ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের পর প্রাপ্ত ফলাফলে তিন উপজেলার দুটিতে নিজেদের আসন ধরে রেখেছেন সদ্য সাবেক দুই চেয়ারম্যান। তবে রৌমারীতে জিততে পারেননি মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি দেওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী।
বুধবার (৮ মে) ভোট শেষে রাত সাড়ে ১১টায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ীদের বেসরকারি ফল ঘোষণা করেন জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলমগীর। ঘোষিত ফল অনুযায়ী চিলমারীতে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন সদ্য সাবেক হওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. রুকুনুজ্জামান শাহীন। চর রাজিবপুর উপজেলায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শফিউল আলম।
চিলমারীর পুনর্নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. রুকুনুজ্জামান শাহীন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিমের (লিচু প্রতীক) সঙ্গে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। জাপা নেতা শাহীন পেয়েছেন ২৮ হাজার ৬০৫ ভোট। আর আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৩৪ ভোট।
চর রাজিবপুরে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। তিন ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ছোট এই উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যেন ‘ভোট উৎসব’ ফিরে এসেছিল উপজেলাটিতে। পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতা মো. শফিউল আলম পেয়েছেন ১৭ হাজার ৭৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. আরিফুল কবির তালুকদার রানা প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়ে পেয়েছেন ১৭ হাজার ৩৮৬ ভোট।
তবে রৌমারী উপজেলায় পরিবর্তন এসেছে। এখানে ২৫ হাজার ৫০৪ ভোট পেয়ে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম শালু। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়া এই আওয়ামী লীগ নেতা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মজিবুর রহমান বঙ্গবাসীকে মাত্র ২৫১ ভোটে পরাজিত করে পরিষদের দায়িত্ব পেয়েছেন। এই উপজেলার আরেক প্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইমান আলী পেয়েছেন ১৫ হাজার ৮৫০ ভোট। দলের নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় উপজেলা বিএনপির সহসভাপতির পদও হারিয়েছেন এই প্রার্থী।
এ ছাড়া চিলমারীতে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মো. জাহিদ আনোয়র পলাশ। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন মর্জিনা বেগম জলি। রৌমারীতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে শামসুল দোহা এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাহবুবা আক্তার স্মৃতি বিজয়ী হয়েছেন। চর রাজিবপুর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে বাবু মিয়া এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রেণু বেগম নির্বাচিত হয়েছেন।
রিটার্নিং অফিসার মো. আলমগীর বলেন, ‘তিন উপজেলাতেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। চর রাজিবপুরে ৬০ ভাগ, চিলমারীতে প্রায় ৪০ দশমিক ৩৮ ভাগ এবং রৌমারীতে ৪৬ দশমিক ২০ ভাগ ভোটার উপস্থিতি ছিল। গড় ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৮৬ ভাগ। পরের দুই ধাপেও নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
প্রসঙ্গত, গত ২ মে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারী বাজার প্রাঙ্গণে আয়োজিত নির্বাচনি সভায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী তার নির্বাচনি সভায় স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধাকে বট গাছে বেঁধে প্রকাশ্যে বিচার করার হুমকি দেন। তার এ বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব আলী যাদুরচর ইউনিয়নের বকবান্দা নামাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম শালুর নির্বাচনি প্রতীক কাপ-পিরিচের পক্ষে কাজ করেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি