জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর থেকে জেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়। তবে মুন্সীগঞ্জে হাতেগোনা কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই বঙ্গবন্ধু কর্নার নেই। সরকারি নির্দেশনার পরেও বঙ্গবন্ধু কর্নার করতে উদাসীন জেলার অনেক সরকারি দফতর।
শহরের প্রাণকেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর একটি মুর্যাল করা হলেও বিভিন্ন দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফটক বন্ধ করে রাখা হয়। এতে নতুন প্রজন্মের অনেক আগ্রহ থাকার পরেও চত্ত্বরে প্রবেশ করতে না পাড়ায় জাতির পিতাকে জানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু কর্নার নেই এমন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হলো- এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, জেলা মৎস্য অফিস, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, জেলা ক্রীড়া অফিস, সিভিল সার্জন অফিস, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, জেলা কাস্টমস ও ভ্যাট অফিস, জেলা শিশু একাডেমি, জেলা খাদ্য অফিস ও জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।
জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. নুরুল হক মিয়া বলেন, ‘আমাদের সকল প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কর্নার রয়েছে। যে সকল অফিস ছোট সেখানে ছোট পরিসরেই করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা ছিল সারা বাংলাদেশের সকল অফিসেই বঙ্গবন্ধু কর্নার করতে হবে।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন দাবি করে বলেন, ‘প্রতিটি স্কুলে বঙ্গবন্ধু কর্নার রয়েছে। তবে আমাদের অফিসে বঙ্গবন্ধু কর্নার নেই। এই রকম নিদের্শনা আমরা পাইনি।’
মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন ড. মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘আমাদের অফিসে বঙ্গবন্ধু কর্নার নেই। তবে বঙ্গবন্ধুর বই আছে। অফিসে জায়গা নেই। আমি যখন অন্য জেলাতে ছিলাম তখন সেখানে করেছি। এখানে কেন করা হলো না আমার জানা নেই।’ তিনি জানান, দুই একদিনের মধ্যেই কর্নার করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহিন রেজা বলেন, ‘আমাদের ভবনটি নতুন। এখনও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। আমরা ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু কর্নার করার জন্য টেন্ডার দিয়েছি। কিছু মালামালও এনে রাখা হয়েছে। শিগগিরই বঙ্গবন্ধু কর্নার করা হবে।’
দেশের কোনও শিশু একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু কর্নার নেই দাবি করে জেলা শিশু বিষয়ক কমকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের অফিসে বঙ্গবন্ধু কর্নার নেই। তবে সামনে চিন্তাভাবনা আছে সেটি করবো। আমাদের লোকবল কম তাই করা হয়নি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর বই আছে।’
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুজন হায়দার জনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে সাংস্কৃতিক কর্মীদের বহুল প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধুর একটি মুর্যাল করা হয়েছে। এ ছাড়া মুর্যাল চত্ত্বরে একটি উন্মুক্ত মঞ্চও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেই মুর্যাল চত্ত্বরটিতে বিভিন্ন দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফটক বন্ধ করে রাখা হয়। এতে নতুন প্রজন্মের অনেক আগ্রহ থাকার পরেও চত্ত্বরে প্রবেশ করতে না পাড়ায় জাতির পিতাকে জানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নির্ধারিত কিছু নির্দেশনা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল চত্ত্বরটি অন্তত বিকেলের দিকে খোলা রাখা যেতে পারে।’
মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শহিদ-ই-হাসান তুহিন বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জের শহরের কাচারি এলাকায় ডিসি পার্কের উল্টো দিকে বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল তৈরি করা হয়েছে। তবে সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়া কেউ ঢুকতে পারেনা না। আমরা চাই নাগরিকরা যেন সব সময় দেখতে পারেন। মুর্যালের পাশে ইদ্রাকপুর কেল্লা ও একটি দীঘি রয়েছে। এটি একটি দর্শনীয় জায়গা হতে পারে। মানুষ এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসতে পারবে। নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো যায়।’
এদিকে, মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনসে বঙ্গবন্ধু কর্নার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের প্রবেশপথে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর মুর্যাল বসিয়ে জায়গার অভাবে পুলিশ লাইনসে বর্ধিত পরিসরে বঙ্গবন্ধু কর্নার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান। তিনি বলেন, ‘পুলিশ লাইনসে বঙ্গবন্ধু কর্নারটি শিগগিরই আরও সমৃদ্ধ করা হবে।’
জেলার প্রধান অফিসগুলোতে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ না থাকার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আবুজাফর রিপন বলেন, ‘কোন কোন অফিসে বঙ্গবন্ধু কর্নার নেই লিখিতভাবে আমাদের জানালে ব্যবস্থা নেবো।’