Image default
বাংলাদেশ

ভারতের বিদ্যুৎ আসা শুরু হবে ১৬ ডিসেম্বর

সব ঠিকঠাক থাকলে আজ (১৬ নভেম্বর) থেকে আর ঠিক এক মাসের মধ্যে ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠীর নির্মীয়মাণ গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। গত সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠকেই আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি কথা দিয়ে রেখেছেন, আসন্ন বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) থেকেই গোড্ডার বিদ্যুৎ বাংলাদেশে যেতে শুরু করবে। আর সেই প্রতিশ্রুতি রূপায়ণে গোড্ডাতে এখন কার্যত দিন-রাত এক করেই কাজ চলছে।

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে শুরু থেকেই নানা বিতর্ক তাড়া করে এসেছে। কোভিডসহ নানা কারণে এই প্ল্যান্টের কমিশনিংয়ের ডেডলাইনও বহুবার পেছাতে হয়েছে।

কিন্তু সব বাধাবিতর্ক পিছনে ফেলে ‘আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল টেকনোলজি’তে নির্মিত এই প্ল্যান্টে আর মাত্র এক মাসের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ শুরু করতে পারবে বলে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর কর্মকর্তারা প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সা্প্রতিক ভারত সফরে তার সঙ্গে বৈঠক করেন গৌতম আদানি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সা্প্রতিক ভারত সফরে তার সঙ্গে বৈঠক করেন গৌতম আদানি
২০১৬ সালের আগস্ট মাসে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেটি অনুযায়ী গোড্ডায় উৎপাদিত ১৬০০ মেগাওয়াট (২× ৮০০) বিদ্যুতের পুরোটাই বাংলাদেশে রফতানি করা হবে। ভারত সরকারও ইতোমধ্যে তার জন্য বিশেষ অনুমতি অনেক আগেই দিয়ে রেখেছে। বস্তুত গোড্ডাই হলো ভারতের প্রথম ‘স্ট্যান্ড-অ্যালোন’ বিদ্যুৎকেন্দ্র, যাকে ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোনের’ সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বিদ্যুৎ না পাঠিয়ে এর পুরোটাই বিদেশে পাঠানো হচ্ছে।

বিশেষত গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ সংকট তৈরি হয়, তার মধ্যে গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ সুখবর হয়ে আসবে বলেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড লিমিটেডের (যেটি গোড্ডার জন্য আদানি শিল্পগোষ্ঠীর ‘স্পেশাল পারপাস ভেহিকল’ বা এসপিভি) করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান অমৃতাংশু প্রসাদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘আগামী মাসের ১৬ তারিখেই গোড্ডার প্রথম ইউনিট থেকে ৮০০ মেগাওয়াট আমরা বাংলাদেশে পাঠাতে পারবো। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও ৮০০ মেগাওয়াট পাঠাতে হয়তো আরও মাস তিনেক সময় লাগবে।’ ফলে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যেই গোড্ডার ১৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের পুরোটাই বাংলাদেশে পাঠানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের পিডিবি’র (পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড) তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসেও বাংলাদেশে দৈনিক মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট, যেখানে দেশের দৈনিক চাহিদা প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতির অঙ্কটা প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বা তার কাছাকাছি।

এখন গোড্ডার পুরো উৎপাদনটা আসতে শুরু করলে এই ঘাটতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পূরণ করা সম্ভব হবে। ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট ও লোডশেডিং মোকাবিলায় সেটা বেশ কাজে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিজয় দিবসের ‘ডেডলাইন’ মিট করার জন্য এখন গোড্ডাতে শেষ মুহূর্তের কাজকর্ম চলছে ঝড়ের গতিতে।

জ্বালানি কয়লা

গোড্ডার জন্য ভারতের কয়লা একেবারেই ব্যবহার করা হচ্ছে না। উন্নতমানের কয়লা আনা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। আর সে জন্য আদানি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিও সেরে ফেলেছে। এসব কয়লার চালান খালাস করা হবে ওড়িশার ধামরা বন্দরে। সেখান থেকে রেলপথে নিয়ে আসা হবে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায়।

জমিজট

গোড্ডা যেহেতু একটি আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা, তাই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল বিস্তর। নিজেদের চাষের জমি আদানির কাছে বেচতে অনেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন, আন্দোলনও হয়েছিল। কিন্তু ওই শিল্পগোষ্ঠী মোটা ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিক্ষুব্ধদের প্রায় সবাইকে জমি দিতে রাজি করিয়ে ফেলছে। শুধু দুই জন প্রতিবাদী– গোড্ডার মোতিয়া গ্রামে প্রবীণ গান্ধীবাদী চিন্তামণি সাহু আর সীতা মুর্মু নামে দুজন আদিবাসী নারী, তারা এখনও জমি দিতে নারাজ এবং আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু আদানি তাদের জমি এখন প্ল্যান্টের বাইরে রেখেই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছে।

গোড্ডার জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আসবে ওড়িশাতে আদানির এই ধামরা পোর্টে
গোড্ডার জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আসবে ওড়িশাতে আদানির এই ধামরা পোর্টে

Related posts

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অষ্টমী স্নানে ভক্তদের ঢল

News Desk

করোনায় আক্রান্ত খাদ্য সচিব নাজমানারা খানুম

News Desk

করোনায় ৮৪ শতাংশ মারা গেছেন ৪১-৮০ বছর বয়সী মানুষ

News Desk

Leave a Comment