শিম ক্ষেতে পচন রোগ, চাষিদের মাথায় হাত
বাংলাদেশ

শিম ক্ষেতে পচন রোগ, চাষিদের মাথায় হাত

যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু শিমের ক্ষেত। মাচায় সবুজ পাতার সঙ্গে দুলছে রঙিন ফুল। রয়েছে ছোট ছোট শিম। কিছুটা দূর থেকে দেখলে মনে হবে নিশ্চয়ই ভালো ফলন হবে। কিন্তু না। কাছাকাছি গেলে মন বিষণ্ণ হবে যে কারও। ফুলগুলো পচে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। পাতা শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। কীটনাশক এবং ওষুধ দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না এই পচন রোগ। এ নিয়ে দিশেহারা কৃষকরা। অনেকের দুশ্চিন্তায় মাথায় হাত।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের ভাটিচন্দ্রপুর গ্রামের শিম চাষিদের ক্ষেতের অবস্থা এমনই। গ্রামটিতে প্রতি বছর শিমের বাম্পার ফলন হয়। ফলে আগ্রহ নিয়ে চাষাবাদ করেন চাষিরা। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। ক্ষেতে দিনরাত শ্রম দিয়েও ভালো ফলন দূরের কথা, খরচ উঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

ভাটিচন্দ্রপুর গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের মাঠজুড়ে শিমের ক্ষেত। পাতা ও ফুলসহ শিম ঝরে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে চাষিদের কেউ কীটনাশক দিচ্ছেন, কেউ গাছের শুকনো পাতা ছাঁটাই করছেন। গাছের গোড়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী পানি দেওয়াসহ পরিচর্যা করছেন কয়েকজন। ফুল আর পাতা ঝরা রোগের প্রতিকার নিয়ে এক কৃষক আরেক কৃষকের সঙ্গে ক্ষেতের আইলে বসে আলোচনা করছেন।

৪০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছেন এই গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘গ্রামের চার শতাধিক চাষি শিম চাষের সঙ্গে যুক্ত। প্রতি বছর ধারদেনা করে চাষাবাদ করেন। ফসল বিক্রি করে তা পরিশোধ করেন। এ বছর ফুল আসার সঙ্গে সঙ্গে অনেক গাছের পাতা, ফুল ও শিম ঝরে যাচ্ছে। কীটনাশক ও ওষুধ দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে আগামীতে অনেকে শিম চাষ নিয়ে শঙ্কায় পড়বেন।’

৭৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল দেশীয় বারি শিম চাষ করেছেন একই গ্রামের কৃষক বাবুল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘এই জাতের শিম খেতে দারুণ স্বাদ হওয়ায় বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কিছুদিন পর বাজারে শিম আসবে। তখন দাম কমে যাবে। এখনও আমার ক্ষেতের শিম বড় হয়নি। ফুল পচে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। পাতা ঝরে যাচ্ছে। গাছের ডালগুলো মরে যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও ডিলারদের পরামর্শে কীটনাশক এবং ওষুধ দিয়েছি। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে ৬০ মণের বেশি শিম উৎপাদন হয়েছিল। এবার ২০ মণও হবে না। বড় ধরনের লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছি।’

একই শঙ্কা প্রকাশ করে কৃষক আব্দুস সালাম মন্ডল বলেন, ‘এই গ্রামে উৎপাদিত শিম ময়মনসিংহসহ দেশের সব এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। তারা ট্রাকভর্তি করে নিয়ে গিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। এবার ১ একর ৪০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছি। শিম চাষের আগে একই জমিতে শসা চাষ করেছিলাম। শসার ওই মাচায় শিম আবাদের ফলে খরচ কিছুটা কমেছে। কিন্তু শিম গাছের অনেক ফুল ও পাতা পচে শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে। ফলে এবার ভালো ফলন হবে না।’

গাছের পাতা, ফুল ও শিম ঝরে যাচ্ছে

একই গ্রামের কৃষক শামসুজ্জামান ১ একর ২০ শতাংশ জমিতে শিম আবাদ করেছেন। তারও অনেক গাছ একই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ফলন কম হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত হলে আগামী বছর শিম চাষ করবেন না বলে জানিয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা জানান, জেলায় বারি-২, আশ্বিনা ও নলডোগ জাতের শিমগুলো বেশি চাষ হয়। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় বেশিরভাগ কৃষক দেশীয় জাতের শিম চাষ করেন। চলতি বছর ঈশ্বরগঞ্জের ৪০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। প্রতি বছর প্রচুর শিমের আবাদ হয়। তবে ভাইরাস ও পচন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কীটনাশক ছিটাতে হবে। যেসব গাছ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, ওই জমিতে দু-তিন বছর শিম চাষ না করা ভালো। বিরতির পর চাষ করলে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ময়মনসিংহের উপপরিচালক ড. নাছরিন আক্তার বানু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত চাষিদের ক্ষেত পরিদর্শন করছি। কীভাবে পচন রোগ প্রতিরোধ করতে হবে, সে পরামর্শ দিচ্ছি। কীটনাশক ছিটালে পচন কিছুটা কমে যাবে। আশা করছি, এবারও ভালো ফলন হবে।’

Source link

Related posts

লিচু নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

News Desk

সুন্দরবনের আগুন নেভাতে যোগ দিয়েছে নৌ ও বিমান বাহিনী

News Desk

দিনে লাখ টাকার ইফতার বিক্রি করেন মাসুদ

News Desk

Leave a Comment