপুর কৃষি কলেজ থেকে কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার প্রজেক্টে কাজ করেছি। পরে নিজে কিছু করার চিন্তাভাবনা থেকে কুল চাষ শুরু করি। কুল চাষ করে প্রথম বছরই সফলতা পেয়েছি।

রাজু আহমেদের ভাই শহীদ শিকদার বলেন, প্রথমে বিদেশি অস্ট্রেলিয়ান জাতের প্রতি কেজি বরই বিক্রি করেছি ১০০ -১২০ টাকা দরে। বর্তমানে বাজারে পাইকারি ৬০-৭০ টাকা এবং খুচরা মূল্য-৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। তবে এ বরইয়ের চাহিদা বেশি থাকায় খুচরা বাজারে ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আগামীতে বড় পরিসরে বাগান করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

 তিনি আরও বলেন, আমাদের কৃষি অফিসার চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস ও সদর উপজেলা কৃষি অফিসার বাহাউদ্দিন স্যারও অনেক ভালো পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। তাদের পরামর্শে ভালো ফলন পেয়েছি এবং অনেক লাভবানও হয়েছি।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাহাউদ্দীন শেখ বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় চলতি বছরে ২১ হেক্টর জমিতে বিদেশি জাতের কুল চাষ হয়েছে। অধিকাংশ কুল বাগানের মালিকরাই অল্প সময়ে কুল চাষ করে লাভবান হয়েছেন। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সকল উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে পাশে ছিলাম। এমনকি মাঠ পর্যায়ে গিয়ে অধিকাংশ বাগান পরিদর্শন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

 

Source link

Related posts

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৪ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ চলছে

News Desk

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ২ শতাংশেরও বেশি

News Desk

উদ্বোধনের ৯ মাস পরেও চালু হয়নি রাজশাহী শিশু হাসপাতাল

News Desk

Leave a Comment