টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের নারীরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা অর্জন করায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন মারিয়া মান্দা-সানজিদা আক্তারদের গ্রাম কলসিন্দুরের বাসিন্দারা। এবারও টুর্নামেন্টে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রাম থেকে খেলেছেন ছয় নারী ফুটবলার। তাদের সাফল্যে নারী ফুটবলের আঁতুড়ঘরখ্যাত কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে মিষ্টিমুখ করেন শিক্ষক, কোচ ও খুদে ফুটবলাররা। পাশাপাশি গ্রামের চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের বরণ করে নিতে অপেক্ষা করছেন গ্রামের মানুষজন।
গত বুধবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হন বাংলাদেশের নারীরা। টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন চার শিক্ষার্থী, বর্তমান দুই শিক্ষার্থীসহ ছয় জন। তারা হলেন মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার ও শিউলি আজিম। টুর্নামেন্টে তহুরা ভুটানের বিপক্ষে ৩ গোল, ভারতের বিপক্ষে ২ গোল ও শামসুনাহার জুনিয়র ১ গোল করেছেন।
গ্রামের মেয়েদের এই সাফল্যে কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বৃহস্পতিবার দুপুরে মিষ্টিমুখের আয়োজন করা হয়। সেখানে সাথী আক্তার, রুজিনা আক্তার, সাদিয়া আক্তার, আফরোজা বেগম, মল্লিকা হাসিনাসহ অন্তত ৩৪ খুদে নারী ফুটবলার উপস্থিত হয়। যারা ভবিষ্যতে জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখে। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফুটবল কন্যাদের মা হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক মালা রানী সরকার, ফুটবল কোচ জুয়েল মিয়াসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
খুদে নারী ফুটবলার ও গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলসিন্দুরের নারী ফুটবলাররা লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছেন। তাদের জন্যই গর্বিত কলসিন্দুর গ্রাম। কলসিন্দুর থেকে ধোবাউড়াসহ গোটা ময়মনসিংহ এখন আনন্দে ভাসছে। তাদের বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় গ্রামবাসী।
মেয়েদের এমন সাফল্যে গর্বিত তহুরা খাতুনের বাবা ফিরোজ মিয়া। বলেন, ‘শুরুতে ফুটবল খেলতে অনেকে নিষেধ করেছিল। এমনকি বাধা দিয়েছিল। সব বাধা পেরিয়ে এখন দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে আমাদের কন্যারা। মেয়েদের এমন সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকুক।’
সানজিদা আক্তারের বাবা লিয়াকত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার জীবনে এই আনন্দ আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে। আমাদের মেয়েরা ফুটবল খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে, আমরা গ্রামবাসী গর্বিত।’
কলসিন্দুরের খুদে ফুটবলারদের কোচ জুয়েল মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অজপাড়াগাঁয়ের আমাদের মেয়েরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে বারবার। এটি আমাদের জন্য আনন্দের। তাদের এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে কলসিন্দুর স্কুল মাঠে খুদে ফুটবলারদের নিয়মিত অনুশীলন চলছে। আরও ৫০ জন মেয়ে ফুটবলারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে থেকে আগামীতে আরও কয়েকজন জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাবে।’
কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের ম্যানেজার মালা রানী সরকার বলেন, ‘স্থানীয় খেলোয়ারদের জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে ইতোমধ্যে কলসিন্দুরে একটি ফুটবল একাডেমি গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছি আমরা। রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার জন্য ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। আশা করছি, দ্রুত কাজ শুরু করতে পারবো। এই মেয়েরা আগামী দিনে আরও বড় কিছু দেশের জন্য বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা রাখি আমি।’
জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো সবাইকে গৌরবান্বিত করেছেন আমাদের মেয়েরা। গতবার তাদের স্থানীয়ভাবে ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। এবারও তাদের কীভাবে বরণ করা হবে, সে বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে আমাদের।’