রক্ষক সিটি করপোরেশনই গিলছে বিপ্লব উদ্যান
বাংলাদেশ

রক্ষক সিটি করপোরেশনই গিলছে বিপ্লব উদ্যান

চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর ষোলশহরে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মরণে গড়ে ওঠা বিপ্লব উদ্যানে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণে কারও মানা শুনছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। পরিবেশবিদরা বলছেন, অনেকটাই একগুয়েমি করে সবুজ এই উদ্যানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে চলেছে চসিক। যেখানে কনক্রিটের স্থাপনা নির্মাণে দিনরাত কাজ করছেন শ্রমিকরা। এতে সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি ক্ষত-বিক্ষত করা হচ্ছে উদ্যান। সবুজের ধ্বংস্থলে একের পর এক গড়ে উঠছে কনক্রিটের দালান।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মরণে ১৯৭৯ সালে এ উদ্যান নির্মিত হয়। যার নাম রাখা হয়েছে ‘বিপ্লব উদ্যান’।

চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ২ নম্বর গেট এলাকায় প্রায় দুই একর আয়তন বিশিষ্ট এ উদ্যান। এটি চট্টগ্রামের একমাত্র সবুজ উদ্যান। এক সময় সবুজের সমারোহ ছিল এ উদ্যান। শহরের মাঝখানে উদ্যানটিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে আসতো নগরীর বাসিন্দারা। তবে বিপ্লব উদ্যানে এখন সবুজ নেই। নেই ফুল-সবুজ গাছপালা। আধুনিকতার নামে সবুজের সিংহভাগ গিলে খেয়েছে এ উদ্যানের রক্ষক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

উদ্যানে প্রথম আঘাতটি করা হয় ২০১৮ সালে। ওই বছর ১ নভেম্বর স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড ও রিফর্ম লিমিটেড নামে বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে সিটি করপোরেশন। বিপ্লব উদ্যানে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে ২০ বছর মেয়াদী এক চুক্তির পর উদ্যানে গড়ে তোলা হয় ইট-কনক্রিটের অবকাঠামো।

পরিবেশবাদীদের আন্দোলন অগ্রাহ্য করে তৎকালীন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের ওই পরিকল্পনায় অর্ধেকে নেমে আসে বিপ্লব উদ্যান। এর ফলে ফুল এবং সবুজে সমারোহ উদ্যানটি এখন অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। এ কাজের জন্য আ জ ম নাছিরকে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এমনকি পরিবেশবিদদের মতে, এটি ছিল মেয়র নাছিরের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

এ সমালোচনা শেষ না হতেই গত বছরের ২২ আগস্ট রিফর্ম কনসোর্টিয়াম নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে চসিক। চুক্তিতে ৩১টি শর্ত রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বিপ্লব উদ্যানের পূর্ব পাশে দোতলায় ২০০ ফুট দীর্ঘ স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। সেখানে হবে কফিশপ। একটি অংশে দোতলায় চট্টগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংবলিত জাদুঘরসহ প্রদর্শনী কেন্দ্র থাকবে।

উদ্যানের পূর্ব পাশে জাতীয় পতাকার আদলে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে একটি কাঠামো তৈরি হবে। এখানে সবুজ লতাপতা দিয়ে আবৃত্ত করে বাংলাদেশের পতাকা, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু ও চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের কৃতি সন্তানদের প্রতিকৃতি থাকবে। তবে এই কাঠামোর নিচে কিডস বা গেমিং জোন করা হবে। কাঠামোটি হেলানো অবস্থায় করা হবে। উদ্যানে এক হাজার ৩০০ বর্গফুট দুটি স্টিলের কাঠামোর ভেতর গেমিং জোন করা হবে। এতে ২৫টি ডিজিটাল স্ক্রিন, বিলবোর্ড বা মেগাসাইন, এটিএম বুথ, কিয়স্ক, প্রদর্শনী কেন্দ্র, কিডস এক্সপেরিয়েন্স বা গেমিং জোন স্থাপনের সুযোগ আছে বর্তমান মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর করা চুক্তিতে।

রক্ষক সিটি করপোরেশনই গিলছে বিপ্লব উদ্যান

অপরদিকে ২০১৮ সালে করা চুক্তি অনুযায়ী বিপ্লব উদ্যানে নির্মাণ করা হয় ফোয়ারা ও গ্লাস টাওয়ার। নতুন চুক্তিতে ফোয়ারা ভরাটের পাশাপাশি সুযোগ আছে গ্লাস টাওয়ার ভাঙারও।

বিপ্লব উদ্যানে কনক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ করায় সাধারণ মানুষের মাঝেও চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। নুরুচ্ছফা নামে ষোলশহর এলাকার বাসিন্দা বলেন, চট্টগ্রাম একটি অপরিকল্পিত শহর। এখানে খোলা কোনও মাঠ নেই। আছে সব দালান। চট্টগ্রামের একটি মাত্র উদ্যান সেটিতেও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে। এটা কোন ধরনের মানসিকতা? সিটি করপোরেশনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে আর কোথাও কি জায়গা নেই? এ উদ্যানে আগে থেকে যেসব স্থাপনা আছে সেগুলো ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি নতুন কাজ বন্ধ রাখার জন্য তিনি মেয়রের প্রতি দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ বলেন, ‘নগরীতে কোনও স্থাপনা করতে হলে আইন অনুযায়ী সিডিএর অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন কোনও অনুমোদন নেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে বিনোদনের জায়গা খুবই কম। নেই উন্মুক্ত জায়গাও। একটি শহরে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ উন্মুক্ত জায়গা থাকা প্রয়োজন। আমাদের ২০ শতাংশও নেই।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সদস্য আলিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের একমাত্র বিপ্লব উদ্যান ধ্বংস করছে চসিক মেয়র। শুধুমাত্র বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য মেয়র কোনও মানা শুনছেন না। বিপ্লব উদ্যানকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি এবং মেয়র বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এরপরও বিপ্লব উদ্যান ধ্বংসের কবল থেকে চসিক মেয়রকে বিরত রাখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব দ্রুত আদালতে যাবো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখেছি, বিপ্লব উদ্যানের জমি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নামে। অথচ সিডিএকে না জানিয়েই সিটি করপোরেশন একের পর এক বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বিপ্লব উদ্যানকে মূলত সাজানো হচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে না।’

Source link

Related posts

খুলে দেওয়া হয়েছে কাপ্তাই বাঁধের ১৬ জলকপাট

News Desk

অসম প্রেম: মসজিদের ইমাম গ্রেফতার

News Desk

দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর রমজান ও বৈশাখের শুভেচ্ছা

News Desk

Leave a Comment