২ ঘণ্টায় রোগীর বিল ২১ হাজার টাকা
বাংলাদেশ

২ ঘণ্টায় রোগীর বিল ২১ হাজার টাকা

নামেই শুধু হাসপাতাল। ভেতরে কিছুই নেই। আছে নামধারী এক চিকিৎসক। তার আবার সনদ নেই। অথচ এই হাসপাতালে দুই ঘণ্টায় এক রোগীর চিকিৎসার বিল করা হয়েছে ২১ হাজার টাকা। এসব অভিযোগের কারণে এটি বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

শনিবার (১৪ জুলাই) কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি দল এক রোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে নগরীর ইউনাইটেড হসপিটালে অভিযান চালায়। অভিযান পরিচালনা করেন আদর্শ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহামদ মঞ্জুরুল ইসলাম ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল কাইয়ুম।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি দল জানায়, হাসপাতালটিতে ডিউটি ডাক্তার নেই। জরুরি বিভাগে একটি মাত্র লোহার বেড। আছে ধুলাবালু পড়া একটি টেলিফোন। প্যাথলজি বিভাগে নিয়ম অনুযায়ী নেই তিন রঙের বিন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনও নার্স নেই। নেই কাগজপত্রও। অপরিচ্ছন্ন অপারেশন থিয়েটার। নেই কার্ডিয়াক মনিটর চালানোর লোক। নামেই শুধু ২০ শয্যার হাসপাতাল। আসলে কোনও লোকবল নেই। অভিযানের সময় একজন ডাক্তার পরিচয় দিয়েছিল। তার নেই বিএমডিসি কর্তৃক চিকিৎসক সনদ। এখানে চিকিৎসার কোনও পরিবেশ নেই। তবু এক রোগীকে দুই ঘণ্টা ভর্তি রেখে চিকিৎসার বিল করেছে ২১ হাজার টাকা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাকসাম উপজেলার আতর আলী (৭০) রবিবার ভোরে অসুস্থবোধ করলে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন তার ছেলেরা। এসে দালালের খপ্পরে পড়েন। ‘এখানে ডাক্তার নেই, ভালো পরীক্ষা হয় না’ এই বলে তাদের ভুল ঝুঝিয়ে নগরীর টমছমব্রিজ সংলগ্ন ইউনাইটেড হসপিটালে নিয়ে আসে দালালরা। সকাল ৯টার দিকে ভর্তি করা হয়। কোনও চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর স্বজনরা নিয়ে যেতে চান। বেলা ১১টার দিকে স্বজনদের হাতে ২১ হাজার ৪০ টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে আতর আলীর ছেলে আবুল কাশেম প্রতিবাদ জানান। কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা না করিয়ে কেন এত টাকা বিল জানতে চান। কিন্তু কোনও জবাব দেয়নি হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। উপায় না পেয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন আবুল কাশেম। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি দল। তারা এসে পান অনিয়মের লম্বা তালিকা।

আবুল কাশেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি নামেই শুধু হাসপাতাল। ভেতরে কিছুই নেই। দেখে মনে হলো আবাসিক হোটেল। কোনও চিকিৎসক নেই। দালালের খপ্পরে পড়ে আমরা প্রতারণার শিকার। এর বিচার চাই।’

দুপুরে সরেজমিনে ওই হসপিটালে গিয়ে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগে বেড থাকলেও কোনও বালিশ নেই। মোট দুজন রোগী ভর্তি। তাদের দালালরা ফাঁদে ফেলে এনেছে। এর মধ্যে আরাফাত হোসেন নামে এক রোগীর দুই ঘণ্টায় ১৬ হাজার টাকা বিল করা হয়েছে। পুরুষ হলেও চিকিৎসাপত্রে তার লিঙ্গ লেখা হয়েছে নারী। বয়স ২০। একজন চিকিৎসক থাকলেও তার কাছে কোনও চিকিৎসা পাননি বলে জানান আরাফাত।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি দলের কাছে নিজেকে এই হসপিটালের চিকিৎসক পরিচয় দেন রায়হানুর রহমান। তবে যাচাই করতে গিয়ে প্রতিনিধি দল দেখেছে তার নেই বিএমডিসি কর্তৃক চিকিৎসক সনদ। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রায়হানুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় সেন্ট্রাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে পড়াশোনা শেষে সম্প্রতি ইন্টার্ন সম্পন্ন করেছি। এখনও বিএমডিসি কর্তৃক চিকিৎসক সনদ হাতে পাইনি।’ সনদ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসা ও চিকিৎসাপত্র দেওয়া ঠিক কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘উচিত নয়।’ 

আদর্শ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহামদ মঞ্জুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক রোগীর স্বজনের অভিযোগ ও নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে এখানে অভিযান চালাই। এখানে আগেও অভিযান চালানো হয়েছিল। লাইসেন্স থাকলেও হালনাগাদ করেনি। পরীক্ষার মূল্য বেশি। পরিবেশ ও সেবার মান সন্তোষজনক নয়। এ ছাড়া আরও নানা অভিযোগে হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছি আমরা।’

Source link

Related posts

সুবর্ণচরের ২ ইউনিয়নে বিপুল ভোটারের উপস্থিতি

News Desk

পাহাড়ে ব্যক্তিমালিকানায় চা-বাগান, চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি হচ্ছে কর্মসংস্থান

News Desk

হত্যার পর শুটার মাসুম মোবাইল ফেলেন হাতিরঝিলে, চলে যান বগুড়ায়

News Desk

Leave a Comment