টাঙ্গাইলে ছাত্র প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের টাঙ্গাইল শহরের ছোটকালীবাড়ি এলাকার একটি ছয়তলা ভবন দখল করেছেন সমন্বয়ক মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি। শনিবার (৮ মার্চ) দুপুরে তালা ভেঙে ২০ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে নিয়ে ওই ভবনে প্রবেশ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতার ভবন দখল করা প্রসঙ্গে মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি বলেন, ‘ফেসবুকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সব নেতার বাড়িতে পাগলদের জন্য ‘আশ্রম’ গড়ে তোলা হবে। তারই অংশ হিসেবে শনিবার সকালে তালা ভেঙে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের ছয়তলা ভবনে প্রবেশ করা হয়েছে। ওই বাসায় আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের ২০ জন পাগল রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটিকে জবরদখল বলা যাবে না, কারণ কোনও ব্যক্তি বিশেষের ব্যবহারের জন্য ভবনটি নেওয়া হয়নি। সমাজের অবহেলিত পাগলদের জন্য আশ্রম করা হচ্ছে।’ এ বিষয়ে অন্য সমন্বয়করা তাকে সমর্থন দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি জানান, জোয়াহেরুল ইসলামের পক্ষ থেকে একজন লোক এসে জানান, বাসা না ভেঙে সেখানে যেন আশ্রম করা হয়। তার প্রস্তাব অনুযায়ী পাগলদের আশ্রমই তৈরি করা হয়েছে। তবে এ কথা কে বলেছেন তার নাম-পরিচয় বলতে পারেননি তিনি।
এদিকে, আবাসিক এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের আশ্রম তৈরি করায় স্থানীয়রা অস্বস্তি প্রকাশ করলেও তারা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে মারইয়াম জানান, আবাসিক এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় যদি মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের কোনও প্রভাব পড়ে, তাহলে তাদের কয়েকজনকে অন্য কোনও আওয়ামী লীগের নেতার বাসায় স্থানান্তর করে কম ভারসাম্যহীনদের এখানে রাখা হবে।’
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক আল আমিন বলেন, ‘মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নামে একজন নারী ছাত্র প্রতিনিধি তথা সমন্বয়ক পরিচয়ে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের জন্য আশ্রম করেছেন বলে শুনেছি। আমরা এটিকে কোনোভাবেই সমর্থন করি না। তা ছাড়া মারইয়াম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছিলেন, তাই বলে তিনি বিশেষ সুবিধা নেবেন এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এটি ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের মূল স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। বর্তমানে কেউ সমন্বয়ক পরিচয় দিতে পারবে না। কারও বাড়ি দখল করার কোনও কার্যক্রম তারা হাতে নেননি। যে-কেউ এরকম কাজ করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। যেহেতু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে ফেলেছেন, সেখানে ছাত্র প্রতিনিধি বা সমন্বয়ক বলতে আর কিছু থাকে না। এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি।’
প্রসঙ্গত, গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের বাসায় ঢুকে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম স্বপরিবারে আত্মগোপণে রয়েছেন।