বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের কালুপাড়া এলাকার মাটির নিচ থেকে এক হাজার ৫৫৪টি গুলি উদ্ধার হয়েছে। এসব গুলি মুক্তিযুদ্ধকালীন পিস কমিটির রেখে যাওয়া বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসব গুলি জমা দেয় পুলিশ। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহির উদ্দিন গুলিগুলো কীভাবে মাটির নিচে গেলো তা জানতে চেয়েছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনায় যে মামলা হয়েছে, তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গুলিগুলো মালখানায় রাখার নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা এএসআই মারুফ আহমেদ।
এর আগে শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কালুপাড়া গ্রামের সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি খোঁড়ার সময় গুলিগুলো উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিগুলো জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। পরে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ বলছে, এগুলো শক্তিশালী থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও এলএমজিতে ব্যবহার করা করা হয়েছে। এসব গুলি পাঁচটি করে প্রসেস অবস্থায় পাওয়া গেছে। এগুলো ৫০ বছর আগে থেকে মাটির নিচে থাকায় মরিচা ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য গুলিগুলো বরিশাল জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হোক।
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম বলেন, এক হাজার ৫৫৪টি গুলি দেড় ফুট মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর গুলিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বোঝা গেছে, এগুলো মুক্তযুদ্ধকালীন সময়ের। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। রবিবার গুলিগুলো আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আদালতের বিচারক জানাবেন গুলিগুলো সংরক্ষণ করা হবে নাকি ধ্বংস করা হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ঘটনা তদন্ত করে এসব গুলি সেখানে কীভাবে গেলো, তা আদালতকে জানানো হবে।
তিনি আরও বলেন, যে স্থান থেকে গুলিগুলো উদ্ধার করা হয়েছে; মুক্তিযুদ্ধকালীন সেখানে রাজাকারদের ক্যাম্প ছিল বলে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়ার আগে গুলিগুলো মাটির নিচে পুঁতে রেখে যায় রাজাকাররা।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে এসব গুলি বরিশাল জাদুঘরে দেওয়ার বিষয়ে মাজহারুল ইসলাম বলেন, এটা আমরা সরাসরি করতে পারি না। এজন্য প্রত্মতাত্ত্বিক দফতরের কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারবো।
বরিশাল সবুজ আন্দোলনের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, প্রথমে দেখতে হবে গুলিগুলোর কার্যকারিতা আছে কিনা। যদি না থাকে তাহলে প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে এগুলোকে সংরক্ষণে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। সেই পরীক্ষায় যদি প্রমাণিত হয়, যুদ্ধকালীন সময়ে গুলিগুলো মাটির নিচে রাখা হয়েছিল। তাহলে আমাদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এগুলো সংরক্ষণ করা হোক।
বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড আগৈলঝাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, যে স্থান থেকে গুলিগুলো উদ্ধার করা হয়েছে; সেখানে রাজাকারদের ক্যাম্প ছিল। এই কারণে আমরা বলছি, গুলিগুলো যুদ্ধকালীন সময়ের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিগুলো মাটির নিচে রেখে যায় রাজাকাররা। যদি প্রত্মতাত্ত্বিক পরীক্ষায় তা সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে আমাদের দাবি থাকবে, গুলিগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হোক। যুদ্ধাকালীন প্রতিটি জিনিসের গুরুত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে গুলিগুলো ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনেক গুরুত্ব বহন করবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের সহকারী কাস্টডিয়ান মো. হাসানুজ্জামান বলেন, উদ্ধারকৃত গুলিগুলো প্রত্মতাত্ত্বিক নির্দশন হিসেবে জাদুঘরে সংরক্ষণ করতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশই যথেষ্ট। জেলা প্রশাসক আমাদের কাছে হস্তান্তর করবেন। আমরা তা নথিভুক্ত করে জাদুঘরে রাখবো।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, গুলিগুলোর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জড়িয়ে থাকার প্রমাণ মিললে অবশ্যই সংরক্ষণ করা হবে। বিষয়টি আমি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো।
২২ ফেব্রুয়ারি গৈলা ইউনিয়নের কালুপাড়া মৌজায় ৩০ শতক জায়গা কিনে সরকার। ওই জায়গায় ১৫টি পাকা বাড়ি নির্মাণে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করেন শ্রমিকরা। গত শুক্রবার সকালে বাড়ির কাজের জন্য লে-আউট দিতে মাটি খনন করতে গিয়ে দেড় ফুট নিচে শ্রমিকরা গুলি দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেন। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেম ও গৈলা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল হোসেন টিটু। তারা গুলিগুলো উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।