সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে রঙিন ফুলকপি। একটির রঙ গোলাপি, অপরটি হলুদ। দুটির নামও সুন্দর। গোলাপি রঙের ফুলকপির নাম ভ্যালেন্টিনা আর হলুদ রঙের নাম ক্যারোটিনা। দুই জাতের এই ফুলকপি প্রথমবার চাষ করে সফল হয়েছেন রাঙামাটির কাউখালীর ঘাগড়া ইউনিয়নের চেলাছড়া গ্রামের মঙ্গলদেবী চাকমা। ইতিমধ্যে সেগুলো বিক্রি করেছেন। তার মতো আরও কয়েকজন কৃষক রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন। ফলে পাহাড়ি এই জেলায় এই জাতের কপি চাষের দারুণ সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে ঘাগড়া ইউনিয়নের চেলাছড়া গ্রামে দেখা যায়, একই মাঠে কাছাকাছি ফুলকপির ক্ষেত। শুধু রঙিন ফুলকপিই নয়, সাথি ফসল হিসেবে ব্রকলি, বাঁধাকপি ও টমেটোসহ কয়েক জাতের সবজি চাষ করেছেন কৃষকরা। ইতিমধ্যে সেগুলো ক্ষেত থেকে তুলে বিক্রি করছেন। অন্য জাতের চেয়ে রঙিন ফুলকপির দাম বেশি পাওয়ায় আগামীতেও চাষের কথা জানিয়েছেন তারা।
কৃষকরা বলছেন, শীতকালে ফুলকপি চাষের মৌসুম হলেও তখন ন্যায্য দাম পান না। এজন্য রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন এবার। চাহিদাও বেশ। সাধারণ ফুলকপির তুলনায় দামও বেশি পাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুটি জাতের ফুলকপির মধ্যে গোলাপি রঙের ফুলকপির নাম ভ্যালেন্টিনা ও হলুদ রঙের ফুলকপির নাম ক্যারোটিনা। কাউখালী উপজেলায় এবার দুই হেক্টর জমিতে এই দুই জাতের ফুলকপি চাষ হয়েছে। সাধারণ ফুলকপি চাষের যে পদ্ধতি একই পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। খরচ, পরিশ্রম ও উৎপাদনে একই সময় লাগে। শুধু জৈব সার ব্যবহার করলেই হয়। সাদা ফুলকপির চেয়ে এই দুই জাতের পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও সুন্দর। বাজারমূল্য প্রায় দ্বিগুণ। পাহাড়ি জমিতে এই জাতের কপি চাষের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য বাণিজ্যিকভাবে চাষ বাড়াতে সব ধরনের সহায়তা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চেলাছড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার এ বছর সাদা ফুলকপি, ব্রকলি, বাঁধাকপি, রঙিন ফুলকপি ও টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করেছেন। এর মধ্যে সাদা ফুলকপি বেশি চাষ হলেও ব্রকলি ও রঙিন ফুলকপির ভালো দাম পেয়েছেন তারা। এজন্য আগামীতেও চাষ করবেন।
রঙিন ফুলকপির দাম প্রায় দ্বিগুণ উল্লেখ করে চেলাছড়া গ্রামের মঙ্গলদেবী চাকমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণত আমরা সাদা ফুলকপি চাষ করি। এ বছর যখন কৃষি অফিস থেকে আমাদের জানানো হলো রঙিন ফুলকপির বীজ দেবে তখন বিশ্বাস হয়নি। ফুলকপি রঙিন হতে পারে এটা জানা ছিল না। তবু কৃষি অফিস বীজ দেওয়ার পর ক্ষেতে লাগিয়েছি। দুই মাসের মধ্যে ফলন আসার পর দেখি রঙিন। তা দেখে আমরা সবাই অবাক হয়ে যাই। পরে সেগুলো বিক্রি করে বাজারে ভালো দাম পেয়েছি। আগামীতেও চাষ করবো।’
একই গ্রামের কৃষক জয় সিংহ চাকমা বলেন, ‘সাদার চেয়ে রঙিন ফুলকপির দাম বেশি। সেজন্য কৃষি অফিস থেকে আগামী বছরের জন্য বীজ ও অন্যান্য সহায়তা চেয়েছি। যাতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারি।’
রঙিন ফুলকপির সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে ব্রকলি চাষ করেছেন এই গ্রামের কৃষক মধুসেন চাকমা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিটি রঙিন ফুলকপি ৫০-৬০ টাকা বিক্রি করেছি। ব্রকলির বিক্রি করেছি ৬০-৭০ টাকায়। প্রতিবেশীদের খেতেও দিয়েছি। সাদা ফুলকপির তুলনায় রঙিন ফুলকপি ও ব্রকলিতে বেশি লাভ হয়েছে। কারণ মৌসুমে সাদা ফুলকপির দাম থাকে না, সেই তুলনায় এগুলোর দাম বেশি পেয়েছি।’
এ বিষয়ে কাউখালী উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শংকর তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পুষ্টি নিরাপত্তার মডেল বাগান হিসেবে চেলাছড়া গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়। এখানের ৭৮ পরিবারকে বিভিন্ন প্রকার সবজির বীজ ও সারসহ সব ধরনের সহায়তা দিয়েছি আমরা। এর মধ্যে রঙিন ফুলকপি প্রথম চাষ হয়েছে।’
উপজলো কৃষি কর্মকর্তা রাসেল সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাহাড়ে রঙিন ফুলকপি চাষের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদেরও আগ্রহ আছে। বীজ ও সারসহ সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছি আমরা। রঙিন ফুলকপিতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বাণিজ্যিকভাবে চাষ বাড়াতে সার্বিক সহায়তা করছে কৃষি বিভাগ।’