পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কর্নার নির্মাণ না করেও তিন লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একজন মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে। তার নাম শামছুল আলম। তিনি স্থানীয় বিবি দাখিল মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ওই মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভাঙ্গুড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। ওই চিঠিতে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ওই সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

দরখাস্তে উল্লেখ করা হয়েছে, মাদ্রাসার আশপাশের এলাকার কেউ এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কর্নার বা বঙ্গবন্ধু কর্নার তৈরি করতে দেখেননি। অথচ মাদ্রাসার সুপার শামসুল আলম তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে বিএল বাড়ি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন ও তার পরিবারের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই সুপার মাদ্রাসার টাকা আত্মসাৎ করতে প্রথমে একটি দোকানঘরকে মুক্তিযোদ্ধা কর্নার হিসেবে দেখিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে সেই কর্নার ভাঙচুর করা হয়েছে মর্মে দোকান মালিক মুক্তিযোদ্ধা আফজাল ও তার ছেলে সবুজসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএল বাড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির হারুন অর রশীদ বলেন, ‘দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার প্রায় ১৮ ঘণ্টা থাকি যে মার্কেটে, সেই মার্কেটে তিন লাখ টাকা খরচ করে মুক্তিযোদ্ধা কর্নার হলে অবশ্যই আমরা জানতে পারতাম।’ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে মাদ্রাসা সুপারের এমন মিথ্যাচার করা ঠিক হয়নি বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিবি মাদ্রাসা সুপার ও ম্যানেজিং কমিটি নানান কৌশলে মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেনের ছেলে সবুজের দোকানঘরসহ জায়গাটি দখলে নিতে চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এর আগে জায়গা দখলে নিতে দোকানঘরে তালা দিয়েছিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ।

পরে সবুজ আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালত উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দোকান ও জায়গার দখল সবুজকে বুঝিয়ে দেন। এর পরই শামসুল আলম ওই দোকানঘরকে মুক্তিযোদ্ধা কর্নার দেখিয়ে সেটি ভাঙচুর করার অভিযোগ তুলে আদালতে মামলা করেন এবং কর্নারের নাম করে তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। বাস্তবে অস্তিত্বহীন হলেও মুক্তিযোদ্ধা কর্নার বলে মামলায় উল্লিখিত দোকানটি মাদ্রাসা চত্বরের বাইরে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন দোকান, যা পাকা সড়ক সংলগ্ন।

দোকানটি মূলত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফজাল হোসেন শাহ’র সন্তানের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ক্রয় সূত্রে তিনি ওই দোকানের মালিক হয়েছেন। সেখানে ছয় বছরের বেশি সময় ধরে তিনি কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা করে আসছেন।

মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী মাদ্রাসার ভেতরে বঙ্গবন্ধু কর্নার করার কথা। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা কেউই সেটির উদ্বোধন করা দেখিনি। এখন শুনছি, মুক্তিযোদ্ধা কর্নারের নামে মাদ্রাসা সুপার তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সেই আত্মসাৎ করা টাকা জায়েজ করতে একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ তার পরিবারের পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন তিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, দোকানটির মালিক সবুজ। সবুজকে উচ্ছেদ করতে এর আগে তার দোকানে তালা দিয়েছিলেন ওই সুপার। আদালতের রায়ে সবুজ ওই দোকান ফিরে পেয়েছেন। এখন সবুজের দোকানের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কর্নার করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এর কোনও সত্যতা নেই।’

মাদ্রাসাটির অপর পাশে বি.বি. হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সাবেক) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা বা বঙ্গবন্ধু কর্নার করতে হবে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে। কোনও মার্কেটে বা দোকানের ভেতর বঙ্গবন্ধু কর্নার করার সুযোগ নেই। কেউ যদি সেটা করে, তাহলে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হবে বলে আমি মনে করি।’

এ প্রসঙ্গে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ডাক্তার কমল উদ্দিন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা বা বঙ্গবন্ধু কর্নার নিয়ে মিথ্যাচার করা মাদ্রাসা সুপারের ঠিক হয়নি।’

মাদ্রাসাটির ম্যানেজিং কমিটির (চলতি) সদস্য মাসুদ প্রামাণিক বলেন, ‘আমাদের মাদ্রাসায় মুক্তিযোদ্ধা কর্নার বা বঙ্গবন্ধু কর্নার এখন পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। কোনও দোকানে বা কোনও মার্কেটে মুক্তিযোদ্ধা কর্নার করার কথাও আমি শুনিনি।’

মামলায় একটি দোকানে কেন মুক্তিযোদ্ধা কর্নার করার কথা বলছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে মাদ্রাসা সুপার শামছুল আলম কোনও উত্তর দেননি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, বাস্তবে মুক্তিযোদ্ধা কর্নার করা সম্ভব না হলেও ওই দোকান মাদ্রাসার। কিন্তু দখল করে নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আফজাল হোসেনের ছেলে সবুজ। সবুজের কাছ থেকে দোকানটি উদ্ধার করতে তিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পরামর্শে এই মামলা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে এই ঘটনায় ভাঙ্গুরা ও ফরিদপুর এই দুই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ স্থানীয় আওয়ামী নেতারা ওই মাদ্রাসার সুপারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ খান বলেন, ‘মাদ্রাসার সুপার তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে মিথ্যাচার করেছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’ মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন বলেন, ‘প্রথমত, মাদ্রাসার সুপার মুক্তিযোদ্ধা কর্নার না বানিয়ে তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দ্বিতীয়ত, যেটা তৈরি হয়নি, সেটা ভাঙচুরের জন্য একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আসামি করে মামলা দিয়েছেন। এটা সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করার শামিল।’

Source link

Related posts

খুলনার তিন হাসপাতালে ৫ জনের মৃত্যু

News Desk

রাজধানীর যেসব এলাকায় গ্যাস থাকবে না কাল

News Desk

মেহেরপুরে সড়কে নেমে থালা হাতে ভিক্ষা চাইলেন ব্যবসায়ীরা

News Desk

Leave a Comment