Image default
বাংলাদেশ

মধুমতির ভাঙনের মুখে বিদ্যালয় ভবন

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের পাশে আকস্মিকভাবে নদী তীরের প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক ধসে যায়। এ সময় বিদ্যালয়ের ভবনটি কেঁপে ওঠে। 

জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এক সপ্তাহ আগে থেকে সেখানে জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন রোধে প্রতিরক্ষামূলক কাজ করছিলো। এ কাজ চলমান অবস্থাতেই সেখানে জিও ব্যাগসহ নদীতীর ধসে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষা আসলেই এখানে কাজ শুরু হতে দেখা যায়। কিন্তু কাজ চলে ধীরগতিতে। অল্প সংখ্যক লোক দিয়ে কাজ চলতে থাকায় বিদ্যালয়টি ঝুঁকিতে পড়েছে। বর্ষার আগেও যদি কাজটি করা হতো তাহলে এই পরিস্থিতি হতো না। বর্ষা শুরু হলেই জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এরপর সেগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। 

গত তিন বছর ধরে মধুমতি নদীতে তীব্র ভাঙন চলছে। নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে আলফাডাঙ্গার চারটি ইউনিয়নের অসংখ্য গ্রামের বাড়িঘর, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। দীর্ঘদিন দরে এসব রক্ষার দাবি জানিয়ে আসছিলেন গ্রামবাসী। সম্প্রতি ভাঙনের মাত্রা তীব্র হওয়ায় পাউবো সেখানে গত ১০ জুন থেকে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ শুরু করে।

বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‌‘১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির নতুন ভবন তৈরি করা হয় ২০১২ সালে। ৬৫ জন শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। হঠাৎ গত ১৪ জুন নদীর তীর বেশি ভাঙয় ভবন কেঁপে ওঠে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাঙন বিদ্যালয়ের কিনারে চলে আসায়, মাটি ভাঙলেই ভবন কেপে উঠছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানতে চাচ্ছে, বিদ্যালয় নদীতে চলে গেলে তারা কোথায় পড়াশোনা করবে? এ প্রশ্নের কোনও জবাব আমরা দিতে পারছি না। শিশুদের দিকে তাকিয়ে হলেও বিদ্যালয়টি রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’

বিদ্যালয় ভবনের জমিদাতা গোলাম রসুল মিয়া বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় জমি দিয়েছিলাম। সরকার সেখানে ভবন করেছে। বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে গেলে আমি খুব কষ্ট পাবো। অনেক বছর ধরেই নদী ভাঙনে জর্জরিত। আমাদের জমিজমা সব নদীতে তলিয়ে গেছে। নদীর পশ্চিম পাশে চর জেগে উঠছে। সেখানে ঘাস ছাড়া কিছুই চাষাবাদ হয় না।’

এ বিষয়ে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজে নিযুক্ত পাউবোর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মেসার্স এআরবি ব্রিকসের মালিক আজগর হোসেন বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে কয়েকদিন ধরে উজান হতে কাজ চলছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে জিও ব্যাগও ধসে যাওয়ার পর সেখানে নতুন করে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে।’

কাজের তদারকিতে নিযুক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সন্তোষ কুমার কর্মকার জানান, বিদ্যালয় সংলগ্ন জায়গায় পানির গভীরতা বেশি হওয়ায় ধসে গেছে। এখন সেখানে বালি ভর্তি করে ছয় মিটার লম্বা জিও টিউব ও ১৭৫ কেজি ওজনের জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়টি রক্ষা পাবে। নদী তীরে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ডাম্পিং কাজ চলছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে মধুমতি নদীর ভাঙন রোধে জরুরি কিছু কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। তবে কাজের ধীরগতির অভিযোগটি সঠিক নয়। এখনও সেখানে ভাঙন তীব্র হয়নি।’

মধুখালী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মধুমতি নদীতে ভাঙনের মাত্রা বেশি উল্লেখ করে তিনি জানান, ভাঙন রোধে সাড়ে সাত কিলোমিটার নদী তীরজুড়ে প্রায় ৪৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রি-একনেকে পাস হয়েছে। এখন সেটা বিভিন্ন দফতর ঘুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়ের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে পাস হলে সেখানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ সম্ভব হবে।

Source link

Related posts

বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

News Desk

চমেক শিক্ষার্থীদের ১৯ জুন ভ্যাকসিন দেয়া শুরু

News Desk

নোয়াখালীর সেই ফারুককে অটোরিকশা উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment