১২ বছরে কোটিপতি সাবিহা
বাংলাদেশ

১২ বছরে কোটিপতি সাবিহা

১২ বছরে মেধা ও যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সফল নারী উদ্যোক্তা সাবিহা আক্তার। ২০১০ সালে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। ‘আড়ং ঢং’ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে সফল হন। এখন তার প্রতিষ্ঠানের মূলধন তিন কোটি টাকার ওপরে। ময়মনসিংহ নগরীর ইটাখোলার এই নারী উদ্যোক্তা এখন নারীদের মডেল। তাকে দেখে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেছেন অনেকে।

ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজে ইংরেজি বিভাগে অনার্স ফাইনাল বর্ষে পড়ার সময় ১৯৯৩ সালে সাবিহার সঙ্গে এনজিও কর্মকর্তা জাহিদ হাসানের বিয়ে হয়। তিন বছরের মধ্যে কোলজুড়ে আসে দুই কন্যাসন্তান। সংসার সামলে সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে লেখাপড়া শেষ করা হয়নি তার।

‌‘২০১০ সালে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে অবসরে চলে আসেন জাহিদ। নিজে কিছু করার ইচ্ছা থেকেই স্বামীর অবসরের এক লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে মহানগরীর অলকা নদী বাংলায় একটি দোকান ভাড়া নিই। আড়ং ঢং নামে ওই দোকানে টাঙ্গাইলের শাড়িতে হাতের কাজ, থ্রিপিসে ব্লক বাটিক এবং এমব্রয়ডারি কাজ শুরু করি। স্বামী-স্ত্রী দুজনে সময় করে দোকানে বসতে শুরু করি। আমাদের কাজের সঙ্গে বেকার কয়েকজন নারীকে যুক্ত করি। তাদের কাজ শিখিয়ে থ্রিপিসে ব্লক বাটিক, এমব্রয়ডারি এবং টাঙ্গাইলের শাড়িতে দৃষ্টিনন্দন হাতের কাজ করিয়ে নিই। শুরুটা এভাবেই হয়েছিল’ বলছিলেন সাবিহা।  

ডিজাইনার হিসেবে সাবিহা নিজেই সবকিছু করেন। ব্যবসা শুরুর পর সাবিহাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আড়ং ঢংয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বড় আকারে আড়ং ঢংকে সাজিয়ে তোলেন। ব্যবসার আয় দিয়ে নগরীর ইটাখোলায় নিজ বাসার পাশে এক কোটি ২০ লাখ টাকায় জমি কেনেন। সেই জমিতে একটি কারখানা গড়েন। ওই কারখানায় টেইলারিং ও এমব্রয়ডারিসহ নানা পণ্য উৎপাদন করা হয়। 

বাংলা ট্রিবিউনকে সাবিহা বলেন, ‘অলকা নদী বাংলার ভাড়া দোকান ছেড়ে ২০২০ সালে চলে আসি রামবাবু রোডের নতুন বাজার এলাকার সাইফ সেন্টারের আন্ডারগ্রাউন্ডে। বড় করে শোরুম দিয়ে নতুনভাবে আড়ং ঢংকে সাজাই। এরই মধ্যে জাহিদ মস্তিষ্কের দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করাতে তার পেছনে চলে গেছে দেড় কোটি টাকা। ২০২০ সালের জুন মাসে জাহিদ আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে যান। এরপরও থেমে থাকিনি।’

ডিজাইনার হিসেবে সাবিহা নিজেই সবকিছু করেন

স্বামীকে হারানোর কষ্টের মধ্য দিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়ান। বর্তমানে তার শোরুমে রয়েছে নারী-পুরুষ এবং শিশুদের সব ধরনের পোশাক। এছাড়া রয়েছে শোপিস, জুয়েলারি এবং জুতা। বর্তমানে তার শোরুম এবং কারখানায় ২৫ জন নারী-পুরুষ কাজ করছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর গারো সম্প্রদায়ের নারীও রয়েছেন। অনেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি তার কারখানায় এবং শোরুমে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। 

সাবিহা আরও বলেন, ‘বর্তমানে শোরুম এবং কারখানা মিলে মূলধন তিন কোটি টাকার ওপরে। আড়ং ঢংয়ে উৎপাদিত পণ্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। অনলাইনেও বেচাকেনা হচ্ছে।’ 

ব্যবসা শুরুর পর সাবিহাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি

সাবিহা বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। যেকোনো কাজ করে নিজেকে স্বাবলম্বী এবং সফলতার শীর্ষে নিয়ে যাওয়া যায়। বেকার নারীদের ঘরে বসে না থেকে যে যা পারে, সেই কাজ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যতে বিভিন্ন জেলায় আড়ং ঢংয়ের শাখা প্রতিষ্ঠার ভাবনা আছে।’

Source link

Related posts

সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় পাহাড়ে বর্ষবরণ উৎসব শুরু 

News Desk

দুই বাক্যে এক উপজেলা বিএনপির দুই কমিটি বাতিল করলেন রিজভী

News Desk

ঢাকা-চট্টগ্রামের পর তৃতীয় অর্থনৈতিক করিডোর হতে যাচ্ছে যশোর-খুলনাঞ্চল

News Desk

Leave a Comment