Image default
বাংলাদেশ

হিজাব বিতর্ক তুলে আমোদিনী পালকে ফাঁসানো হয়েছে: তদন্ত কমিটি

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের হাতে শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হিজাবের জন্য নয়; বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাক (স্কুলড্রেস) পরে না আসায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে।’ 

একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হিজাবের গুজব ছড়িয়ে শিক্ষিকা আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের উসকে দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। 

সোমবার (১১ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান মহাদেবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মালেকসহ কমিটির তিন সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউএনও মিজানুর রহমান বলেন, ‌‘তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে হিজাব পরায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, স্কুলড্রেস না পরায় গত ৬ এপ্রিল বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল ও শরীরচর্চার শিক্ষক বদিউল আলম কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষিকা আমোদিনী পালকে ফাঁসানোর জন্য ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। যারা এই গুজব ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া ৭ এপ্রিল বিদ্যালয়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন ব্যক্তি হামলা চালিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ওসব ব্যক্তির বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।’

আরও পড়ুন: স্কুলড্রেসের জন্য ছাত্রীদের মারধরের ঘটনায় ৩ সদস্যের কমিটি

তিনি আরও বলেন, ‘স্কুলড্রেস না পরায় শিক্ষিকা আমোদিনী পাল ও আরেক শিক্ষক বদিউল আলম শিক্ষার্থীদের মারধর করেছেন। অথচ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ শুধুমাত্র আমোদিনী পালকে শোকজ করেছেন। এই ঘটনা তদন্ত কমিটির কাছে উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়েছে। শুধু শিক্ষিকা আমোদিনী পালকে শোকজ করায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।’ 

ইউএনও আরও বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের মারধর করায় শিক্ষিকা আমোদিনী পাল ও শিক্ষক বদিউল আলমের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।’

কারা গুজব ছড়িয়েছে তদন্ত কমিটি সেসব ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পেরেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে তাদের নাম বলা যাচ্ছে না। আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সবাই জানতে পারবে, তারা কারা।’ 

তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি যেসব পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ দিয়েছে সেগুলো আমলে নিয়ে ঘটনায় যেখানে যেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন, তা বাস্তবায়ন করা হবে।’

আরও পড়ুন: ‘প্রধান শিক্ষকের লুটপাট ও অনিয়ম ঢাকতেই হিজাব বিতর্ক’

প্রভাবমুক্ত হয়ে তদন্ত করতে পেরেছেন উল্লেখ করে তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসীকে আমরা ডেকেছি। সবার সব কথা শুনে এবং তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। ইউএনও প্রতিবেদন গ্রহণ করেছেন। সেই সঙ্গে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

গত শুক্রবার (৮ এপ্রিল) শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল মালেককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসীকে ডেকে কথা বলেছে তদন্ত কমিটি

গত বুধবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংগীত চলাকালে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনী পাল স্কুলড্রেস পরে না আসায় কয়েকজন ছাত্রীকে মারধর করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বদিউল আলম অষ্টম শ্রেণির তিন ছাত্রীকে মারধর করেন। পরে হিজাব পরায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। 

আরও পড়ুন: স্কুলড্রেসের জন্য বিদ্যালয়ে হামলার ৩ দিন পর থানায় জিডি

এ ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে আসবাব ভাঙচুর করে স্থানীয়রা। এরপর ঘটনা তদন্তে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। 

আরও পড়ুন: ‘স্কুলড্রেস নিয়ে শাসন করেছি, হিজাবের বিষয়ে কিছু বলিনি’

তবে শুরু থেকেই শিক্ষিকা আমোদিনী পাল বলে আসছিলেন, ‘হিজাব পরায় ছাত্রীদের মারধর করা হয়নি। ওই দিন রাতে হিজাব পরে বিদ্যালয়ে যাওয়ায় ছাত্রীদের মারধর করা হয়েছে, শামীম আহমেদ জয় নামের ফেসবুক আইডি থেকে এমন একটা পোস্ট দেওয়া হয়। পরে বিভিন্নজন ফেসবুক পোস্টটি ছড়িয়ে দেন। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যাচার। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি ২২ বছর ধরে ওই প্রতিষ্ঠানটি পরিবারের মতো পরিচালনা করে আসছি। ওই দিন শিক্ষার্থীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বারবার বলার পরও অনেকেই স্কুলড্রেস না পরেই বিদ্যালয়ে আসে। এ সময় স্কুলড্রেস নিয়ে শিক্ষার্থীদের বলি ও নামমাত্র শাসন করি।’

Source link

Related posts

সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর খুলনার সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক

News Desk

কঠোর বিধিনিষেধ ‘অনেকটাই ঢিলে’ হয়ে গেছে

News Desk

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বরিশালে বিক্ষোভ

News Desk

Leave a Comment