ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক অ্যাম্বুলেন্সের মালিককে মারধরের জেরে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। আজ শনিবার বিকেল পাঁচটায় বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির মালিকদের অধীনে থাকা চালকদের অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণায় এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।
অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহনে চাঁদা না দেওয়ায় জহিরুল ইসলাম ওরফে জুম্মান নামের একজনের নির্দেশে তাঁর অনুসারীরা আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটকসংলগ্ন এলাকায় এক চালককে গালিগালাজ এবং অ্যাম্বুলেন্স মালিক হাসেম মিয়াকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পরই অ্যাম্বুলেন্সচালকেরা রোগী বহন থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
হাসেম মিয়া আখাউড়া উপজেলার মসজিদপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স কল্যাণ মালিক সমিতির সহসাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি শহরের মুন্সেফপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন। অভিযুক্ত জহিরুল ইসলাম জেলা শহরের কাজীপাড়ার বাসিন্দা ও জেলা সৈনিক লীগ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি।
বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে গুরুতর অসুস্থ এক রোগীকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য ইসমাইল মিয়া নামের এক চালক হাসেমের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রোগীর জন্য অপেক্ষা করেন ইসমাইল। সে সময় জহিরুল ইসলাম ওরফে জুম্মান সেখানে পৌঁছে চালক ইসমাইলকে গালিগালাজ করেন। বিষয়টি মালিক হাসেমকে জানান ইসমাইল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের প্রধান ফটকসংলগ্ন পুলিশ বক্স ও বটগাছের নিচে যান হাসেম। সে সময় জহিরুলের নির্দেশে তাঁর লোকজন অতর্কিত হামলা চালিয়ে হাসেমকে বেধড়ক মারধর করেন। এতে হাসেম বাঁ চোখের নিচে, মাথার পেছনে ও পিঠে আঘাত পান। সেখান থেকে কোনোরকমে রক্ষা পান তিনি। দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন তিনি। পরে অ্যাম্বুলেন্সচালক ও মালিকদের নিয়ে বিষয়টি সদর থানা-পুলিশকে জানান।
আহত হাসেম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জহিরুল ওরফে জুম্মান প্রতি অ্যাম্বুলেন্স থেকে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে থাকেন। ঢাকার কোনো অ্যাম্বুলেন্স ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলে নেন প্রায় তিন হাজার টাকা। টাকা দিলে হাসপাতালের ভেতরে অ্যাম্বুলেন্স ঢোকানো যায়। না দিলে তাঁর অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তিনি বলেন, চাঁদা না দিলে জহিরুল চালকদের বকাবকি করেন। তাই বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সচালকেরা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। তিন এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত না। পুলিশকে হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের আরেকটি কমিটি রয়েছে। কর্মবিরতি ডাকা মালিকেরা বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স কল্যাণ মালিক সমিতি নামে নতুন পাল্টা একটি কমিটি করেছে। এই নিয়ে বিরোধ থেকেই কর্মবিরতি ডেকেছেন তাঁরা। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ জহিরুল আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পরও আমি দুটি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী ঢাকায় পাঠিয়েছি। জেলায় সরকারি-বেসরকারিসহ ১০টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। রোগী পরিবহনে কোনো সংকট হওয়ার কথা না।’
বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা রামচন্দ্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক জহির মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলায় বেসরকারি ৫৩টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত চাঁদাবাজের বিচার না হবে ও সদর হাসপাতাল চাঁদাবাজমুক্ত না হবে, আমরা অ্যাম্বুলেন্স চালাব না। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কোনো রোগী অ্যাম্বুলেন্সে বহন করব না। এ ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত চলবে কর্মবিরতি। বিকেল থেকে এখন পর্যন্ত তিনটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছেন রোগীর স্বজনেরা। কিন্তু আমরা যাইনি।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, ‘জহিরুল ইসলাম ওরফে জুম্মানের ইন্ধনে এমন হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আহত ব্যক্তিকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে ঘটনাটি তদন্তের জন্য উপপরিদর্শক (এসআই) প্রতাপকে নির্দেশ দিয়েছি। কর্মবিরতির বিষয়টি জানা নেই।’