ধান-নদী-খাল এই তিন নিয়ে বরিশাল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত বরিশাল বিভাগ।বরগুনা বরিশালেরই একটি জেলা শহর। ভৌগোলিক দিক থেকে দেখলে বরিশালের অধিকাংশ জেলা-উপজেলার বড় বড় বাজার নদীর কোল ঘেষেই তৈরি হয়েছিল যুগ যুগ আগে।বরগুনার ৬ টি উপজেলার সবগুলোই নদীর কোল ঘেষে অবস্থিত। তেমনি একটা বড় উপজেলা বেতাগী।মুলত বিষখালী নদীর পারেই বেতাগী উপজেলা। একসময়কার ধানের বড় বাজার ছিল বেতাগী বন্দরে। ছিল গুরের হাট, সুপারির হাট,,কুমার পট্টি ইত্যাদি। রপ্তানিযোগ্য অনেক কিছুই কেনা-বেচা হতো এই বন্দরে। বছরে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ধান, ডাল,সুপারি ও গাছ সহ অনেক কিছুই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি হতো। বেতাগী উপজেলাটি বিষখালী নদীর তীরে অবস্থিত। এর আয়তন ১৬৭.৭৫ বর্গ কি.মি.। এর উত্তরে রাজাপুর, কাঁঠালিয়া ও বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে বরগুনা সদর উপজেলা, পূর্বে মির্জাগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিমে কাঁঠালিয়া ও বামনা উপজেলা। এই উপজেলার প্রধান নদীগুলো হচ্ছেঃ বিষখালী ও গজালিয়া নদী। এছাড়াও এখানকার উল্লেখযোগ্য জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে কাটাখালি খাল ও করুণা খাল।উপজেলায় প্রায় দুই লাখের অধিক জনসংখ্যার বসবাস।

বিষখালী নদীটি প্রবল শ্রোতদারার একটি বড় নদী। যে নদীর গর্ভে বিগত দুই দশকে বিলিন হয়ে গেছে পাশ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর ও চাষের জমি।এমনকি সেই ঐতিহ্যবাহী ধানের হাট, গুরের হাট ও কুমার পট্টি আজ পুরোপুরি নদী গর্ভে বিলীন।একসময়কার প্রসিদ্ধ গাছের বাজার ছিল বেতাগী গাছ বাজার।এখান থেকে গাছের চালান চলে যেত সরুপকাঠির ইন্দ্রের হাট গাছ বাজারে। অথচ নদী ভাঙনের শিকার হয়ে উল্লেখিত গাছ বাজারের একাংশে কিছু মিল মালিকরা নদীর তীরে গাছের গুড়ি গেড়ে শ্রোতের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করেই বেচে আছে। প্রতি বছর ভরা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় পুরো গাছ বাজার সহ আশেপাশের এলাকা। প্রতি বছরই লোকসান গুনতে হয় গাছ ব্যবসায়ী,বালু ও পাথর ব্যবসায়ী সহ নদী পার ঘেঁষে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের। নদী ভাঙনের কবলে কয়েকশ একর চাষের জমি, বসত ভিটা হারিয়ে অন্যত্র গিয়ে জিবিকা নির্বাহ করছে কয়েকশ পরিবার। পৈত্রিক সম্পদের মায়া ত্যাগ করতে না পেরে পানির কর (খাজনা) দিয়ে ছোট খাটো ব্যবসা করে দিন যাচ্ছে অনেক পরিবারের।

বিগত তিন বছরের মধ্যে দুই জন সরকার প্রতিনিধি (সাবেক স্থানীয় সরকার বিভাগের মাননীয় সচিব আঃ মালেক খান ও স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম) এসে স্ব-চোখে দেখে গেলেও উন্নয়নের কোন বিন্দু পরিমাণ অগ্রগতি হয়নি। ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেতাগীর উন্নয়ন বলতে বড় বড় ভবন (মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, অডিটোরিয়াম,সার্কিট হাউজ,উপজেলা ভবন সহ বিভিন্ন সরকারি ভবন নির্মান হয়েছে। রাস্তাঘাটেরও উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো।কিন্তু বেতাগীর মুল বাজারই আজ হুমকির মূখে।এমনকি বেড়িবাধের ভিত্তিপ্রস্তর যেটা সচিব আঃ মালেক খান নিজে উদ্বোধন করেছিলেন, সেটাই আজ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বড় বড় বাজেট পাশ হচ্ছে। বিগত দিনে নদী ভাঙন রোধে বড় বড় প্রকল্প অনুমোদন হলেও অজানা কোন কারনে আজও বাস্তব রুপ নিতে পারছে না। তাই ভুক্তভোগী সহ গণমানুষের দাবী বিষখালী নদীর পাশ্ববর্তী বেতাগী উপজেলার ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক।

Related posts

বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান লাইফ সাপোর্টে

News Desk

গাঁজা বেচাকেনায় বৌ-স্বামী গ্রেফতার, শাশুড়ী ছুটেন হাইকোর্টে

News Desk

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড, আধাঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে

News Desk

Leave a Comment