রংপুরে টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী ও দুর্গম চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে প্রবেশ করছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৩০টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে গঙ্গাচড়া উপজেলায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫টি বাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজারসহ শত শত ঘরবাড়ি। পানি উন্নয়ন বোর্ড দুর্গম চরাঞ্চলের লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছে।
গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম বাগেরহাট এলাকায় কয়েকশ’ বাড়িঘর ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট ও জমির ফসল। দুর্ভোগেড় পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা সোলেমান মিয়া বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় রাস্তায় বাস করছি। অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতরভাবে দিন কাটছে। এখনও সরকারিভাবে কোনও ধরনের সহযোগিতা পাইনি।’
জানা গেছে, তিস্তার পানি গত পাঁচ দিন ধরে বাড়ছে। গত বুধবার থেকে তিস্তা নদীর পানি গঙ্গাচড়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে উপজলার ছয়টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিনবিনিয়াচরের পশ্চিমপাড়ায় ডান তীররক্ষা বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ, বাঁশঝাড়, জমি ও বসতবাড়ি। ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি যে, লোকজন বাড়িঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়াও সময়ও পাচ্ছে না। গত তিন দিনে ২৫টি বাড়ি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি জানান, বেড়িবাঁধে ভাঙনের ফলে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে হু হু করে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে। এলাকায় কয়েকশ’ বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। রাস্তা ভেঙে গেছে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম।
ওই ইউনিয়নের সদস্য মানিকা বেগম বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে তিস্তায় পানি বাড়ছে, ভাঙনও চলছে। পানি যদি আরও বাড়ে তাহলে এই এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে আজকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষগুলো।’
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ‘ভাঙনকবলিত কোলকন্দ ইউনিয়নের বিনবিনিয়া চর ও লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি গ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতির মুখে। তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এসব এলাকার বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েছেন। তাদেরকে উঁচু স্থানে যেতে বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টেকসই মজবুত বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি সমীক্ষা করা হচ্ছে। সমীক্ষা প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আহসান হাবিব বলেন, ‘রংপুরের গঙ্গাচড়ায় পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধের বাইরে ভাঙনের খবর পাওয়া গেলে জিওব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত হওয়া ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’