Image default
বাংলাদেশ

সিন্ডিকেট করে চাল মজুত, কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা

দিনাজপুরের হিলিতে হঠাৎ করেই চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রমজানের ভেতরেও সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮-১০ টাকা করে। আর মোটা চালের বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা। হঠাৎ করে চালের এমন দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা। সাধারণ মানুষ চালের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দাম কমানোর জোর দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে চাল আমদানি বন্ধের সুযোগে অসাধু মিল মালিকদের সিন্ডিকেট চাল মজুত করে দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিন হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে বাজারে প্রতিটি চালের দোকানেই পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এরপরেও দিন দিন চালের দাম বাড়ছে। মিনিকেট জাতের চাল সপ্তাহখানেক আগেও ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। তবে এখন তা বেড়ে ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শম্পাকাটারি জাতের চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকা বিক্রি হলেও, তা বেড়ে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, স্বর্না-৫ জাতের চাল ৪০ টাকা বিক্রি হলেও তা এখন ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। আমাদেরতো আয় রোজগার বাড়েনি। কিন্তু যেভাবে চালের দাম বাড়ছে, তাতে সংসার চালানোই অসম্ভব হয়ে উঠছে। যে চিকন চাল কয়েকদিন আগেও ৫৫-৫৬ টাকা কেজি দরে কিনেছি, তাই এখন ৬০ থেকে ৬২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে চালের দাম এমনভাবে বাড়ার কারণ বুঝতে পারছি না। রমজানের মাসে এমন বাড়তি খরচে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন বলে জানান আশরাফুল।  

বাজারে কথা হয় ক্রেতা আব্দুল ওয়ারেছের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগে যেখানে আমরা চাল কিনতাম ২০ কেজি, এখন সেখানে অর্ধেমক বা তার কম চাল কিনতে হচ্ছে। কারণ দাম হঠাৎ করে অনেক বেড়ে গেছে। এতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এখন চিকন চাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা হয়ে গেছে। এমন দামে কীভাবে সাধারণ মানুষ চাল কিনে খাবে? আগে যখন দাম কম ছিল তখন মানুষ চাল কিনতে পেরেছে, এখন তো সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান  তিনি।

হিলি বাজারের চাল ব্যবসায়ী সুব্রত কুন্ডু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চালের দাম বাড়ার একমাত্র কারণ অটোমিলারদের কারসাজি। তারা যেই দেখেছে সরকার ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে, সেই সুযোগে তারা চাল মজুত করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন তো আর কোনও ধান কৃষকের কাছে নেই, সব ধান মিলারদের কাছে। যে কারণে মিলাররা এখন বাজারে পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। 

ধান ও চালের দামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ধরে নিলাম এক মণ ধান মিলাররা ১১০০ টাকায় কিনেন। এক মণ ধান থেকে ২৭ কেজি চাল হয়। সে অনুযায়ী এক কেজি চালের পড়তা পরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। সর্বোচ্চ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা হতে পারে। তবে মিলাররা আরও কমদামে ধান সংগ্রহ করেন। যে কারণে তাদের খরচ আরও কম আসবে। কিন্তু ওই চাল মিলাররা বিক্রি করছেন ৬০ টাকা কেজি দরে। আর তাদের কাছ থেকে ওই দামে ক্রয় করে পরিবহন খরচসহ খুচরা বাজারে ৬৩-৬৪ টাকায় বিক্রি করতেই হবে। যে কারণে চালের দাম আরও বাড়বে। বিশেষ করে নতুন ধান আসা না পর্যন্ত দাম বাড়তে থাকবে। 

তবে চালের দাম বাড়ার পেছনে মিলারদের কারসাজি নেই বলে দাবি করেছেন দিনাজপুরের মেসার্স চার ভাই অটোরাইস মিল মালিক সাদেকুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মূলত ধানের দাম বাড়ার কারণেই চালের দাম বেড়েছে। ইতোমধ্যে চালের দাম কেজি প্রতি ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা করে কমেছে। নতুন ধান উঠলে ঈদের পর চালের দাম আবার কমে আসবে বলেও জানান তিনি। 

তবে কেউ হয়তোবা মিল থেকে বাড়তি রেটে চাল কিনে এখনও বিক্রি করতে না পারায় সেগুলো বাড়তি দামে বিক্রি করছে বলে জানান তিনি। 

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বন্দর দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে বন্দর দিয়ে মাত্র ৩৬ টন চাল এসেছে। চালের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর ফলে মূলত চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান তিনি।

Source link

Related posts

৭০ শতাংশ ফুসফুস উপসর্গ ছাড়াই অকেজো হয়ে যাচ্ছে

News Desk

মরিচের কেজি ২৮ লাখ টাকা, কীভাবে এলো বাংলাদেশে?

News Desk

ময়মনসিংহ নগরীতে যানজটে চরম দুর্ভোগ

News Desk

Leave a Comment