সিরাজগঞ্জে গত দুই সপ্তাহ ধরে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। এতে নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলগুলো একের পর এক প্লাবিত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের মানুষ। বাধ্য হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অনেকে বাঁধ ও উঁচু জায়গায় নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ আবার রাস্তার ধারে ঝুপড়ি করে আছেন। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।
যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার কাজিপুর, চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরের চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
মঙ্গলবার (২১ জুন) সকাল ৯টায় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন ও পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ এলাকায় আরও ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। পানি বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যেমন যমুনার চরের নতুন ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, গবাদিপশু ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন দূরের কোনও আত্মীয়ের বাড়ি বা নিরাপদ স্থানে। তবে নিজেরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটালেও শিশু সন্তান ও গবাদিপশুর খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। শুকনো জ্বালানি কাঠের অভাবে রান্নাও করা যাচ্ছে না। খোলা আকাশের নিচে খরকুটা দিয়ে কোনোমতে রান্না করছেন।
সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের গুনেরগাতী গ্রামের বানভাসি কোরবান আলী বলেন, ‘বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে গলাপানি। কোনও জিনিসপত্র বের করতে পারি নাই। কয়েকটা টিন খুলে এনে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি।’
একই গ্রামের রমজান আলী ও কালু শেখ বলেন, ‘ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যাওয়ার মতো কোনও জায়গা নাই। তাই ওয়াপদার ধারে পলিথিন টাঙিয়ে কোনোমতে জীবনযাপন করছি। বৃষ্টির কারণে সময়মতো রান্নাও করতে পারি না। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হচ্ছে। এখনও কোন ত্রাণ সহায়তা পাইনি।’
খোকশাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল হাসান বলেন, ‘বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দুর্গতদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা শেষে তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। সবসময় তাদের খোজঁ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুকাতে রাব্বি বলেন, ‘বানভাসি মানুষের কষ্ট নিরসনে ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভা করেছি। চেয়ারম্যানরা আপডেট জানিয়েছেন, সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ত্রাণের বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছি। বরাদ্দ আসলেই বানভাসিদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।’
সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান জানান, বন্যার্তদের জন্য ইতিমধ্যেই ৯১১ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২০ লাখ টাকা এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এগুলো বিতরণের জন্য স্ব-স্ব এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বিতরণ করা হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে আরও অন্তত তিন দিন। চৌহালী ও শাহজাদপুরের ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে যমুনার চর ও নিম্নাঞ্চল। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা ও ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদ বলেন, ‘বানভাসি মানুষের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা তালিকা তৈরির কাজও শুরু করেছেন। খোঁজ-খবর নিয়ে বন্যাকবলিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।’