রেললাইন কাটার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে যৌথ অভিযান
বাংলাদেশ

রেললাইন কাটার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে যৌথ অভিযান

গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন দুর্ঘটনার পর নাশকতার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও সিভিল প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের যৌথ বাহিনী। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়া গ্রামে এ অভিযান চালানো হয়।  

বনখড়িয়া এলাকা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর দুপুরে সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়েছেন ৬৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের (গাজীপুর) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রফিকুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, ‘বুধবার একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ভবিষ্যতে যাতে এখানে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সেজন্য সিভিল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য নিয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে রেললাইনটি কাটা হয়েছে। আমরা আইডেনটিফাই করার চেষ্টা করছি, এই গ্যাস সিলিন্ডার কোন জায়গা থেকে আনা হয়েছে। আমরা মনে করছি, নাশকতা ঘটিয়েছে এখানকার স্থানীয় কেউ। কারণ বাইরে থেকে কিংবা অন্য জেলা থেকে কেউ এসে নাশকতা করবে না। আমাদের উদ্দেশ্য এই এলাকার আশপাশের গ্রামের মধ্যে যে লোকজন আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলা, জিজ্ঞাসাবাদ করা। বিষয়টি মাথায় রেখে বনখড়িয়া গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কোনও সন্দেহভাজনকে পেলে গ্রেফতার করবো। টাস্কফোর্স অভিযানের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করবো, ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর সাহস কারও না হয়।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুনের নেতৃত্বে তিন প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যদের সমন্বয়ে বনখড়িয়া গ্রামে অভিযান চালানো হয়। এ সময় বিভিন্ন বাড়ি, দোকানপাট, সন্দেহভাজন ব্যক্তি, গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল মামুন বলেন, ‘রেললাইনে নাশকতার ঘটনায় বনখড়িয়া ও আশপাশের এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যৌথ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য রয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।’

এর আগে বুধবার ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের শ্রীপুরের প্রহলাদপুর ইউনিয়নের বনখড়িয়া এলাকায় আন্তনগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার কমলাপুরে যাচ্ছিল। মঙ্গলবার রাতের কোনও একসময় গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ও ভাওয়াল রেলস্টেশনের মাঝামাঝি রেলপথের একটি অংশ কেটে রাখে দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে গফরগাঁও উপজেলার রওহা গ্রামের মুরগি ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন (৩৫) নিহত হন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। ঘটনার পর থেকে ২৬ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

দুর্ঘটনার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শাহ ইমাম আলী রেজাসহ কমিটির দুই সদস্য দুর্ঘটনাকবলিত মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের কর্মকর্তা ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি ট্রেনের যাত্রী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। 

তদন্ত কমিটির প্রধান শাহ ইমাম আলী রেজা বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ট্রেনের কর্মকর্তা, কর্মী, যাত্রী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্তের পর প্রতিবেদন জমা দেবো আমরা।’

পুলিশের ঢাকা বিভাগের উপমহাপরিদর্শক সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রেললাইন কাটতে অক্সি-অ্যাসিটিলিনের ব্যবহার করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থল থেকে অক্সি-অ্যাসিটিলিন ও এলপিজি সিলিন্ডার উদ্ধার করা হয়েছে।’

এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তবে বনখড়িয়া এলাকায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় আধা কিলোমিটার অংশে সব ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ওই অংশে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত লাইনে রেলওয়ের অর্ধশতাধিক কর্মী কাজ করেছেন। লাইনের দুই পাশে এখনও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিগুলো পড়ে আছে। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথে সব ট্রেন সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করেছে।

Source link

Related posts

ট্রেনে যাত্রীদের হেনস্তা, ৩ হিজড়াকে পুলিশে সোপর্দ

News Desk

খুলনা বিভাগে করোনায় আরও ৪৭ প্রাণহানি

News Desk

সবুজ পৃথিবী বাঁচাও সাথে হিরোস ফর অল সংগঠন

News Desk

Leave a Comment