২৫ বছরেও হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ, বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকেন তারা
বাংলাদেশ

২৫ বছরেও হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ, বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকেন তারা

ভারতের মেঘালয়ঘেঁষা সীমান্তবর্তী উপজেলা ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার নিতাই নদীতে দীর্ঘ ২৫ বছরেও নির্মাণ হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ। এ অবস্থায় প্রতি বছর বর্ষায় মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ফসলি জমি, মাছের ঘের তলিয়ে ক্ষতির পাশাপাশি বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষজন। বর্ষা মৌসুমে নানা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হয় নদীর দুই পাড়ের কয়েক হাজার মানুষকে। এরপরও নদীর আগ্রাসন ঠেকাতে দীর্ঘদিনেও স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের কোনও উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। এজন্য জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের গাফিলতিকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

সবশেষ ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার ৪০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। পানিবন্দি হয়েছিল লক্ষাধিক মানুষ। এ ছাড়া উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না। এসব এলাকার আমন ফসল ও সবজিক্ষেত তলিয়ে যায়। ভেসে যায় মাছের খামার। রাস্তার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল বন্যার পানি। কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

রেহেনা বেগম (৫০) স্বামী ও তিন সন্তানকে নিয়ে ৩০ বছর ধরে নিতাই নদী পাড়ে জিগাতলা গ্রামে বসবাস করছেন। এই গ্রামের পুত্রবধূ হয়ে আসার পর থেকে বন্যায় মানুষের কষ্ট দেখছেন। রেহেনা বলেন, ‘গত বছরের বন্যাসহ এ পর্যন্ত তিনবার আমাদের বাড়িঘর নিতাই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এর আগের বার বন্যার পানিতে ডুবে আমাদের পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। সামনের বন্যায় আবারও ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে আমাদের। শুধু আমাদের নয়, গ্রামের সবার একইভাবে দিন কাটছে। নিতাই নদীতে দীর্ঘ ২৫ বছরেও নির্মাণ হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ। এখানে বেড়িবাঁধ না করলে বন্যা থেকে গ্রামের মানুষের রক্ষা নেই।’

জিগাতলা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিতাই নদীর দুই পাড়ে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। সবার একই অবস্থা। এখানে প্রায় ২৫ বছর আগে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। সেটির এখন অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। গত ২৫ বছরে স্থায়ী বাঁধের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠতে হয়। যখন পানি নেমে যায়, তখন গ্রামে এসে বাড়িঘর তৈরি করতে হয়। বন্যার সময় বাঁধ তৈরির কথা বলা হয়, পরে আর হয় না।

এই গ্রামের বাসিন্দা কামরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু আমাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই। নিতাই নদীর পাশে কেউ বাঁধ তৈরির উদ্যোগ নেয় না। জনপ্রতিনিধিরা কথা দিয়ে ভোট নেয়। কিন্তু নির্বাচনে পাস করার পর তারা কথা রাখে না। বাঁধ না হওয়ায় প্রতি বছর বন্যায় আমাদের ফসলি জমি, মাছের ঘেরসহ বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারি না আমরা।’

গতবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মো. আসলাম বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম আসলেই নিতাই পাড়ের মানুষের মাঝে উদ্বেগ আর আতঙ্ক বিরাজ করে। বছরের পর বছর বন্যা ও নদীভাঙনে অনেকে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ভূমিহীন হয়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। স্থায়ী বেড়িবাঁধ হলে কাউকে ভূমিহীন হতে হতো না। এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাই আমরা।’

উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কমল আল রাজি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রতি বছর এলাকার হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অস্থায়ী বাঁধ নামে মাত্র সংস্কার করে দায় সারেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। আসলে এখানে দরকার স্থায়ী বাঁধ। নদীর দুই পাড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।’

স্থায়ী বাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বন্যায় ধোবাউড়ায় ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হয় বলে জানালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাদিয়া ফেরদৌসী। তিনি বলেন, ‌‘পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে চলে আসা বালুর আস্তরণ পড়ে কৃষিজমি বিনষ্ট হচ্ছে। এখানে স্থায়ী বাঁধ তৈরি ছাড়া কৃষি ও কৃষকের ক্ষতি ঠেকানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘নিতাই নদীর দুই পাড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে উপজেলা এবং জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটিতে একাধিকবার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখনও এ প্রস্তাবের কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। পাউবো সাড়া না দিলে আমাদের কিছুই করার থাকে না।’

এ বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিলের কাছে বারবার গিয়েও তাকে কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। একাধিক দিন ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এসএম আবিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিতাই নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুমোদন হলে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করবো আমরা। এরপর স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কথা ভাবা হবে।’

Source link

Related posts

কিশোরীকে ২ দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার

News Desk

ছেড়ে দেয়া হলো ত্ব-হাসহ তিনজনকে

News Desk

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দিল্লির সহযোগিতা চেয়েছে ঢাকা

News Desk

Leave a Comment