Image default
বাংলাদেশ

‘শেখ হাসিনা আমাদের জীবনটা বদলে দিয়েছেন’

‘আমরা খুব কষ্টে ছিলাম। বাপ-মা খুব কষ্ট করছেন। ভালো বাড়ি ও জমি ছিল না। সবাই আমাদের কেমন চোখে দেখে। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এমন উপহার দিলেন, যেন আমাদের নতুন জীবন দিলেন। এতো সুন্দর পাকা ঘরবাড়ি দিয়েছেন। আমরা খুব খুশি। শেখ হাসিনা আমাদের জীবনটা বদলায় দিয়েছেন।’

কথাগুলো বলছিলেন সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত দেশের প্রথম ‘হরিজন পল্লিতে’ ঘর পাওয়া সুনীল লাল বাঁশফোর। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা সুনীল বাঁশফোরের মতো এই সম্প্রদায়ের ৩০টি পরিবার নিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারীর থানাহাট ইউনিয়নে তৈরি করা হয়েছে এই পল্লি। পেশায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা এই পরিবারগুলোর নামে জমি ও ঘর দিয়ে বুধবার (৯ আগস্ট) তা আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বংশ পরম্পরায় সরকারি খাস জমিতে বসবাস করা হরিজন সম্প্রদায়ের এই পরিবারগুলো নিজেদের নামে জমি ও পাকা ঘর পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছেন। তাদের অভিব্যক্তির প্রতিটি বাক্যে শুধু সরকার প্রধান ও স্থানীয় প্রশাসনের বন্দনা।

স্থানীয় প্রশাসন বলছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেশে এটিই প্রথম সরকারিভাবে গড়ে ওঠা ‘হরিজন পল্লি’। চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ফকিরপাড়া এলাকায় এক কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় এক একর জমি কিনে এই পল্লি গড়ে তোলা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় এতে ৩০টি হরিজন পরিবারকে নিজেদের নামে জমি দিয়ে ঘর করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

হরিজন যুবক সুনীল বলেন, ‘আমরা যে কষ্ট করছি আমাদের সন্তানদের যেন এই কষ্ট করতে না হয়। আমাদের যেন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। সন্তানরা যেন পড়াশোনার সুযোগ পায়। তারা যেন সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে- এমন সুযোগ আমরা চাই।’

‘শেখ হাসিনা আমাদের জীবনটা বদলে দিয়েছেন’

একই দাবি পল্লিতে ঘর পাওয়া গৃহিণী পারুল রানীর। নিজেদের নামে জমি ও ঘর পাওয়ায় তুষ্টি প্রকাশ করে এই নারী বলেন, ‘সরকারি জায়গায় (খাস) ছিলাম, ছোট একটা ঘর। এখানে আসি জায়গা ও ঘর পাইছি। বাচ্চা কাচ্চা নিয়া সুখে শান্তিতে থাকতে পারবো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাগুলা তাদের জন্য যদি একটা স্কুল হইতো তাহলে ভালো হইতো। তারা শিক্ষা অর্জন করতে পারতো, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতো।’

‘আমাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী যেটা করলেন তা কল্পনাও করিনি। আমরা চাই আমাদের জন্য কর্মের ব্যবস্থা করা হোক। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিকে যেভাবে নজর দিয়েছেন আমাদের বাচ্চাকাচ্চার দিকেও যেন সেভাবে দেন। আমরা যেন তাদের হাতে কলম তুলে দিতে পারি- তারা যেন লেখাপড়া করে সমাজে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। এটাই আমাদের চাওয়া,’ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও প্রত্যাশা জানিয়ে এভাবে বলেন আরেক হরিজন যুবক রানা বাঁশফোর।

‘শেখ হাসিনা আমাদের জীবনটা বদলে দিয়েছেন’

সুনীল, পারুল আর রানার মতো ঘর পাওয়া পরিবারগুলোতে এখন আনন্দের জোয়ার বইছে। পাকা ঘর, বিদ্যুৎ, পানি আর চলাচলের প্রশস্ত রাস্তা পেয়ে তারা যেন প্রথমবারের মতো মানবিক জীবন যাপনের পরিবেশ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রশস্ত আঙিনায় তাদের সন্তানরা মুক্ত বাতাসে খেলাধুলা করার সুযোগও পাচ্ছে। অথচ কয়েক মাস আগে তারা খাস জমিতে ঝুপড়ি ঘরে ছিলেন। বসবাসের অনুপযোগী সেসব ঘরে ছিল না কোনও মানবিক কিংবা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। ছিল না কোনও আলোকিত ভবিষ্যৎ। হরিজন সম্প্রদায়ের এই পরিবারগুলোর মানবিক অধিকারের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন তাদের জন্য এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘চিলমারীর ৩০টি হরিজন পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এসব পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার জন্য শিক্ষকের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নারীদের জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ এবং পুরুষদের জন্য ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে। তারা যেন সমাজের মূলধারায় মিলিত হয়ে দেশের অগ্রযাত্রায় অংশ নিতে পারেন সে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীন চতুর্থ পর্যায়ে (২য় ধাপ) দেশব্যাপী উপহারের ঘর উদ্বোধন ও হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ধাপে কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ৫০৫টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার পেয়েছেন। এদের মধ্যে চিলমারীর হরিজন সম্প্রদায়ের ৩০ পরিবার ও রাজারহাটের ১৯ ঢুলি পরিবার রয়েছে।

Source link

Related posts

ইলিশের মণ লাখ টাকা

News Desk

কঠোর লকডাউনের মেয়াদ বাড়ল আরো ৭ দিন

News Desk

বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত চাঁদপুর জেলা আ.লীগের

News Desk

Leave a Comment