টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাদাম চাষ করা হয়েছে। বাদামের সবুজ গাছের চাদরে ঢেকে আছে যমুনার চর। চলতি মৌসুমে বাদামের দাম ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তাই চরের কৃষক বাদামকে ভালোবেসে নাম দিয়েছেন গুপ্তধন। যমুনার চরাঞ্চল ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাতেও বাদাম চাষ করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, নাগরপুর, কালিহাতী ও গোপালপুর উপজেলার চরাঞ্চলসহ ১২ উপজেলায় দুই হাজার ২০১ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদরে ৩৭৫, ভূঞাপুরে এক হাজার ৭২২, গোপালপুরে ২৮, নাগরপুরে সাত, বাসাইলে ২০, কালিহাতীতে ২০, ঘাটাইলে নয়, সখীপুরে পাঁচ, দেলদুয়ারে ১৪ ও মির্জাপুরে এক হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে।

যমুনা নদীর বুকজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় বালুচর রয়েছে। এসব বালুচরে মাইলের পর মাইল চাষ হচ্ছে চিনা বাদাম। সাদা বালুর জমিনে সবুজে ছেয়ে গেছে চারদিক। আবার অনেকের জমি থেকে বাদাম তোলা শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও বাদামের গাছ পরিপক্ক হয়েছে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরাঞ্চলের চাষিরা বাদাম গাছের পরিচর্যা কিংবা বাদাম তোলার কাজ করছেন। পরিবারের নারী ও শিশুরা এই কাজে সহযোগিতা করছেন। প্রতিটি গাছের মুঠি ধরে টান দিলেই উঠে আসছে চিনা বাদাম। এ যেন বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন। এই গুপ্তধন দেখে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

স্থানীয়রা কৃষকরা জানান, বালু মাটিতে অন্য কোনও ফসল উৎপাদন করে বাদামের সমপরিমাণ লাভ পাওয়া যায় না। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে চিনা বাদাম উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা বাদাম চাষ করেন। বাদাম রোপণের পর অন্য ফসলের মতো তেমন কোনও পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। নেই রাসায়নিক সারের ব্যবহার। বীজ রোপণ আর পরিপক্ক বাদাম ওঠানোর শ্রমিক খরচ ছাড়া তেমন খরচ নেই। তাই চিনা বাদাম চাষ করে যমুনার চরের কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাদের সংসার চলে কৃষিকাজ করে।

যমুনার চরের বাদাম চাষি আবু তালেব বলেন, ‘এবার ৬৬ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষ করেছি। ১২০ থেকে ১৫০ দিনের মধ্যে বাদাম তোলা যায়। এই জমিতে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যে বাদাম হয়েছে তাতে খরচ বাদে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ হবে। বাদাম ছাড়াও গাছগুলো গো-খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। এগুলো বিক্রি করে আরও কয়েক হাজার টাকা পাওয়া যাবে।’

 কৃষক আজমত আলী বলেন, ‘যমুনা চরের বালু মাটি চিনা বাদাম চাষের জন্য খুবই ভালো। প্রতি মণ কাঁচা বাদাম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি মণ শুকনো বাদাম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায়। এবার ফলন ভালো হওয়ায় এক বিঘা জমিতে আট থেকে ১০ মণ বাদাম পাওয়া যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবছর বাদামের ফলন ভালো হয়েছে।’

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার বলেন, ‘জেলায় চলতি বছর দুই হাজার ২০১ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ হচ্ছে যমুনার চরে। এই চরের কৃষকরা বাদাম চাষে সফল হওয়ায় প্রতিবছর আবাদ বাড়ছে। এছাড়া আমরা বাদাম চাষিদের প্রতিবছর বীজ দিয়ে থাকি। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চার হাজার ৮০১ মেট্রিক টন ফলন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

 

Source link

Related posts

ভ্যাকসিন দিতে না পারলে সেরাম টাকা ফেরত দেবে

News Desk

বড় বাজেট বাস্তবায়নে পাঁচ চ্যালেঞ্জ : এফবিসিসিআই

News Desk

বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল

News Desk

Leave a Comment