হেঁটে রেল সেতু পারাপারের সময় ৪ মাজার ভক্তের মৃত্যু, দায় কার?
বাংলাদেশ

হেঁটে রেল সেতু পারাপারের সময় ৪ মাজার ভক্তের মৃত্যু, দায় কার?

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় ঐতিহ্যবাহী খরমপুর কেল্লা শহীদের মাজারে ওরসে এসেছেন হাজারো ভক্ত। তবে ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথের একটি সেতু দিয়ে হেঁটে আসার সময় হঠাৎ ট্রেন চলে আসায় ধাক্কায় ও ঝাঁপিয়ে পড়ে চার মাজার ভক্তের মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) রাত পৌনে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই রেলওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। ঘটনার পর সেতু এলাকায় মাজার ভক্তসহ পথচারীদেরকে রেলসেতু পরিহার করে চলাচল করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সেতুর দুই পাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে, মাজারে আসা ভক্তরা সেতুটি দিয়ে মানুষ পারাপারের উপযোগী করার দাবি জানান। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া উপজেলার খরমপুরের প্রখ্যাত আউলিয়া শাহ্ ছৈয়দ আহাম্মদ গেছুদারাজ (রহ.) শাহপীর কেল্লা শাহ এর মাজার শরিফে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাৎসরিক ওরস শুরু হয়েছে। এই ওরসকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো ভক্ত মাজারে আগমন শুরু করেন। ওরসে আসার পথে মাজারের পশ্চিম পাশে ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম সিলেট-আখাউড়া রেলপথ। এই রেলপথ ধরেই হাজার হাজার ভক্ত মাজারে আসছিলেন।

রাত পৌনে ৯টার দিকে মাজারের পশ্চিম পাশে তিতাস নদীর ওপর রেল সেতু অতিক্রম করছিলেন মাজারে আসা ভক্তরা। এ সময় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি তিতাস সেতুতে এলে শতশত ভক্ত ছোটাছুটি শুরু করেন। এ সময় দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কা ও আতঙ্কিত হয়ে সেতু থেকে পড়ে চার জন প্রাণ হারান। এ ঘটনার পর পুরো মাজার প্রাঙ্গণের ভক্তদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

মৃতরা হলেন- নরসিংদী জেলার মাধবদী উপজেলার দোয়ারি গ্রামের, শুক্কুর মিয়া (৬০), একই জেলার পলাশ উপজেলার মোজাম্মেল (৪০) ও নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের মুজিব মিয়া (৫৫)। একজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

মাজারে আসা ভক্ত ফকির শামসুল ইসলাম জানান, মাজারে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। আসার পথে অনেক ভক্ত রেলপথ ব্যবহার করেন। কিন্তু রেল বিভাগের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যদি রেলপথ বিভাগ পদক্ষেপ নিতো, তাহলে এত দ্রুতগতিতে সেতুতে ট্রেন চলে আসতো না। আর এভাবে চার ভক্তের মৃত্যু হতো না। আমরা এর বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি এখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

হেঁটে রেল সেতু পারাপারের সময় ৪ মাজার ভক্তের মৃত্যু, দায় কার?

রমজান মিয়া নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী ভক্ত জানান, ট্রেনটি সেতুতে আসার আগে বিকট শব্দে হুইসেল দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভক্তরা লাফিয়ে পানিতে ঝাঁপ দেন। তবে সেতুর নিচে মাজারে আসা নৌকা নোঙর করে রাখা ছিল। পানির নিচে কোনও কিছু ছিল সেগুলোর সঙ্গে আঘাত লেগে প্রাণ হারান। আমরা এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করছি। যাদের গাফলতির কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তাদের বিচার দাবি করছি।

সিলেট রেলওয়ে জোনে কর্মরত এবং সেতু এলাকায় দায়িত্বরত রেলওয়ে পুলিশের এসআই রাহুল চাকমার দাবি, ট্রেন আসার আগেই সেতুতে পুলিশ দায়িত্বে ছিলেন। তবে মাজারের মাইক এবং সেতুর নিচে নৌকায় ডিজে পার্টির শব্দের কারণে পুলিশের বাঁশির আওয়াজ রেল সেতুতে থাকা মাজার ভক্তরা শুনতে পাননি। তাই তারা ট্রেনের ধাক্কায় সেতুর নিচে পড়ে যান।

আখাউড়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মুনির সারোয়ার জানান, ফায়ার সার্ভিস চার জনের লাশ উদ্ধার করেছে। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ কেউ আছে কি না কেউ দাবি করেনি। তবে আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছি।

জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম জামান, সেতুর ওপর লোকজনের পারাপার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেতু এলাকার দায়িত্বরত পুলিশকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী সোমবার (১৪ আগস্ট) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সপ্তাহব্যাপী বার্ষিক ওরস মাহফিল।

Source link

Related posts

চার দিনেও উদ্ধার হয়নি ডুবে যাওয়া ফেরি, মেলেনি ইঞ্জিন মাস্টারের সন্ধান

News Desk

কবরে শোয়াতে গিয়েই কেঁদে উঠলো নবজাতক!

News Desk

‘থার্টি ফার্স্ট নাইটের’ আয়োজন নেই কুয়াকাটায়, হোটেল-মোটেল ফাঁকা

News Desk

Leave a Comment