স্ত্রীর গয়না বিক্রির টাকায় কৃষি খামার, মাসে আয় লাখ টাকা
বাংলাদেশ

স্ত্রীর গয়না বিক্রির টাকায় কৃষি খামার, মাসে আয় লাখ টাকা

বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে ৩৭ বছরে ২২টি দেশ ঘুরেছেন আবুবকর সিদ্দিক সুমন। এর মধ্যে তার স্ত্রী কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। চিকিৎসা করাতে উপার্জনের সব টাকা শেষ হয়ে যায়। পরে স্ত্রী মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির ৬৬ হাজার টাকায় শুরু করেন সমন্বিত কৃষি খামার। এখন এই খামার থেকে মাসে লাখ টাকা আয় হয়। এ বছর ১৫ লাখ টাকা আয় করার আশা তার।

আবুবকর সিদ্দিক সুমন (৪৫) বরিশালের বাবুগঞ্জের বায়লাখালী গ্রামের বাসিন্দা। এক একর জমিতে গড়ে তোলেন সমন্বিত কৃষি খামার। পেঁপে, লাউ, ঝিঙা ও কুমড়া চাষাবাদ করছেন। গত বছর খামারে পেঁপের বাম্পার ফলন হয়েছে। এবার বেকারদের কৃষি প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পাঠশালা খুলেছেন। নাম দিয়েছেন ‘সুমনের পাঠশালা’। পাঠশালায় ভিড় করছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বেকার যুবক, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজশিক্ষার্থীরা। এখন সবাই তাকে স্যার বলে ডাকছেন।

গেলো বছর পেঁপের বাম্পার ফলন হয়েছে জানিয়ে আবুবকর সিদ্দিক সুমন বলেন, ‘ওই বছর একটি গাছে পাঁচ থেকে ছয় মণ পর্যন্ত পেঁপে উৎপাদন হয়। ফল ও চারা বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা আয় করেছি। এ বছর বাড়ি সংলগ্ন এক একর জমির ওপর এক হাজার পেঁপের চারা রোপণ করেছি। একইসঙ্গে দুটি পুকুর পাড়ে লাগিয়েছি আট শতাধিক লাউ গাছ। এক মাস ধরে পেঁপে ও লাউ বিক্রি শুরু করছি। প্রতিদিন আট থেকে ১০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করি। সেইসঙ্গে লাউ, ঝিঙা ও কুমড়া বিক্রি করছি। মাসে দেড়-দুই লাখ টাকা আয় হয়।’

এ বছর প্রতিটি গাছে চার থেকে পাঁচ মণ পেঁপে ধরেছে জানিয়ে সুমন বলেন, ‘বাছাই করে বড়গুলো ১৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি। এছাড়া পাকা পেঁপে বিক্রি করি ৭০ টাকা কেজি দরে। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পেঁপে, লাউ ও লাউয়ের শাক কিনে নেন। লাউ বিক্রি হচ্ছে আকার অনুযায়ী।’

এ বছর প্রতিটি গাছে চার থেকে পাঁচ মণ পেঁপে ধরেছে বলে জানালেন সুমন

ভালো ফলনের জন্য সুমন প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জমিতে শ্রম দিচ্ছেন। প্রতিটি গাছের ফলন যাতে একই রকম হয়, সেজন্য সারাক্ষণ কর্মব্যস্ত থাকেন। এর ফাঁকে প্রশিক্ষণার্থীদের আসা শুরু হয়। তাদের নিয়ে প্রতিটি গাছের কাছে গিয়ে বোঝান কীভাবে ভালো ফলন হয়েছে। আবার ফলন না হলে, কী কারণে হয়নি; তাও বোঝাচ্ছেন। প্রশিক্ষণার্থীরা সুমনের বাগানকে নিজের মনে করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন। বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে খুলেছেন পাঠশালা। সেখানে বেকার যুবকরা প্রশিক্ষণ নেন।

সুমন আরও বলেন, ‘এ বছর পেঁপে, লাউ, ঝিঙা ও কুমড়া এবং এসবের চারা বিক্রি করছি। সমন্বিত চাষাবাদে দুই লাখ টাকা ব্যয় করেছি। কোনও ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে ব্যয় বাদ দিয়ে ১৫ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি। বেকারদের ঘরে বসে না থেকে কৃষিকাজে মনোযোগ দিলে সফলতা আসবে।’

চরমোনাই এলাকার বাসিন্দা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বলেন, ‘সুমনের চাষাবাদ দেখে উদ্বুদ্ধ হই। এজন্য প্রশিক্ষণ নিতে এসেছি।’

সুমনের কৃষি খামারে প্রশিক্ষণার্থীরা

আরেক প্রশিক্ষণার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘পড়াশোনা শেষে চাকরির জন্য অনেকে দৌড়াদৌড়ি করছেন। কিন্তু চাকরি পাননি। এ অবস্থায় সুমনের কৃষি খামার দেখে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। তিনি কৃষিকাজ করে সফল হয়েছেন, আশা করছি আমিও সফল হবো।’

ডিগ্রিতে পড়ুয়া মেহেদী হাসান আরও বলেন, ‘লেখাপড়ায় উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে চাকরি পাবো কিনা, তার নিশ্চয়তা নেই। এজন্য চাষাবাদে মনোযোগ দিয়েছি। সুমন স্যারের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষাবাদে নেমে পড়বো।’

 

Source link

Related posts

আধুনিকায়ন করে পাটকল চালুর দাবি সংগ্রাম পরিষদের

News Desk

ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল, স্বীকার মালিকপক্ষের

News Desk

ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম জোরদারে তাগিদ প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর

News Desk

Leave a Comment