গাজীপুরের শ্রীপুরে উন্নত জাতের লিচু আবাদ করেছেন চাষিরা। এর মধ্যে একটি ঘন গোলাপি রঙের লিচু। পাশাপাশি পাতি (চায়না-৩), কদমী, বোম্বে, ভেরারী ও দেশি লিচুর আবাদ করেছেন তারা। এবার উপজেলায় ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
চাষিরা জানিয়েছেন, গত দুই বছর করোনা মহামারিতে লিচু বিক্রি কম হয়েছে। এবার ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন। এভাবে বিক্রি হলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রীপুরের বিভিন্ন লিচু বাগানের গাছে ঝুলছে গোলাপি রঙের লিচু। এরই মধ্যে কেউ কেউ গাছ থেকে লিচু নামাতে শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ নামানোর অপেক্ষা করছেন।
তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী গ্রামে দেখা গেছে, গাছ থেকে লিচু নামাচ্ছেন চাষিরা। ৫০ ও ১০০ লিচুর আঁটি বাঁধছেন শ্রমিকরা। ১০০ লিচু ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন চাষিরা।
টেপিরবাড়ী গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দেশি জাতের লিচু গাছ আছে ১৫০, কদমী ৬০ ও বোম্বে ১০টি। বাণিজ্যিকভাবে কদমী এবং বোম্বে জাতের লিচুর বাজার ভালো। ফলন ভালো হয়েছে, দামও ভালো পাচ্ছি।’
শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া গ্রামের লিচু চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশি ও উন্নত জাতের লিচুর পরিচর্যা একই রকম। পাতি বা দেশি জাতের লিচু প্রতিটি দেড় টাকা এবং উন্নত জাতের লিচু চার থেকে পাঁচ টাকা বিক্রি করা যায়।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে শ্রীপুরে আসা লিচু বেপারি আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। বেচাকেনাও ভালো। করোনার কারণে গত দুই বছর লিচু বাগান কিনলেও বিক্রি করতে পারিনি। এবার ব্যবসা ভালো হচ্ছে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আয় কম হচ্ছে।’
রাজাবাড়ী ইউনিয়নের হালুকাইদ গ্রামের চাষি নূর মোহাম্মদ আলী শেখ জানান, তার ২০টি লিচু গাছ রয়েছে। গত দুই বছর করোনার কারণে লিচুর ফলন ভালো হলেও সময়মতো বিক্রি না করতে পারায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে এক লাখ ৭০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। বাজারে ১০০ লিচু ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি করছেন। বিক্রি ভালো হওয়ায় করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন।
উপজেলার পাবুরিয়াচালা গ্রামের লিচু চাষি আব্দুর রউফ বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ১৬টি লিছু গাছে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। আশা করছি, দাম ভালো পাবো। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার লিচুতে পোকার আক্রমণ কম।’
লিচু ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, ‘আড়াই লাখ লিচু কিনেছি তিন লাখ টাকায়। এবার ফলন ভালো হওয়ায় লিচুর দাম বাজারে কিছুটা কম। আকার আকৃতির দিক থেকে অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা ব্যতিক্রম হওয়ায় চাহিদা কমেছে। তবে লোকসান হবে না।’
স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল বলেন, ‘করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, এবছর লিচু বিক্রি করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছেন। ১৩ লাখ লিচু কিনেছি। আমার বাগানে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। বৃষ্টির হয়েছে বলে সেচ না লাগায় খরচ কমেছে। ব্যবসা ভালো হচ্ছে।’
স্থানীয় চাষি এনামুল হক বলেন, ‘শ্রীপুরে এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে অনেক লিচু ঝরেও গেছে। এবার দাম ভালো পাচ্ছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় দেড় হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে লিচু চাষ হয়। আবাদের প্রায় অর্ধেক শ্রীপুরে হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘এবার শ্রীপুরে ৭৩০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দেশি বা পাতি (চায়না-৩) ৫০ হেক্টর, কদমী ৪০ হেক্টর, বোম্বে ১৫৫ হেক্টর, ভেরারী ১৫ হেক্টর ও বাকিগুলো দেশি জাতের লিচু। ফলন ভালো হয়েছে, দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।’
তিনি বলেন, ‘এবার ৭৩০ হেক্টর জমিতে তিন হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয়েছে। আশা করছি, ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে।’