হাতে গাঁদা ফুল নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। বিদায় সংবর্ধনা শেষে মঞ্চ থেকে অতিথিদের সঙ্গে বাইরে এলেন তাদের প্রিয় শিক্ষক। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তাকে অশ্রুশিক্ত নয়নে সুসজ্জিত একটি প্রাইভেটকারে তুলে দিলেন শিক্ষার্থীরা। বিদায়বেলার এমন আয়োজনে আবেগ-আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন সবার প্রিয় বিদায়ী শিক্ষক মাকছুদুল হাছান।
বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুর সদরের খাগুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দিনব্যাপী নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যায় সুসজ্জিত একটি প্রাইভেটকারে প্রিয় এই শিক্ষককে বাড়ি পৌঁছে দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিদায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে দেশ গড়ার লক্ষ্যে বিদায়ী এ শিক্ষক উপস্থিত সবাইকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
দীর্ঘ ৩৬ বছর ২ মাস কর্মজীবন শেষে আজ থেকে অবসরে গেলেন বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শাখার সিনিয়র শিক্ষক মাকছুদুল হাছান।
আয়োজকরা জানান, স্কুল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষক মাকছুদুল হাছান নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এই প্রথম কোনও বিদায়ী শিক্ষককে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তার এ বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আজ আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষাগুরু মাকছুদুল হাছান স্যারকে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছি। এ ছাড়া ফুলসজ্জা গাড়িতে করে স্যারকে আমরা তার বাড়িতে পৌঁছে দিলাম। মহান এ শিক্ষাগুরু আর কোনোদিন আমরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে উপস্থিত থাকবেন না। তিনি সব সময় সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতেন। তার শিক্ষায় আমাদের অনেকে আজ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছেন।’
শিক্ষক মাকছুদুল হাছান বলেন, ‘আজ আমি নিজেকে সার্থক মনে করি। একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে আমার সব ছাত্র-ছাত্রী দেশের এ ক্রান্তির মুহূর্তে আমাকে বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছেন। এ বিদ্যালয় থেকে এর আগে আর কোনও শিক্ষক সংবর্ধিত হননি। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার ভালোবাসা কখনও শেষ হওয়ার নয়। আমি সব সময় চেয়েছি তাদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। আজ তারা আদর্শ মানুষ হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।’
নোয়াখালীর সাউথ সিটি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থী মনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে আয়োজিত বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তালেব। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন– সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি নরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক শ্যামল চন্দ্র মজুমদারসহ প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।